এ অপমান আর সইতে পারছি না

রুমানা নাওয়ার | রবিবার , ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষক তিনি শ্রেষ্ঠ সবার। চির উন্নত শির। চির উন্নত মর্যাদা। কালে কালে যুগে যুগে আমরা দেখে আসছি শিক্ষকের মর্যাদা অতুল্য। কোনো কিছুর সাথে তার মূল্যায়ন চলে না। সমাজে শিক্ষকের কদর বর্ণনাতীত। বিপদে আপদে দুর্যোগ বিপাকে একজন শিক্ষক ঢাল স্বরূপ। একজন মাস্টার মশায়ের কাছে সমাজের সবাই সমাধান খুঁজতে আসে। পরম বন্ধু ভাবে তাঁকে সবাই। আর ইদানীং সেই শিক্ষকের গলায় জুতোর মালা পরাচ্ছে কিছু কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রছাত্রী। পুরো জাতি ব্যথায় মুহ্যমান। সারা বিশ্ব অবাক হয়ে দেখছে এ লজ্জার ভিডিও চিত্র। সামাজিক মাধ্যমগুলো সয়লাব এ রকম চিত্রে। আমরা রোজকার দেখছি এসব চিত্র। চোখ বুঁজে আসছে বিবেকের যন্ত্রণায়। বুকের ভিতর দহন। এ কোন্‌ সভ্যতায় আমরা। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে উঠে আসছে এসব অপমান অসঙ্গতির চিত্র। একটা দুটো না এরকম হাজারো চিত্র। আহা কী লজ্জা। আর শিক্ষকের সবচেয়ে ভালোবাসার জায়গা তাঁর শিষ্যরা, তাঁর ছাত্রছাত্রীরা। যাদের ঘিরে শিক্ষকের শ্বাস প্রশ্বাস। যাদের দিনের পর দিন তিনি লালন করেন যত্ন করেন। শিক্ষকের সমস্ত ভালো ঢেলে দেন তাদের মাঝে। কোনো কিছুর বিনিময় না খোঁজে। আলোর পথ দেখান প্রতিটি প্রাণে। মুক্তির দিশায় উজ্জীবিত করেন। দেশপ্রেম মানবতাবোধ ধর্মীয় শিষ্টাচার সহ যাবতীয় নীতিগত আচারের বীজ রোপন করেন শিক্ষকরাই। সমস্ত ভালো সমস্ত আলোর ধ্বজাধারী শিক্ষক। তাঁদের কথায় তাঁদের ব্যথায় সমস্ত দেশ শোকাহত।

আদর সোহাগ শাসনের বেড়াজালে বাঁধেন। উদ্দেশ্য একটাও ছাত্রছাত্রীরা মানুষের মতো, মানুষ হোক সমাজে রাষ্ট্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। বিনিময়ে পাওনা থাকুক সম্মানটুকু। কিন্তু সেটাই হারাতে বসেছে। সম্মান তো নাইই বরং চরম অপমানের ডালা নিয়ে দীর্ঘদিনের হাতেগড়া প্রতিষ্ঠান থেকে অপসারিত হচ্ছেন। তাঁরই সন্তানতুল্য প্রিয় ছাত্রছাত্রী থেকে। টেনে হিঁচড়ে নামানো হচ্ছে সুউচ্চ আসনটা থেকে। জুতার মালা পরানো হচ্ছে শিক্ষকের গলায়। কী কুৎসিত দৃশ্য। এদের বিবেক বুদ্ধি কোথায় গিয়ে ঠেকলো। এদের ঠেকাবে কে? কেন এরা উন্মত্ত এ ধ্বংসযজ্ঞে মেতেছে। এরা কি মানুষ হতে পারবে। কক্ষনো না। হলফ করে বলতে পারি যে কিশোরী মেয়েটি টেনে তুলেছে চেয়ার থেকে তার মমতাময়ী শিক্ষককে। তার পড়াশোনা শিক্ষালাভ ঐ পর্যন্ত। জীবনের কোনো শিক্ষাই আর কাজে আসবে না তার। অমানুষ অপ্রকৃতস্থ মানুষ হিসাবে বড়ো হবে বেঁচে থাকবে ওরা এ সমাজে, এ রাষ্ট্রে। শিক্ষকের মাথায় দশটা চড় মেরেছে বলে যে ছেলেটা বাহাদুরি করেছে ক্যামেরার সামনে। সে কি আদৌ স্বাভাবিক জীবন পাবে অদূর ভবিষ্যতে? এ বিপথগামী ছেলেমেয়েদের থামাতে পারবে নিজ নিজ পরিবার তাদের বাবা মা। এ সন্তানরা বোঝা হিসাবে জঞ্জাল হবে সবার কাছে। শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় অদূরভবিষ্যতে আামাদের সামনের প্রজন্মরা আর উৎসাহী হবে না।এতএত লাঞ্ছনা অপমান যৎসামান্য বেতনে কে বা আর এগুবে। একজন উপার্জনক্ষম বাবার শেষ আশ্রয় তার নিত্যদিনের চাকরিটা। সেটাও হারায়ে পথে বসার দশা প্রিয় শিক্ষকদের। পরিবারকে অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসার নিশ্চয়তা দিতে, না পারার যন্ত্রণা প্লাস নিজের আত্নগ্লানিতে আত্নহননের পথ বেছে নেওয়া ছাড়া আর উপায় নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআত্মহত্যা জীবনের কোনো সার্থক সমাধান নয়
পরবর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে