লাখ টাকা ঋণের প্রলোভন দেখিয়ে সারা দেশ থেকে মানুষ এনে ঢাকার শাহবাগে জমায়েতের চেষ্টা চালিয়েছে ‘অহিংস গণ অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন। গত রোববার মধ্যরাত থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষভর্তি করে শতাধিক বাস, পিকআপ ও মাইক্রোবাস শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আসতে থাকে বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর। এ ঘটনায় মাহবুবুল আলম চৌধুরী নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যিনি ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন অন্যতম সংগঠক বলছে ঢাকা মহানগর পুলিশ–ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। গতকাল সোমবার রাত সোয়া আটটায় ঢাকার শান্তিনগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে এক বার্তায় জানিয়েছেন ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। মাহবুবুল আলম চৌধুরী অহিংস গণঅভ্যুত্থানের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব। তাকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। খবর বিডিনিউজের।
বিভিন্ন এলাকা থেকে যারা আসনে তারা বেশিরভাগই স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদেরকে বলা হয় শাহবাগে সমাবেশ হবে, সেখানে যারা উপস্থিত থাকবে তাদেরকে ‘এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা’ ঋণ দেওয়া হবে। ২৫ নভেম্বর ‘রাজধানীর শাহবাগে মহাসমাবেশ’ লেখা ব্যানারও দেখা গেছে কয়েকটি গাড়িতে। মোস্তফা আমীন নামের এক ব্যক্তির নামে লিফলেট পাওয়া গেছে সেখানে আসা অনেকের কাছে। লিফলেটে মোস্তফা আমীনকে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’র আহ্বায়ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে শাহবাগ এলাকায় আসা গাড়িভর্তি লোকজনকে জমায়েত হতে দেওয়া হয়নি, কথা বলে প্রত্যেকটি গাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছেন পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
নারায়ণগঞ্জ থেকে বাসে আসা এক নারী বলেন, তাকে বলা হয় শাহবাগ গেলে এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে। মাসে ৩–৪ হাজার টাকা করে শোধ করতে হবে। এজন্যই তিনি এসেছেন, এরচেয়ে বেশি কিছুই তিনি জানেন না। ওসি খালিদ মনসুর বলেন, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত শত শত বাস ও মাইক্রোবাস ভর্তি মানুষ শাহবাগ এলাকায় আসে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সেসব মানুষদেরকে মোটা অঙ্কের ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় আনা হয়।
সেসব বাসে আসা অনেককেই আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এদের নিয়ে আসার পেছনে কারা কাজ করেছে তাদের বিষয়ে জানার চেষ্টা চলছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। এ ঘটনায় মোস্তফা আমীনসহ কয়েকজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জানিয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুয়েল রানা বলেন, আমরা বেশ কয়েকজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও অনেককে আমাদের কাছে সোপর্দ করছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি যাচাই–বাছাই করে পরবর্তি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রাথমিকভাবে এই সংগঠনে সংশ্লিষ্টতা ছাড়া মোস্তাফা আমীনের অন্য কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি। ‘অহিংস গণ অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে সংগঠনটি মানুষদের প্রলোভন দেখিয়ে এর আগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সভা–সমাবেশ করেছে জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা জুয়েল রানা বলেন, আজ তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে একটি আবেদন করেছিল। আমরা যাচাই–বাছাই করে তাদেরকে অনুমতি দেইনি। কিন্তু তারা যে আবেদনটি করেছিল, সেখানে পুলিশের স্বাক্ষর দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে বলেছে তারা সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে। সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করতে না দিলে শাহবাগে সমাবেশ করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। তিনি আরও বলেন, গ্রাম–গঞ্জে সংগঠনটির ব্যানারে মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলে বিভিন্ন যানবাহন ভাড়া করে ঢাকায় নিয়ে আসে। গাড়িতে আসা লোকজনদেরকে আমরা সকলের সহযোগিতায় বুঝিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছি।