উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট

শামীম হোসাইন, চবি | বৃহস্পতিবার , ১৬ অক্টোবর, ২০২৫ at ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এক ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় দিন ছিল গতকাল। দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছরের অপেক্ষার পর অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচন। তিন যুগের নিস্তব্ধতা ভেঙে নতুন উদ্দীপনা, আনন্দ ও প্রত্যাশার আলোয় মুখর হয়ে উঠেছিল পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সকাল ৮টা থেকেই শিক্ষার্থীরা ভোটকেন্দ্রে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে উপস্থিত হন। ভোটগ্রহণ শুরু হয় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে। বিকেল ৪টার পর আর কাউকে নতুন করে কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তবে কেন্দ্রের ভেতরে যারা লাইনে ছিলেন তারা চারটার পরও ভোট দিতে পেরেছেন।

এদিকে নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশাপাশি র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ক্যাম্পাসজুড়ে টহলে ছিল। ভোটকেন্দ্রগুলোতে মোতায়েন ছিল পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী, যাতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সৃষ্টি না হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে প্রতিটি হল ও একাডেমিক ভবনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিল। সব মিলিয়ে বড় কোনো গোলযোগ ছাড়াই উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেল সংসদের ভোটগ্রহণ। সকালে ভোট দিতে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সামিয়া নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু একটুও বিরক্ত লাগছে না। ভোট দিতে আসার পর থেকে খুব আনন্দ অনুভব হচ্ছে। যেন আমি ঈদের আনন্দে ফিরে গেছি। নতুন কলা অনুষদ কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা তন্বী নামে এক ভোটার জানান, আমি প্রার্থীতা ঘোষণার পর যোগ্য ও পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার তালিকা করেছি। পছন্দের প্রার্থী এবং যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেব এমনটা ভাবলে খুব আনন্দ লাগে। আশা করি যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হবে।

চাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, আমরা চাকসু নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছি। শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাসের সাথে ভোট দিয়েছে। আশা করি শিক্ষার্থীরা তাদের ভোটের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীকে বাছাই করেছে।

১৪টি এলইডি স্ক্রিনে সরাসরি সম্প্রচার : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম সম্পূর্ণ হয়েছে ডিজিটাল নজরদারিতে। পুরো ভোট প্রক্রিয়া সরাসরি দেখানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে স্থাপিত ১৪টি এলইডি স্ক্রিনে। যাতে করে প্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের মনে স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ না থাকে। গতকাল বুধবার সকাল ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলছে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত চাকসু নির্বাচনের উৎসবমুখর পরিবেশে এই ডিজিটাল উদ্যোগ যোগ করেছে নতুন মাত্রা। এক কেন্দ্রের ভোটাররা অন্য কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পারলেও স্ক্রিনে বসেই ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করছেন। কেউ আবার নিজের ভোট শেষ করে এসে মনিটরে বন্ধুদের ভোট দিতে দেখছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিজ্ঞান অনুষদ কেন্দ্রের বাইরে স্থাপিত দুটি বড় স্ক্রিনে সরাসরি ভোটগ্রহণ কার্যক্রম উপভোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। সূর্য সেন হলের শিক্ষার্থী নওশিন আরা জানান, সকালেই আমি ভোট দিয়েছি, এখন বন্ধুদের ভোট দিতে দেখতে এসেছি। ডিজিটাল স্ক্রিনগুলো নির্বাচনি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়িয়েছে। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে এবার প্রথমবারের মতো ভোটকেন্দ্র ও আশপাশের পুরো এলাকা সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। বড় স্ক্রিনের মাধ্যমে এসব সরাসরি প্রদর্শন করা হচ্ছে, যা সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিয়েছে।

এদিকে গতকাল সকালে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে এসে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্‌ইয়া আখতার বলেছেন, খুবই সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে। শিক্ষার্থীরা সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে খুশি মনে ভোট দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আবেগঘন উচ্ছ্বাস দেখে এতদিন যে কষ্ট আমরা করেছি, সেই কষ্টের ঘাম শুকিয়ে গেছে। আজকে চবি শিক্ষার্থীদের উৎসবের দিন, আনন্দের দিন।

দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন : চাকসু নির্বাচনের ভোট গণনার মধ্যে ক্যাম্পাসে দুই প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিজিবি সদর দপ্তরের এক বার্তায় বলা হয়, চাকসু নির্বাচন শেষে ভোট গণনা চলছে, নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

এর আগে নতুন কলা ভবন চত্বরের সামনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নিলে উত্তেজনা দেখা দেয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, ওই কেন্দ্রের বাইরে থাকা এলইডি স্ক্রিন বন্ধ হয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার শুরু হয়। ছাত্রদলের অভিযোগ, ভোটে কারচুপি করতে স্ক্রিন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর পাল্টায় ছাত্রশিবিরের অভিযোগ, নির্বাচনকে বানচাল করতে ছাত্রদল এলইডি স্ক্রিনের তার ছিঁড়ে দিয়ে এই ধরনের ঘটনার সৃষ্টি করছে।

ক্যাম্পাস এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য বিজিবি সদস্য মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে বাহিনীটির বার্তায়।

কলা ভবন ঘিরে ছাত্রদলশিবির উত্তেজনা : ভোট গণনার সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নতুন কলা ভবন চত্বরের সামনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের মুখোমুখি অবস্থান ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ওই কেন্দ্রের বাইরে থাকা এলইডি স্ক্রিন বন্ধ হয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার শুরু হয়। ছাত্রদলের অভিযোগ, ভোটে কারচুপি করতে স্ক্রিন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর পাল্টায় ছাত্রশিবিরের অভিযোগ, নির্বাচনকে বানচাল করতে ছাত্রদল এলইডি স্ক্রিনের তার ছিঁড়ে দিয়ে এই ধরনের ঘটনার সৃষ্টি করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমোট ভোট কাস্ট ৬০ শতাংশ : নির্বাচন কমিশন
পরবর্তী নিবন্ধজুলাই সনদ নিয়ে রাজনীতিকরা অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন