মীরসরাই উপজেলার ফুলকপি চাষিরা এবারও দেখছে না লাভের মুখ। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে এখন জোড়া মাত্র ১০ টাকায়। অথচ উৎপাদনে প্রতি ফুলকপিতে খরচ পড়েছে প্রায় ২০ টাকা। বাজারের এই দামে এখন পুঁজি নিয়ে ঘরে যেতেও পারবে না কৃষকরা। তাই অনেক কৃষক চোখে–মুখে অন্ধকারই দেখছেন।
সরেজমিনে উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামে ফসলের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, খেত থেকে ফুলকপি তুলে বাজারে নিয়ে যাচ্ছে কৃষকরা। কৃষক মোজাম্মেল হক ভূঞা ফুলকপি তুলে বেপারীর কাছে বিক্রি করতে খেত থেকে সদর সড়কের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ফলন ও বেচা–বিক্রির সার্বিক অবস্থা জানতে চাইলে তিনি জানান, ৮ গন্ডা জমিতে তিনি ফুলকপি চাষ করেছেন। খরচ পড়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত বিক্রি করেছেন মাত্র ১০–১৫ হাজার টাকা। খেতে বাকি যা ফুলকপি আছে তাতে পুঁজিও উঠবে না বলে জানান তিনি। বলেন, নিজেদের পরিশ্রমও যেন অর্থহীন।
তিনি জানান, এবার ফুলকপির চারা প্রথমবার রোপণের পর বন্যায় প্রথম ফলন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবং অনেকেরই রোপই করতে দেরি হওয়ায় ভালো দাম খুব অল্প কৃষকই পেয়েছেন। প্রতিটি ফুলকপিতে খরচ পড়েছে প্রায় ২০ থেকে ২৫ টাকা। শুরুর দিকে ২০ টাকা করে অল্প কিছু বিক্রি করতে পারলেও গত সপ্তাহে ১০ টাকা, এখন মাত্র ৫ টাকা করে বিক্রি করতে হচ্ছে পাইকারদের কাছে। আবার চালানের কপিগুলোও এই দামে বিক্রি হচ্ছে বলে আমরাও একই দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।
খৈয়াছরা গ্রামের অপর কৃষক হাফিজ উদ্দিন বলেন, বিশেষ করে চালানের ফুলকপি কমদামে বাজারে চলে আসায় দাম এভাবে কমে গেছে। উপজেলা কৃষি সুপারভাইজার কাজী নুরুল আলম বলেন, এবার উপজেলার ৪০০ কৃষক ৬০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি রোপন করেছেন। বর্ষার শেষের দিকের বন্যায় কৃষকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তাই আগাম ফলন তুলতে না পারায় এভাবে ক্ষতির সম্মুখিন সকলে। তবে তিনি আশা করেন, মৌসুমের শেষের দিকে বাজারে ফুলকপির সরবরাহ কমে আসবে তখন আবার দাম বৃদ্ধি হবে। যেসব কৃষকদের ফুলকপি মাত্র ফুল আসতে শুরু করেছে ওরা একটু অপেক্ষা করলে পুঁজি উঠে লাভবান হবার সুযোগ আছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ফুলকপিতে মৌসুমের শুরুতে আর শেষের দিকেই কৃষকরা একটু বেশি লাভবান হয়ে থাকে। তখনই পুঁজি ও লাভ তোলা সহজ। কিন্তু প্রাকৃতিক বিরূপতার কারণে এবার সম্ভব হয়নি।