শেখ হাসিনার পতনের পর সরকারশূন্য চারদিনে সারা দেশে নৈরাজ্যের মধ্যে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে তাতে উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে ১৬ জনকে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠিত শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ১৩ জন, তিন জন উপস্থিত ছিলেন না। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তারা ঢাকার বাইরে আছেন।
উপদেষ্টাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিম্নে তুলে ধরা হল–
সালেহউদ্দিন আহমেদ : সালেহউদ্দিন আহমেদ শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করে পরে হন সরকারি আমলা। দেশ বিদেশে অর্থনীতির পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বিএনপি–জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালের ১ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হন তিনি, দায়িত্ব পালন করেন ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। গভর্নর হওয়ার আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন সালেহউদ্দিন।
তিনি মহাপরিচালক (ডিরেক্টর জেনারেল–ডিজি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ একাডেমি অব রুরাল ডেভেলপমেন্ট (বার্ড) এর। দীর্ঘদিন ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অফিসের এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর মহাপরিচালক পদেও। গত কয়েক বছর ধরে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন তিনি।
ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৬৩ সালে এসএসসি এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে বিএ অনার্স ও পরের বছরের মাস্টার্স পরীক্ষা পাস করে সেই বিভাগেই অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ১৯৭০ সালে। কিছু সময় শিক্ষকতা করে পরে সালেহউদ্দিন সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি) ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন।
১৯৭৮ সালে কানাডার হ্যামিল্টন শহরের ‘ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটি’ থেকে অর্থনীতির উপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। সালেহউদ্দিনের জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শ্রীরামপুর (দরিশ্রীরামপুর) গ্রামে।
আসিফ নজরুল : লেখক, রাজনীতি–বিশ্লেষক ও কলামিস্ট অধ্যাপক আসিফ নজরুল পড়াশুনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে তিনি তার পিএইচডি সম্পন্ন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের আগে ১৯৯১ সালে সাপ্তাহিক পত্রিকা বিচিত্রায় কাজ করেছেন তিনি। কিছুদিন তিনি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবেও কাজ করেছেন।
১৯৬৬ সালের ১২ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া আসিফ নজরুল আইন, সংবিধান ও মানবাধিকার বিষয়ে কয়েকটি বই লিখেছেন। কিছু নন–ফিকশনও লিখেছেন তিনি। ২০১১ সাল থেকে ছয় বছর মানবাধিকার সংগঠন ‘সাউথ এশিয়ান ফর হিউম্যান রাইটস’–এর ব্যুরো সদস্য ছিলেন আসিফ নজরুল। ১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির হয়ে গণতদন্ত কমিশনের সঙ্গে কাজ করেছিলেন তিনি। তবে পরে সেই কমিটির সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়।
এএফ হাসান আরিফ : বিএনপি–জামায়াত জোট সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। তিনি ১৯৪১ সালে কলকাতায় জন্ম নেন। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং এলএলবি ডিগ্রি পাস করেন।
১৯৬৭ সালে কলকাতা হাই কোর্টে আইনজীবী হিসেবে নথিভুক্ত হওয়ার পর তিনি সে সময়ের পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। ১৯৭০ সালে ঢাকা হাই কোর্টে আইনজীবী হিসেবে নথিভুক্ত হন। তিনি ‘এএফ হাসান আরিফ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’ চেম্বারের প্রধান।
সেনা শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আসলে ১৯৮২ সালের এপ্রিল থেকে ১৯৮৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল; ১৯৮৫ সালের আগস্ট থেকে ১৯৯৬ সালের মার্চ পর্যন্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং বিএনপি জামায়াত–জোট সরকারের আমলে ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন।
হাসান আরিফ ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের একজন প্যানেল সদস্য।
মো. তৌহিদ হোসেন : সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেনের জন্য ১৯৫৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষ করার পর ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন তিনি।
১৯৯৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০০ সালে ফেব্রুয়ারি এবং ২০০৯ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত দুই মেয়াদে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এই কূটনীতিক।
বিএনপি–জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার ছিলেন। ২০০৬ সালে ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ৮ জুলাই পর্যন্ত তিনি পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালের জুনে তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার হাইকমিশনার করা হয়।
আদিলুর রহমান খান : বিএনপি–জামায়াত জোট সরকারের আমলের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদিলুর রহমান খান ১৯৬১ সালের ২ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এর প্রতিষ্ঠাতা। আদিলুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করে ‘ভ্রিজ ইউনিভার্সিটি ব্রাসেলস’ থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইন পেশায় থাকার সময় ১৯৯৪ সালে তিনি মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি–জামায়াত জোট সরকারের তাকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেয়। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি পদত্যাগ করেন।
২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের শাপলা চত্বরে বিক্ষোভের সময় নেতা–কর্মীরা অপসারণের অভিযানে নিহতের সংখ্যা সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশ তাকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে আটক কর। এই মামলায় আদিলুর ও তার সংগঠনের কর্মকর্তা নাসিরুদ্দিন এলানের দুই বছরের সাজা হয়।
২০১৪ সালে তিনি রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। একই বছর তিনি মানবাধিকারের জন্য গোয়াংজু পুরস্কারও জিতেছিলেন; এই পুরস্কারটি কোরিয়া এবং বিদেশে ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দেয় যারা তাদের কাজের মাধ্যমে মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং শান্তির প্রচার ও অগ্রগতিতে অবদান রাখেন।
এম সাখাওয়াত হোসেন : এম সাখাওয়াত হোসেন বাংলাদেশের সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশনড লাভ করেন তিনি। পরে দেশ স্বাধীন হলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনে তিনি কমিশনার নিযুক্ত হন, দায়িত্ব পালন করেন ২০১২ সাল পর্যন্ত।
আ ফ ম খালিদ হাসান : হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমির ও সুন্নি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত আ ফ ম খালিদ হাসান। ১৯৫৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত সাতকানিয়া উপজেলার মাদার্শা ইউনিয়নে জন্ম নেওয়া এই ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব চরমোনাইয়ের পীরের নেতৃত্বাধীন দল ইসলামী আন্দোলনের শিক্ষা উপদেষ্টা ও মাসিক আত্তাওহীদের সম্পাদক।
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে তার শিক্ষা জীবন শেষ করেন। ২০০৬ সালে ‘হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর খুতবা : একটি সামাজিক–সাংস্কৃতিক গবেষণা’ বিষয়ে উপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
চার নারী উপদেষ্টা :
ফরিদা আখতার : ফরিদা আখতারের জন্ম চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ থানার হারলা গ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে পড়াশোনা করেছেন তিনি। বর্তমানে কাজ করছেন আর্থসামাজিক গবেষণার নানা ক্ষেত্রে। বিশেষ করে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের অবস্থা জানা এবং পরিবর্তনের জন্য নীতিনির্ধারণী গবেষণা ও লেখালেখিই তার কাজের প্রধান জায়গা। নারী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্যসম্পদ, তাঁত শিল্প, গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক, জনসংখ্যা এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক বিষয়ে তিন দশক ধরে কাজ করেছেন।
বাংলাদেশের নারী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িত সম্মিলিত নারী সমাজের সদস্য তিনি। উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণার (উবিনীগ) নির্বাহী পরিচালকও ফরিদা। লেখক ও কলামিস্ট হিসেবেও তার পরিচিতি আছে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের জন্ম ১৯৬৮ সালের ১৫ জানুয়ারি ঢাকার ধানমন্ডিতে। তার পৈত্রিক বাড়ি হবিগঞ্জে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও হলিক্রস কলেজের পড়াশুনা শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। পাস করার পর তিনি ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিতে (বেলা) যোগ দেন। ১৯৯৭ সালে বেলার প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব নেন।
জাহাজভাঙা শিল্পের মাধ্যমে পরিবেশ বিপর্যয় রোধ, শ্রমিকদের নিরাপত্তা, জলাশয় ভরাট করে আবাসন তৈরি, পাহাড় কাটা, বন ধ্বংস, পলিথিনের যথেচ্ছ ব্যবহার রোধ, চিড়িং ঘেরের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে কাজ করে গেছেন রিজওয়ানা। পরিবেশ রক্ষা ও সামাজিক কাজের জন্য অবদানের জন্য বেশকিছু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা তৈরির কারণে ২০০৭ সালে পরিবেশ পুরস্কার, পরের বছর নেপালভিত্তিক ক্রিয়েটিভ স্টেটমেন্টস অ্যান্ড সাউথ এশিয়া পার্টনারশিপ ‘সিলেব্রেটিং ওমেনহুড অ্যাওয়ার্ড’, ২০০৯ সালে গোল্ডম্যান পরিবেশ পুরস্কার, ওই বছরই টাইম সাময়িকীর ‘হিরোজ অফ এনভায়রনমেন্ট’, ২০১২ সালে ম্যাগসেসে পুরস্কার পান রিজওয়ানা।
নূরজাহান বেগম : নূরজাহান বেগম ২০১০ সালে গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। তিনি নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে এই দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
নুরজাহান বেগম গ্রামীণ পরিবারের একটি অলাভজনক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ শিক্ষার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও দায়ত্িব পালন করছেন। ১৯৭৬ সালে যখন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রকল্প শুরু হয়, তখন তিনি ইউনূসের প্রথম সারির সহযোগীদের একজন ছিলেন। তিনি অনেক দেশে ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের পরামর্শদাতা, প্রশিক্ষক এবং মূল্যায়নকারী হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি ওয়ার্ল্ড সামিট মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস অ্যাওয়ার্ড ২০০৯ এবং ভিশন অ্যাওয়ার্ড ২০০৯–এ ভূষিত হন।
নুরজাহান ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ‘ফরচুন মোস্ট পাওয়ারফুল উইমেন’ সামিটে অংশ নেন। একই বছর স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ায় ফাউন্ডেশন ফর জাস্টিস পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতি হন।
শারমিন মুরশিদ : সমাজকর্মী শারমিন মুরশিদ বেসরকারি সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী হিসাবেও কাজ করে এই সংস্থা। তিনি একটি খ্যাতনামা পরিবারের সদস্য। তার বাবা খান সারওয়ার মুরশিদ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন। তার মা নূরজাহান মুরশিদ ১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় বাংলাদেশের প্রথম সরকারের দূত হিসেবে কাজ করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই জন :
নাহিদ ইসলাম : উপদেষ্টাদের মধ্যে আছেন কোটা সংস্কার ও সরকার পতনের ডাক দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের একজন নাহিদ ইসলাম। নাহিদ ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ (শিক্ষাবর্ষ–২০১৬–১৭) থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। এর আগে তিনি সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
নাহিদ ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব। ২০২৩ সালের অক্টোবরে আত্মপ্রকাশের সময় বলা হয়েছিল, এটি ‘রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিমুক্ত স্বতন্ত্র একটি ছাত্র সংগঠন’।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের একজন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। আসিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ (শিক্ষাবর্ষ– ২০১৭–১৮) থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও কলেজটির বিএনসিসি ক্লাবের প্লাটুন সার্জেন্ট আসিফের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায়। গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সদস্য সচিব আসিফ।
অনুপস্থিত তিন জন :
ফারুক–ই–আজম : ফারুক–ই–আজম মুক্তিযুদ্ধের একজন বীর। সাহসী এই যোদ্ধা বীর প্রতীক খেতাবও পেয়েছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বছরে উচ্চমাধ্যমিক পাস করা ফারুক সে সময় খুলনায় ছিলেন। পরে অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে চট্টগ্রামে পৌঁছান। তিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের হরিণা ইয়ুথ ক্যাম্পে আশ্রয় নেন ৬ মে। পরে নৌবাহিনীর জন্য মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুট করা হবে শুনলে তিনি সেখানে যোগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র সমন্বিত যুদ্ধাভিযান ছিল ‘অপারেশন জ্যাকপট’। এ অভিযানের মধ্য দিয়ে সারা দেশে একই সময়ে সব বন্দরে একযোগে আক্রমণ চালানো হয়েছিল। সে জন্য এই আক্রমণের জন্য ২০ সদস্যের তিনটি দল নির্বাচন করা হয়।
একটি দল তখন চট্টগ্রামে এসে পৌঁছাতে পারেনি। অন্য যে দুটি দলের ৩৭ জন সদস্য অংশ নেন তার ছিলেন অধিনায়ক এ ডব্লিউ চৌধুরী এবং উপ–অধিনায়ক ছিলেন ফারুক–ই–আজম।
অপারেশন জ্যাকপট ছিল একটি আত্মঘাতী অভিযান। এই অভিযানে পাকিস্তান ও আরও কয়েকটি দেশ থেকে আসা অস্ত্র, খাদ্য ও তেলবাহী ২৬টি জাহাজ ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিল। এ অভিযানে অংশগ্রহণকারী কোনো গেরিলা শত্রুপক্ষের হাতে ধরা পড়েননি।
সুপ্রদীপ চাকমা : সুপ্রদীপ চাকমার জন্ম ১৯৬১ সালে খাগড়াছড়ির কমলছড়িতে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন। ১৯৮৫ সালে সপ্তম বিসিএসের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। পররাষ্ট্র ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সাবেক এই রাষ্ট্রদূত পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মেঙিকো ও ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বও পালন করেছেন। রাবাত, ব্রাসেলস, আঙ্কারা এবং কলম্বোতে বাংলাদেশ মিশনেও তিনি বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন।
বিধান রঞ্জন রায় : বিধান রঞ্জন রায় একজন মানসিক চিকিৎসক ও মনরোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক ও পরিচালক। মনোরোগ বিজ্ঞানে এমবিবিএস, ডিপিএম ও এমফিল ডিগ্রি নেওয়া এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মনোরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধানও ছিলেন। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহের ইউনিয়ন স্পেশালাইজড হাসপাতালে অনুশীলন করছেন।