একসময়কার জরাজীর্ণ মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন পর্যায়ক্রমে উন্নয়নের ছোঁয়া নিয়ে বদলে গেলেও বদলায়নি সময়ের প্রয়োজনের অনেক চাহিদা। হাসাপাতালে রোগী বেড়েছে শতগুণ। কিন্তু প্রতিদিন আসা সহস্র প্রায় রোগী বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকার কক্ষে হাতড়ানো আলো দিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নেই পরিচ্ছন্নতা কর্মী। বাইরের পরিবেশ ঝকঝকে হলেও ওয়ার্ডগুলোতে আসেনি পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। গত বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেয়া যায় এরকম সমস্যাগ্রস্ত নানান চিত্র। মাঝবয়সী ডায়রিয়া রোগি এরাদউল্লাহ (৫২) বলেন, আমাদের এই উপজেলা হাসপাতালে আগেও ভর্তি হয়েছি, এখন ডাক্তার–নার্স সবাই বেশ খোঁজখবর রাখছেন, ঔষুধপত্রও দিচ্ছেন কিন্তু বিদ্যুত একবার গেলে দুই থেকে চার ঘন্টা আসে না। তখন গরমে যেন আরো দুর্বল হয়ে যায়।
গাইনি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, গরমে অন্ধকারে ঘামে ভিজে লাইন ধরে আছে অন্তঃত শত প্রায় প্রসূতি মা ও গাইনি অসুস্থ মহিলা। ভেতরে ডাক্তার। ঘামে তিনিও অর্ধভেজা শরীর নিয়ে জানালা দিয়ে আসা ক্ষীণ আলোর উপর ভরসা করে রোগী দেখছেন।
এমন অবস্থা কতোক্ষণ ধরে চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ২ ঘন্টা ধরেই বিদ্যুৎ নেই। আবার কখন আসবে তাও বলতে পারছেন না। এমনটা নাকি প্রায় সবসময়কার চিত্র। তিনি বলেন, একটি পর্যাপ্ত ক্ষমতার জেনারেটর ও জ্বালানির ব্যবস্থা নয়তো হাসপাতালের বিদ্যুৎ লাইনটি আলাদা করার ব্যবস্থা ছাড়া উপায় নেই। একই দুর্ভোগ দেখা গেল ইমার্জেন্সিসহ চক্ষু বিভাগ, অপারেশান থিয়েটারসহ সর্বত্র। হাসপাতালের ভ্যাকসিন বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা কবির উদ্দিন ও নার্সিং বিভাগের ইনচার্জ সীমা রানী বলেন, খুবই ছোট সাইজের একটি জেনারেটর থাকলেও সেটির জন্য নেই কোন ফুয়েল বরাদ্ধ। আবার তার ক্ষমতা এতোই সামান্য যে, অপারেশান থিয়েটার ও পুরোপুরি সচল রাখা সম্ভব হয়না। কিন্তু অনেক মানবিক অসুস্থ রোগী বিদ্যুতের অভাবে এতো কষ্ট করে প্রায়ই আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া উপায় নেই। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে এখনো ময়লা আবর্জনার বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, মাত্র একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী হওয়ায় এখানে পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। কয়েকটি ভবনের কয়েকটি ওয়ার্ডে ন্যূন্যতম তিন–চারজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী প্রয়োজন।
এ বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি লোডশেডিং বৃদ্ধি পাওয়ায় এমনটি হচ্ছে। আমরা প্রতিটি বিভাগে আলাদা জেনারেটর নয়তো একটি বড় জেনারেটরের কথা আলোচনা করবো। মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বিভিন্ন উন্নতমানের রোগ নির্ণয়ের যন্ত্র থাকা সত্ত্বেও শুধু অপপ্রচারের কারণে বেসরকারি হাসপাতালের দিকে ছোটেন রোগীরা। এতে করে গরিব রোগীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন, লাভবান হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলো। রোগীদের উন্নত সেবা দানের জন্য চিকিৎসক–নার্স সকলে নিরলসভাবে কাজ করছি।