সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নগরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ও রাস্তায় স্থাপিত পানির কলগুলো বিনা নোটিশে তুলে নেয়া হচ্ছে। এতে নগরের বস্তিবাসী ও যাদের বাসগৃহে ওয়াসার পানির লাইন নাই সে সব জনসাধারণের ভোগান্তি হচ্ছে। এই ভোগান্তি থেকে পরিত্রাণের জন্য পানির কলগুলো পুনরায় স্থাপন এবং যেগুলো নষ্ট তা বন্ধ না করে সচল করার জন্য ওয়াসা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান মেয়র। গতকাল অনুষ্ঠিত চসিকের বর্তমান পর্ষদের ২৩ তম সাধারণ সভায় এ আহবান জানান তিনি। এসময় মেয়র ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ ও ৪১ নং ওয়ার্ডে উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ার কারণে অপরিষ্কার ও লবণাক্ত পানি ব্যবহার করতে হয় উল্লেখ করে বলেন, মানবিক বিবেচনায় বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ওয়ার্ডগুলোতে পানির লাইন স্থাপন করতে হবে। মেয়র রাস্তা থেকে বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নালার উপর কোন পোল যাতে স্থাপন করা না হয় সে জন্য ব্যবস্থা নিতে পিডিবি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান। সভায় চসিকের শ্রমিক–কর্মচারীদের চাকুরি স্থায়ী করণের বিষয়টি কার্যকর করণে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মেয়র চসিক প্রকৌশলীদের চলমান প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দিয়ে বলেন, চট্টগ্রামকে আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প, বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্প, নতুন বাস টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, সেবক কলোনি প্রকল্পে যে বরাদ্দ পাওয়া গেছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পগুলোর কাজ দৃশমান করতে হবে। না পারলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হবে। মেয়র আড়াই
হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে অন্তত এক হাজার কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বানসহ কাজগুলো দ্রুততার সাথে শেষ করা এবং ১৫টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক ও প্রকৌশলীদের নির্দেশনা দেন। এছাড়া আগামীতে প্রতিটি সাধারণ সভার আগে প্রকল্পগুলোর কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের নিদের্শনা দেন।
মেয়র বলেন, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে যে মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে তা কবে নাগাদ শেষ হবে বলা কঠিন। তবে জলাবদ্ধতা প্রকল্পে খাল ও নালার রিটেইনিং ওয়াল করতে গিয়ে যে সব খালে মাটি ভরাট করা হয়েছে তা আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে উত্তোলন করে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় আগামী বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় জলজট হলে এর দায় দায়িত্ব প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে নিতে হবে।
মেয়র বলেন, সিটি কর্পোরেশনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য রাজস্ব আয় বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এ জন্য চসিকের খালি জায়গাগুলোতে আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে এবং নালার উপর স্থাপিত স্ল্যাব নির্মাণকারীদের কাছ থেকে কর আদায়ের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার কাজ জোরদার করতে হবে। বিভিন্ন ফ্ল্যাট মালিকদের কাছে পাওনা, হাট–বাজার ও ঘাট ইজারা গ্রহণকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত ১৫০ কোটি টাকা আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেন মেয়র। এছাড়া রিঙা ও ভ্যান গাড়ির লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নের অটোমেশন কাজ দ্রুতার সাথে সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।
মেয়র বলেন, নগরে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিঙার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ও জনসাধারণের ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে তা থেকে পরিত্রাণের জন্য খুব শিঘ্রই সিএমপি’র সাথে আলোচনা করে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিঙা, গ্রাম সিএনজি চলাচল বন্ধ করার অভিযান শুরু করা হবে। এসময় তিনি ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ এবং উচ্ছেদকৃত স্থানে যাতে কেউ পুনঃ দখল হতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোরভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও ঘোষণা দেন। এছাড়া সড়ক ও অলি–গলিতে অবৈধভাবে বসা কাঁচা বাজার উচ্ছেদ ও বে–পার্কিং ব্যবস্থা চালু করার পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান মেয়র।
মেয়র বলেন, কোনো রকমের অনুমতি ছাড়া ওয়াসা রাস্তা কর্তন করলে সংশ্লিষ্ট বাসা–বাড়ির মালিক, দায়িত্বরত ওয়াসার প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসময় তিনি সড়ক কাটার অনুমিতপত্র থাকলেও সড়ক কর্তনের সময় ওয়ার্ডের সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরকে অবহিত করতে হবে বলে জানান। চসিক সচিব খালেদ মাহমুদের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন–প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম, প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন, আফরোজা কালাম, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম।