উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কথাটি এখন সরকারের চরম প্রতিপক্ষও অস্বীকার করবে না। ২০০৯ সাল থেকে গত সাড়ে ১৪ বছরে সরকার যে উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করেছে, তাতে এই অগ্রগতি। সরকারের বহুমাত্রিক কর্মকাণ্ড ও নানাবিধ কর্মসূচির কল্যাণে ব্যাপক সামাজিক–অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশ উন্নতি লাভ করেছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ও স্কলারদের উদ্দেশে জোর গলায় বলতে পেরেছেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। আমরা এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি। ২০৩৭ সালের মধ্যে আমরা ২০তম হব। পাশাপাশি ২০২৬ সাল নাগাদ আমরা একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হব। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে নিউইয়র্ক সিটির বিশ্বখ্যাত কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি : সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনে তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ২০০৬ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২২ সালে এই হার নেমে এসেছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে। অতি দারিদ্র্যের হার এখন ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭ শত ৬০ ডলারে। করোনা মহামারির পূর্বে আমাদের জিডিপি দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৭ শতাংশে। করোনা মহামারিকালে যেখানে অন্যান্য দেশগুলোর উৎপাদন কমে যাচ্ছিল, সেখানে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এখন প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ শতাংশে। শিল্পখাতে জিডিপি বৃদ্ধি পেয়ে ২২ শতাংশ থেকে ৩৭ শতাংশ হয়েছে।’
এটা সত্যি যে, এই পরিবর্তনগুলো কিন্তু এমনি এমনি আসেনি। প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা ও ঐকান্তিক ইচ্ছায় সাধিত হয়েছে এই উন্নয়ন। তিনি নিজে বলেছেন, ‘আমাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ জনগণ, বিচক্ষণ পরিকল্পনা ও কার্যক্রম এই পরিবর্তনের পেছনে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশ এক সময় ব্রিটেনের উপনিবেশ ছিল, তারপর পাকিস্তানের প্রদেশ ছিল। ১৯৪৭ সালের ভারত–পাকিস্তানের দেশভাগের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে তেজোদীপ্ত আন্দোলন গড়ে তোলেন। অবশেষে ২৩ বছরের এক দীর্ঘ সংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে বিজয় লাভ করে।’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে উন্নয়নে বিস্ময়কর অর্জনে বিশ্বস্বীকৃত বাংলাদেশের এই সংকটময় মুহূর্তে পণ্য রপ্তানির অব্যাহত প্রবৃদ্ধিতে দেশের আর্থ–সামাজিক সংকট উত্তরণে সম্ভাবনার নতুন অধ্যায় নির্মিত হয়েছে। রপ্তানির উপর ভর করে আগামী দিনগুলোতে দেশের অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা। দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদদের মতে, আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে আসার সাথে সাথে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বেড়ে যাওয়ায় অর্থনীতি আবার গতিশীল এবং বৈদেশিক মুদ্রার উপর যে চাপ তৈরি হয়েছিল তা ধীরে ধীরে প্রশমিত হচ্ছে। এছাড়াও দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর জীবন–জীবিকার ভারসাম্য রক্ষার্থে বাংলাদেশ সরকারের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ ও কার্যকর বাস্তবায়নে অর্থনীতির চাকাকে সচল করার গৃহীত সকল উদ্যোগ সর্বমহলে প্রশংসিত।
বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ পূর্বাভাসে ভারত ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় ভালো অর্থনীতির দেশের তালিকায় সবার উপরে রেখেছে বাংলাদেশকে। বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০২২–২৩ ও ২০২৩–২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি অর্জিত হতে পারে যথাক্রমে ৫ দশমিক ২ ও ৬ দশমিক ২ শতাংশ। যদিও উল্লেখ্য অর্থ বছরে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে যথাক্রমে ২ ও ৩ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়াও ২০২২–২৩ অর্থবছরে ভুটানে ৪ দশমিক ১, নেপালে ৫ দশমিক ১ এবং শ্রীলঙ্কায় ২ শতাংশ নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি মনে করে, এই দুই অর্থ বছরে ভারতে যথাক্রমে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ ও ৬ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। ১৬ এপ্রিল ২০২৩ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জুট প্রোডাক্টস বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের (জেপিবিপিসি) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, পাট খাতের বৈশ্বিক রপ্তানি আয়ের ৭২ শতাংশ এখন বাংলাদেশের। সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে সোনালি আঁশ তথা পাট সোনালি স্বপ্ন দেখাচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বিদেশের মাটিতে প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্নের কথা বলে এসেছেন, সেটা ধ্রুব সত্যে পরিণত হোক– সেটাই আমরা চাই। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যাশা করছি।