প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের চমৎকার পরিবেশ বিদ্যমান। তিনি বলেন, দেশি–বিদেশি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আমরা দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। গত বুধবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিলের উদ্যোগে আয়োজিত কমনওয়েলথ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক ফোরাম ২০২৩–এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এবং আঞ্চলিক বাজার সুবিধার কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান প্রায় ৩০০ কোটি মানুষের বাজারের কেন্দ্রস্থলে। এছাড়া আমাদের রয়েছে ১৭ কোটি মানুষ। তিনি বলেন, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সচ্ছল জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে তিন কোটি। ফলে জার্মানি ও যুক্তরাজ্যকে পেছনে ফেলে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বাজারে পরিণত হবে বাংলাদেশ। বিনিয়োগ পরিবেশ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রায় ৭০ শতাংশই আসে পুনঃবিনিয়োগ থেকে। এ থেকে প্রমাণ হয় বাংলাদেশে বিনিয়োগের চমৎকার পরিবেশ বিদ্যমান। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের কাছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বিডা অনলাইনভিত্তিক ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছে। এর মাধ্যমে ২৬টি সংস্থার ৭৮টি সেবা একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে দেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগের পূর্ব শর্ত হচ্ছে অবকাঠামো উন্নয়ন। এজন্য আমরা সমগ্র দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ১০৯টি হাইটেক এবং সফটওয়ার প্রযুক্তি পার্ক এবং আইটি প্রশিক্ষণ এবং ইনকিউবিউশন সেন্টার স্থাপন করছি। যেখানে বৈদেশিক বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগ সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য প্রায় সকল খাতই উন্মুক্ত। তবে এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুত, চিকিৎসা উপকরণ, গাড়ি ও জাহাজ নির্মাণ, তথ্য প্রযুক্তিসহ অনেক খাতে অধিক বিনিয়োগ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, এ সকল খাতে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি ব্যবসা হতে উদ্ভুত লাভ/ডিভিডেন্ড নিজ দেশে ফেরৎ নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া সহজতর করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ সবচেয়ে লাভজনক। বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার, পর্যাপ্ত জনবল, সস্তা শ্রম, ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে এখানে। এছাড়াও এখানে পণ্য উৎপাদন করে বিশ্বের অন্যান্য দেশে রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে যে কোনো দেশ বিনিয়োগ করলে সব ধরনের নীতি সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছে বাংলাদেশ।
তাঁরা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৫–২০১৬ সাল থেকে ২০১৭–২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৮–২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু করোনার কারণে তাতে ছন্দপতন হয়। কিন্তু এখনো বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। তাঁরা বলেন, সরকারের কিছু উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত দেশকে এগিয়ে নিয়েছে। এরমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ অন্যতম। কিন্তু করোনা এবং ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপ নেবে। তবে এ সময়ে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো সব ধরনের বাণিজ্য সুবিধা উঠে যাবে। রপ্তানিতে চ্যালেঞ্জ বাড়বে। অর্থাৎ প্রতিযোগিতা সক্ষমতার মধ্যদিয়েই বাংলাদেশকে রপ্তানিতে টিকে থাকতে হবে। এ অবস্থায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন জরুরি।
ইতোপূর্বে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমরা ক্রস বর্ডার ট্রেডিংয়ের (সীমান্ত বাধাহীন বাণিজ্য) পক্ষে। মুক্ত বাণিজ্য বাড়াতে হবে। কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশগুলোর উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকার সব ধরনের নীতি সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তার মতে, এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ঐতিহাসিক। এই সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করতে হবে। এ সময়ে ডিজিটাল বাণিজ্যের ওপর জোর দেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘উন্নত বিশ্ব এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির মধ্যে সংযোগকারী হিসাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ বছর শেষে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার দাঁড়াবে ৪৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থনীতির চালিকাশক্তি পোশাক রপ্তানি, রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়)। এছাড়া এক দশক ধরে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ধরে রেখেছে।’
তাঁরা বলেন, বাংলাদেশ অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার, দক্ষ–অর্ধদক্ষ পর্যাপ্ত জনবল, তুলনামূলকভাবে সস্তা শ্রম, ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে এখানে। ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিশাল পরিবর্তন হয়েছে। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে চলছে। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি এখানে পণ্য উৎপাদন করে বিশ্বের অন্যান্য দেশে রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।
এ বথা সত্যি যে, বিনিয়োগে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু হয়েছে। ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেশি। অর্থাৎ বাংলাদেশ ক্রয় ক্ষমতায় এগিয়ে রয়েছে। এছাড়াও এদেশে পণ্য উৎপাদন খরচ কম। তবে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত জাতি হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আরো বাড়াতে হবে।