মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের যুব সমাজকে চাকরি না খুঁজে উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে এই আহ্বান এক অসাধারণ ভূমিকা রাখবে। আমাদের শিক্ষিত যুব সমাজ যদি চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হয় তাহলে তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অগ্রগতি আরো দ্রুততর হবে। বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে সামিল করার যে স্বপ্ন ইতোমধ্যে আমরা দেখতে শুরু করেছি, তা বাস্তবায়নে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির বিকল্প নেই। বিষয়টি অনুধাবন করেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমন আহ্বান জানিয়েছেন বলে আমার বিশ্বাস।
কিন্তু এখানে আমার কিছু কথা এবং প্রস্তাবনা রয়েছে। উদ্যোক্তা হতে বললেই একজন যুবক উদ্যোক্তা হতে পারবে না। তাকে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ দেখাতে হবে, এগিয়ে দিতে হবে, সহায়তা করতে হবে। যথোপযুক্ত সহায়তা পেলেই কেবল একজন বেকার যুবক চাকরি না খুঁজে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের চাকরির ব্যবস্থা করতে পারবে। সৃষ্টি করতে পারবে কর্মসংস্থান। দেশের বেকার সমস্যা সমাধানে রাখতে পারবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আমাদের দেশে প্রতি বছর যেসব যুবক স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত হয় তাদের অন্তত ৯০ শতাংশই গরিব, নিম্নমধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। যাদের বুক ভরা স্বপ্ন থাকে, কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবায়নের মতো আর্থিক সঙ্গতি থাকে না। আর উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক সঙ্গতিই বড় ব্যাপার। আমাদের দেশের ব্যবসায়ী পরিবার বা ধনী পরিবারের সন্তানেরা উদ্যোক্তা হতে চাইলে তাদের কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু দেশের ৯০ শতাংশ যুবকেরই উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হচ্ছে অর্থ। অর্থের অভাবে বহু যুবক চাইলেও উদ্যোক্তা হতে পারছে না, চাকরি নামের সোনার হরিণের পেছনে ছুটছে। দেশে উদ্যোক্তাদের অর্থের সংস্থান করার নানা ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক। ক্ষদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই ফাউন্ডেশন রয়েছে। কিন্তু এসব উৎস থেকে অর্থের সংস্থান করা অনেক কঠিন। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আছে। জামানত এবং চড়া সুদ নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণ–তরুণীদের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পথে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আমার প্রস্তাবনা হচ্ছে, সরকার একটি উদ্যোক্তা সেল বা অন্য যে কোনো নামে একটি সেল গঠন করতে পারে। এই সেলকে সরকার একটি ফান্ড প্রদান করবে। হোক সেটি পাঁচ কোটি, দশ কোটি কিংবা একশ কোটি টাকার। দেশের যুবকদের মধ্যে যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তারা এই সেলের কাছে তাদের প্রজেক্ট প্রোফাইলসহ আবেদন করবে। তারা কী ধরনের উদ্যোক্তা হবে, কী উৎপাদন করবে, কিভাবে ব্যবসা করবে, মুনাফা কিভাবে করবে ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে সেলকে জানাবে। সেল তাদের বিষয়টি পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে বিনা সুদে (এক বা দুই শতাংশ সার্ভিস চার্জ থাকতে পারে) অর্থের যোগান দেবে। এক বছর ওই উদ্যোক্তাকে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে হবে। দ্বিতীয় বছর থেকে মাসিক বা ত্রৈমাসিক কিস্তিকে টাকাগুলো ফেরত নেয়ার ব্যাবস্থা করতে হবে।
অথবা এফবিসিসিআইর নিয়ন্ত্রণে একটি সেল করা যেতে পারে। দেশের চেম্বারগুলোর যেমন চিটাগাং চেম্বার, ঢাকা চেম্বার, মেট্রোপলিটন চেম্বার, উইম্যান চেম্বারের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হতে ইচ্ছুক তরুণ–তরুণীরা তাদের প্রজেক্ট প্রোফাইলসহ আবেদন করবে। চেম্বারগুলো যাছাই বাছাই করে ওইসব প্রস্তাবের মধ্যে যেগুলো গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হবে সেগুলো এফবিসিসিআইর নির্দিষ্ট সেলের নিকট প্রেরণ করবে। এফবিসিসিআইয়ের ওই সেল এসব নতুন উদ্যোক্তাকে ঋণ প্রদান, ঋণের কিস্তি আদায়সহ যাবতীয় কার্যক্রম মনিটরিং এবং নিয়ন্ত্রণ করবে। এক্ষেত্রে একশ কোটি টাকার একটি তহবিলের যোগান দিতে হলেও তা সরকারের জন্য খুব একটি বড় ব্যাপার হবে না। আমার বিশ্বাস উপরোক্ত প্রস্তাবনাগুলো গ্রহণ করে দেশের বেকার যুবকদের পাশে দাঁড়ালে শত শত উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে, অর্থের সংস্থান না করে শুধু উদ্যোক্তা হতে বললে তা কেবল কথার কথাই হবে, উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে না।