কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনে গত ৪ আগস্ট প্রথমবার বসানো হয় স্ক্যানিং মেশিন। ওই দিন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর মাত্র ২ ঘণ্টা চালু ছিলো অতিগুরুত্বপূর্ণ এই স্ক্যানিং মেশিনটি। এরপর থেকে অচল হয়ে আছে। তবে জনবল সংকট এবং কিছু অসুবিধার জন্য স্ক্যানিং মেশিন বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্টেশন কর্তৃপক্ষ।
স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ৪ আগস্ট কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনে মাদক পরিবহন থেকে শুরু করে অনিরাপদ বস্তু বা জিনিস পাচার রোধে দেশে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’ ব্র্যান্ডের স্ক্যানার মেশিনটি বাসানো হয়। কিন্তু চালুর দুই ঘণ্টা পর থেকে এটি বন্ধ রয়েছে। ৮ আগস্ট শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ টায় সরেজমিনের গিয়ে দেখা যায়, রাত ৮টার ট্রেনে ঢাকা যাওয়ার জন্য প্রায় হাজার খানেক যাত্রী রেল স্টেশনের মূল ভবনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। তবে কোনো যাত্রীকেই ব্যাগ স্ক্যানিং করতে দেখা যায়নি। অনেক যাত্রী স্ব–উদ্যোগে ব্যাগ স্ক্যানিং করার জন্য মেশিনে দিলেও দায়িত্বরত কয়েকজন কর্মচারী আবার সেই ব্যাগ যাত্রীদের ফেরত দিচ্ছেন। বলছেন দরকার নেই।
বর্তমানে নিয়মিত প্রতিদিন ২ বা ৩ টি ট্রেনে প্রায় ৫ হাজার যাত্রী আসা–যাওয়া করছেন। মাদকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে কক্সবাজার থেকে যাত্রাপথে যাত্রীদের ব্যাগ স্ক্যানিং করা অতীব প্রয়োজন বলে দাবি উঠে। কিন্তু জনবলের অজুহাত সৃষ্টি করে স্ক্যানিং মেশিনটি বন্ধ রাখা অনুচিত বলে মনে করছে সচেতন মহল।
স্ক্যানিং মেশিনের পাশে বসা মজনু ও রাসেল নামের ২ জন কর্মচারীর কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘আমরা সরকারি স্টাফ না, আরেকটি প্রকল্প থেকে এসেছি। স্ক্যানিং মেশিন দেখাশুনার দায়িত্বপালন করছি তবে স্ক্যানিং মেশিন এখন চলছে না।’ কেন তা জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘সেটা আমরা বলতে পারবো না কর্তৃপক্ষ জানবে।’ এ সময় ট্রেনের যাত্রী ঢাকার বাসিন্দা সরকারি কর্মকর্তা আলী হোসেন বলেন, ‘এখানে স্ক্যানিং মেশিন দেখতে পেয়ে, নিজে থেকে ব্যাগ আগেভাগেই স্ক্যানিং মেশিনে দিয়েছি। কিন্তু তারা স্ক্যানিং না করে ফেরত দিয়েছে। এখানে কোনো যাত্রীর ব্যাগ স্ক্যানিং করতে দেখা যায়নি।’
৯ আগস্ট সকাল ১০ টায়ও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোনো যাত্রীর ব্যাগ স্ক্যানিং করা হচ্ছে না। এসময় অনেক সচেতন যাত্রী বলেন, ‘কক্সবাজারের মতো মাদক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অবশ্যই রেল যাত্রীদের ব্যাগ স্ক্যানিং ও তল্লাশি দরকার। তা না হলে নিয়মিত মাদক পাচারের আশঙ্কা রয়েছে।’ এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মচারী বলেন, উদ্বোধনের সময় ২ ঘণ্টা চালু ছিল। এরপরে আর স্ক্যানিং মেশিন চলতে আমরা দেখিনি। সেটি চালানোর জন্য নাকি এখনো কোনো লোক নিয়োগ দেয়া হয়নি। আপাতত মেশিনটি পরিচালনার জন্য যাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে তারা অতিরিক্ত কাজ করতে আগ্রহী নন।
এ ব্যাপারে সিনিয়র স্টেশন মাস্টার মেহেদী বলেন, ‘জনবল সংকটসহ আরো কিছু সমস্যা আছে। তাই সাময়িক বন্ধ আছে মেশিনটি। শিগগিরই আবার চালু করা হবে।’
চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ সুপার শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘আমরা যদি ওয়ান বাই ওয়ান যাত্রীদের ব্যাগ চেক করি তাহলে তারা খুব বিরক্ত হবেন। এটা আসলে এক ধরনের হ্যারেসমেন্টও। তাই রেল স্টেশনগুলোতে লাগেজ স্ক্যানার বসানো হয়েছে। কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনের স্ক্যানার কেন বন্ধ সেটা আমি জানি না। এ ব্যাপারে খোঁজ নেবো।’
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয় কক্সবাজার রুটে। বর্তমানে কক্সবাজার–ঢাকা রুটে কক্সবাজার ও পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন এবং কক্সবাজার–চট্টগ্রাম রুটে সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করছে।