চট্টগ্রাম–কক্সবাজারসহ সারা দেশের মানুষের বহুল আকাঙ্ক্ষিত দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইনের আগামী ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, ঐদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী–কক্সবাজার নবনির্মিত রেলপথে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধনের জন্য সকালে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে উপস্থিত হবেন। সেখানে দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন উপলক্ষে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী ট্রেনে উঠে এই রেলপথ উদ্বোধন করবেন। পরবর্তীতে স্টেশন চত্বরে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ঐদিন প্রধানমন্ত্রী সকালে প্রথমে হেলিকপ্টারযোগে রামু যাবেন। রামু রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে নবনির্মিত দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথ চলাচলের জন্য উদ্বোধন করে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন নামবেন। কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে নেমে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন। এরপর সেখান থেকে মহেশখালীর মাতারবাড়িতে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন। ইতোমধ্যে দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথের পাশাপাশি কক্সবাজার দৃষ্টি নন্দন আইকনিক রেল স্টেশন ভবন এবং রামু স্টেশন ভবনের কাজ শেষ করেছে প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কক্সবাজারের দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেল স্টেশন ভবনের মতো রামু স্টেশনটিও অত্যন্ত সুদৃশ্য ও মনোমুগ্ধকর। আগামী ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী যে ট্রেনের মাধ্যমে ককঙবাজার রেলপথের উদ্বোধন করবেন সেই ট্রেনটি আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে দুপুর ১টায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তায় কঙবাজার নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী রেলওয়ের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার তাপস কুমার দাস।
এই ব্যাপারে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, আগামী ১১ নভেম্বর দোহাজারী–কঙবাজার রেলপথে প্রধানমন্ত্রী ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী ট্রেনে থাকবে ১৫টি নতুন বগি। এই ১৫ বগির সাথে আরো অতিরিক্ত ৪ বগি মঙ্গলবার (আজ) দুপর ১টায় চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিয়ে যাওয়া হবে। ১৫ বগিতে যদি কোনো সমস্যা থাকে তাহলে অতিরিক্ত ৪ বগি থেকে যুক্ত করা হবে। মঙ্গলবার দুপুরে এই ট্রেনে আমিসহ রেলের ঊর্ধতন কর্মকর্তারাও থাকবেন এই ট্রেনে। পুলিশ, আরএনবি সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই ট্রেন নিয়ে যাওয়া হবে। ইঞ্জিনসহ বগি সব ব্র্যান্ডনিউ।
এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী রেলওয়ের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার তাপস কুমার দাস বলেন, দোহাজারী কঙবাজার রেলপথে আগামী ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী যে ট্রেন উদ্বোধন করবেন সেটির বগি মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম থেকে ছাড়া হবে। আমিও যাবো এই ট্রেনে করে।
রেলওয়ের প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১০ সালে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কঙবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্ত ঘুমদুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কঙবাজারে যাতায়াত সহজ করা। পাশাপাশি মিয়ানমারসহ ট্রান্স–এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করা। ঢাকা থেকে কঙবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের জন্য চট্টগ্রামের দোহাজারী পর্যন্ত ব্রিটিশ আমল থেকেই রেললাইন আছে। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে এই প্রকল্পের ব্যয় র্নিধারণ করা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে সরকারের অগ্রাধিকার এই প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখনো ৯ স্টেশনের মধ্যে বেশ কয়েকটির কাজ চলছে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। এই প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
এদিকে দেশের প্রধান এবং আকর্ষনীয় পর্যটন নগরী কঙবাজারে প্রথম ট্রেন গেছে গত রবিবার সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে। গত রবিবার সকাল ৯টা ২ নিমিটে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে কঙবাজারের উদ্দেশ্যে প্রথমবারের হুইসেল বাজিয়ে রেলের বিশেষ জিআইবিআর ইন্সপেকশন ট্রেনটি ছেড়ে যায়।
স্বাধীনতার ৫২ বছর পর প্রথমবারের মতো পর্যটন নগরী কঙবাজারে রেলওয়ে পরিদর্শন অধিদপ্তরের সরকারি রেল পরিদর্শক (জিআইবিআর) রুহুল কাদের আজাদের নেতৃত্বে প্রথম ট্রেন যাওয়ার মুহূর্তটি ছিল দেশের ইতিহাসে ঐতিহাসিক ঘটনার মতো। দোহাজারী থেকে নতুর রেলপথে প্রথম ট্রেন দেখতে পেয়ে রেলপথের দুইপাশের সাতাকানিয়া–লোহাগাড়া অঞ্চলের মানুষ ট্রেনকে ঘিরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার দৃশ্যটি ছিল অভূতপূর্ব।