উচ্ছ্বাস আছে উৎসব নেই

স্বাস্থ্য বিধি মেনে বই বিতরণ কর্মসূচি শুরু

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২ জানুয়ারি, ২০২১ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

নতুন বছর মানেই নতুন ক্লাস, আর নতুন বইয়ের উৎসব। নতুন বইয়ের ঘ্রাণে শিক্ষার্থীদের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস। উৎসব আমেজে নতুন বই হাতে পাওয়ার লোভে বছরের প্রথম এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকে সারাদেশের কয়েক কোটি শিক্ষার্থী। তবে এবার সব কিছুই যেন ব্যতিক্রম। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস এলোমেলো করে দিয়েছে সব। নতুন বইয়ের জন্য উচ্ছ্বাস থাকলেও উৎসবের আমেজ ছিল না এবার। কারণ, বই উৎসব না করে বিকল্প উপায়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা আগেই জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রতি ক্লাসের বই তিন দিন করে ১২ দিনে বিতরণের নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই ভাবে প্রাথমিক পর্যায়ের বইও কয়েক দিনে বিতরণে নির্দেশনা জারি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
নির্দেশনা অনুযায়ী-স্বাস্থ্য বিধি মেনে কোন ধরনের জমায়েত না করে শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের হাতে বই তুলে দিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো। যদিও নির্দেশনার কারণেই গতকাল একই দিনে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। তারা জানিয়েছেন- নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিধি মেনে বই বিতরণের লক্ষ্যে আগে থেকেই ক্লাস ভিত্তিক সিডিউল তৈরি করা হয়। ওই সিডিউলের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সময়ে সংশ্লিষ্ট ক্লাসের শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকরা এসে বই নিয়ে গেছেন।
নগরীর নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে কেবল ৯ম শ্রেণির একশ জন শিক্ষার্থীর হাতে বই বিতরণ করা হয়েছে প্রথম দিন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল আলম হোসাইনী আজাদীকে বলেন- এক ক্লাসের বই ৩ দিনে এবং সব মিলিয়ে ১২ দিনে মাধ্যমিকের বই বিতরণে মন্ত্রণালয় ও মাউশির নির্দেশনা রয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথম দিন আমরা কেবল এক ক্লাসের (৯ম শ্রেণির) দুটি সেকশানের শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দিয়েছি। বইগুলো আমরা আগে থেকেই বান্ডেল করে রেখেছি। শিক্ষার্থীরা আসলে তাদের শ্রেণি কক্ষে বসিয়ে একটি একটি করে নতুন বইয়ের বান্ডেল তুলে দেয়া হয়েছে। ১২ দিন পর্যন্ত এ বই বিতরণ করা হবে বলেও জানান প্রধান শিক্ষক ফরিদুল আলম হোসাইনী।
কোন ধরণের জমায়েত না করে এবং সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য বিধি মেনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হাতে বই বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তাহমিনা শারমিন। এবার একই দিনে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেয়া হয়নি জানিয়ে এই প্রধান শিক্ষিকা বলেন-নির্দেশনা অনুযায়ী একদিনের পরিবর্তে কয়েকদিনে বই বিতরণ করা হচ্ছে। বই নিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে অবশ্যই মাস্ক পরে আসতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, উৎসব না থাকলেও বই হাতে পাওয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে উচ্ছ্বাস ছিল আগের মতোই। নতুন বই পেয়ে আনন্দ ভর করতে দেখা যায় তাদের চোখে-মুখে। নতুন বইয়ের ঘ্রান নিতেও দেখা যায় অনেক শিক্ষার্থীকে।
৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট চাহিদার ৮৩ শতাংশ বই স্কুলে-স্কুলে পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম। অবশিষ্ট বইগুলো কয়েকদিনের মধ্যেই পৌঁছে যাবে বলে জানান তিনি। আর বই বিতরণে নির্দেশনার বিষয়ে জেলা প্রাথমকি শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন- বই উৎসবের পরিবর্তে এবার শুধু বই বিতরণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ শিক্ষার্থী বা অভিভাবক এসে স্কুল থেকে বইগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে যাবে। কোন ধরণের জমায়েত করা যাবেনা। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল থেকে বই নিতে হবে। একেক দিন একেক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে প্যাকেটজাত বই তুলে দেয়া হবে। ভিন্ন ভিন্ন দিনে ক্লাস ও রোল অনুযায়ী শিডিউল তৈরি করবে স্কুলগুলো। নির্ধারিত দিনের সুনির্দিষ্ট সময়ে শিডিউলভুক্ত ক্লাসের শিক্ষার্থীরা এসে বই সংগ্রহ করে নিয়ে যাবে। কোন ভাবেই কোন ধরণের বই উৎসব বা জমায়েত করা যাবেনা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় ডাম্পার চালকসহ নিহত ৩
পরবর্তী নিবন্ধভারতে বিশেষজ্ঞদের সায় পেল অক্সফোর্ডের টিকা