করোনাকালে অটোপাসে এইচএসসি পরীক্ষায় সবাই উত্তীর্ণ হলেও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন অভিভাবকরা। এদিকে ফল প্রকাশের পর এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি শুরু করতে যাচ্ছে। কোন পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে, সে বিষয়ে প্রাথমিক কিছু সিদ্ধান্তও নিয়ে রেখেছে তারা। তবে মার্চের আগে ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গতবছর যারা ভর্তি হয়েছিল, তাদের কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাস হলেও শ্রেণিকক্ষে তেমন ক্লাস হয়নি। এমনকি পরীক্ষাও হয়নি। এ অবস্থায় তাড়াহুড়ো করে নতুন করে প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে কিনা এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্বও কাজ করছে।
এবার বেশির ভাগ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে বলে আগেই জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবার প্রথমবারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। এ ব্যাপারে ৪ ফেব্রুয়ারি প্রস্তুতিমূলক সভা ডাকা হয়েছে । তবে পরীক্ষার তারিখ ঠিক হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভায়। যদিও প্রাথমিক ধারণা হলো, মেডিকেল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পরে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে। প্রসঙ্গত, গত শনিবার ঘোষিত ফলাফলে চট্টগ্রামে প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থী পাস করে।
করোনার জন্য এইচএসসি পরীক্ষা না হলেও বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শনিবার দুপুরে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণকারী ৯৭ হাজার ৯৬৭ জন শিক্ষার্থীর সবাই পাস করেন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১২ হাজার ১৪৩ জন (১২.৩৯ শতাংশ), জিপিএ -৪ থেকে ৫ এর কম পেয়ে পাশ করেছেন ২৫ হাজার ৪৯৩ জন (২৬.০২ শতাংশ), জিপিএ -৩.৫ থেকে ৪ এর কম পেয়ে পাশ করেছে ১৯ হাজার ৯৮২ জন (২০.৪০ শতাংশ), জিপিএ -৩ থেকে ৩.৫ এর কম পেয়ে পাশ করেছে ১৬ হাজার ৯৩১ জন (১৭.২৮ শতাংশ), জিপিএ -২ থেকে ৩ এর কম পেয়ে পাশ করেছে ২০ হাজার ৫৫৪ জন (২০.৯৮ শতাংশ), জিপিএ -১ থেকে ২ এর কম পেয়ে পাশ করেছে ২ হাজার ৮৬৪ জন (২.৯২ শতাংশ)।
স্বাভাবিকভাবে পরীক্ষা হলে সর্বোচ্চ পাসের হার হয় ৬০ এর কাছাকাছি থাকে। ২০১৬ সালে চট্টগ্রামে সর্বমোট ৫৬ হাজার ১৬ জন, ২০১৭ সালে ৫০ হাজার ৩৪৭ জন, ২০১৮ সালে ৬০ হাজার ৭৫৫ জন, ২০১৯ সালে ৬১ হাজার ৫২৩ জন শিক্ষার্থী পাস করেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ৪০ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী এইচএসসি পাস করেছে। যাদের ভর্তি কিংবা উচ্চ শিক্ষার পথ করে দেয়াটাই এবার শিক্ষা ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে।
সূত্রগুলো বলেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চার হাজারের মতো আসন রয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন কলেজে পরিচালিত অনার্স কোর্স, চুয়েট এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মিলে হাজার পাঁচেক ছাত্রছাত্রীর সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ রয়েছে। চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় হাজারের বেশি, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে ১ হাজার ২২৫ জন, পোর্টসিটি ইউনিভার্সিটিতে এক হাজারের মতো, ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় এক হাজার এবং চিটাগাং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনির্ভাসিটিতে তিন সেমিস্টারে এক হাজার দুইশ’ জনের মতো ছাত্রছাত্রী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। এর বাইরে বিজিসি ট্রাস্ট, সাউদার্ণ ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। তবে সরকারি বেসরকারি সব মিলিয়ে এই সুযোগ কোনোভাবেই ৪০ হাজারের বেশি নয়। এবার এই বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর ভর্তি নিয়ে হিমশিম খেতে হবে।
কয়েকজন অভিভাবক তাদের সন্তানদের ভর্তি নিয়ে চিন্তার কথা জানালেও এ বিষয়ে একাধিক শিক্ষাবিদ বলেন, উচ্চ শিক্ষার বহু ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। কোনো সমস্যাই হবে না।
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন বলেন, উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তিতে কোনো সমস্যা হবে না। দেশে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে। অনেকগুলো নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। যেখানে অনেক ছাত্রছাত্রী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। এছাড়া শতাধিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৫০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান অত্যন্ত ভালো। তবে এখানে লেখাপড়ার বড় সমস্যা হচ্ছে আর্থিক অবস্থা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি দিতে হয়। এই টাকার সংস্থান করতে অনেকেরই কষ্ট হয়। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৃত্তি প্রদান করে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও নিশ্চয় বৃত্তি প্রদান করবে। যাতে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির পথ সুগম হয়। তিনি বলেন- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে বহু ছাত্রছাত্রী ভর্তির সুযোগ রয়েছে।