ঢাকার দুই দলের সমাবেশের দিন সহিংসতায় যে পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন, তিনি কাজ করছিলেন ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটে। গতকাল বিএনপির মহাসমাবেশস্থল নয়াপল্টনের আশপাশে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষের সময় আমিরুল ইসলাম পারভেজ নামের এ পুলিশ কনস্টেবল ঘটনাস্থলের কাছাকাছিই পুলিশের একটি দলের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ তথ্য জানিয়ে উগ্রবাদ দমনে গঠিত বিশেষায়িত এ ইউনিটের সহকারী কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান, বিজয়নগর এলাকায় সংঘাত ছড়ালে পারভেজ সেখানে যান। ওই এলাকার বক্স কালভার্ট রোডে সংঘর্ষের সময় পুলিশ বক্সের ভেতর ঢুকে পড়েছিলেন। পরে হামলাকারীরা পুলিশ বক্সটিতে আগুন লাগিয়ে দিতে গেলে পারভেজ সেখান থেকে বের হয়ে একা হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, এ সময় তার অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তার ওপর হামলা করা হয়। তার মাথায় যেভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে, তাতে স্পষ্ট হত্যার উদ্দেশ্যে এ হামলা হয়েছে।
এদিকে নিহত পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজের পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। গতকাল বিকাল সোয়া ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। এর আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে জখম হন পারভেজ। নিহত আমিরুল ইসলাম পারভেজ মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারি ইউনিয়নের চরকাটারি গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার মোল্লা ছেলে। খবর বিডিনিউজের।
পারভেজের খালাতো ভাই আব্দুল মোমিন বলেন, পারভেজ ভাইয়েরা তিন ভাই–বোন। বোন সবার বড়। এরপর পারভেজ ভাই। আর তার ছোট ভাই আছেন, যিনি প্রতিবন্ধী। তার বাবা আগে থেকে অসুস্থ। মায়ের শরীরের অবস্থাও ভালো না। ছেলে নিহতের খবরে বাবা–মা মূর্ছা যাচ্ছেন। তাদের অবস্থা খুবই খারাপ পর্যায়ে।
৩২ বছর বয়সী পারভেজ সিটিটিসির কর্মকর্তা শফিকুলের দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করছিলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শফিকুল বলেন, উগ্রবাদ বিরোধী নানা অভিযানে পারভেজ দিন–রাত সঙ্গ দিয়েছে। সর্বশেষ মৌলভীবাজারের অভিযানেও সে দারুণ সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করেছে।
গেল আগস্টেও পারভেজ মৌলভীবাজারে জঙ্গি বিরোধী অভিযানেও কাজ করেছেন দিন–রাত এক করে। সেই স্মৃতি মনে করেই সিটিটিসির কর্মকর্তাদের অনেকেই চোখের পানি ফেলেছেন। তারা বলছেন, ওকে যারা এভাবে কুপিয়ে–পিটিয়ে মেরেছে তারাও সব উগ্রবাদী।
শাহজাহানপুর রেল কলোনির ভাড়া বাসায় স্ত্রী রুমা আক্তার আর সাত বছরের মেয়েকে নিয়ে থাকতেন পারভেজ। তার মেয়েটি সবে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পারভেজের লাশ শনাক্ত করেন তার ভাগ্নে সবুজ মিয়া। তিনি জানান, ১২ বছর আগে পুলিশে যোগ দেন পারভেজ।
পরিবারে শোক : চরকাটারি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আইয়ূব আলী বলেন, আমিরুল ইসলাম পারভেজের বাবার বাড়ি চরকাটারি গ্রামে ছিল। যমুনায় বাড়ি বিলীন হয়ে গেলে তার বাবা–মা পাশের টাঙ্গাইলে নাগরপুর উপজেলার দপ্তিয়র ইউনিয়নের ফয়েজপুর গ্রামে বসবাস শুরু করেন।
পারভেজ পড়াশোনা করেছেন দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারি সবুজ সেনা উচ্চ বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক বলেন, খুবই ভদ্র ছেলে পারভেজ। ২০০৬ সালে আমাদের স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে সে। তার বাবা অসুস্থ। ভাই প্রতিবন্ধী, পরিবারের এখন কী হবে?
পারভেজের বন্ধু আরিফ হোসেন বলেন, আমি আর পারভেজ ২০০৬ সালে চরকাটারি সবুজ সেনা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছি। পরে সে পুলিশে চাকরি পেয়ে ঢাকা চলে যায়। আজ ও না ফেরার দেশে চলে গেল। ওর মেয়ের কী হবে? পরিবারটা শেষ হয়ে গেল।