উখিয়ায় জায়গা জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে চাচাতো ভাইয়ের হাতে জেঠাতো বোন হত্যার ঘটনায় গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনার পর ঘাতকদের তিনটি ঘর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় জড়িতরা পলাতক থাকায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। স্থানীয় সূত্র ও নিহতের স্বজনরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯ টার দিকে বাড়ির দরজা ভেঙে সন্ত্রাসী মো. ইউসুফের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের পশ্চিম পালংখালী গ্রামের মৃত মমতাজ মিয়ার স্ত্রী লুলু আল মরজানকে জবাই করে হত্যা করে। নিহত লুলু আল মরজান (৩৮) ও খুনের সাথে জড়িত ইউসুফ (৩৩) সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাই বোন।
নিহতের বড়ভাই শফিউল্লাহ তুহিন জানান, ইউসুফের পিতা জাহাঙ্গীর আলম তার আপন বড়ভাই সাবেক ইউপি সদস্য মো. আলমগীরকে ১৯৯৯ সালে একইভাবে হত্যা করেছিল। তাদের উভয়ের মধ্যে জায়গা জমির বিরোধ চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তুহিন জানান, ঐ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা দীর্ঘদিনেও কোন নিষ্পত্তি হচ্ছে না। ঐ মামলার আসামি জাহাঙ্গীর, সন্ত্রাসী তৎপুত্র ইউসুফ দীর্ঘদিন ধরে প্রায় সময় তাদের পরিবারের সদস্যদেরও পিতার পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে আসছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত লুলু আল মরজান পালংখালী উচ্চ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচিত বর্তমান মহিলা সদস্য ছিলেন। পাশাপাশি সংসারের হাল চালাতে নিহত নারী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি বিদেশি দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রের মিডওয়াইফারী হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। গতকাল শুক্রবার মাগরিবের পর ময়নাতদন্ত শেষে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের শ্বশুর বাড়ি সংলগ্ন আঞ্জুমানপাড়া কবরস্থানে নিহত লুলুকে দাফন করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ইউসুফ গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদসহ র্যাবের হাতে আটক হয়েছিল। প্রায় দুই মাস জেল খেটে সমপ্রতি জামিনে এসে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে চলে যাওয়ার পর ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ইউসুফ ও তার পিতা জাহাঙ্গীরের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। নিহতের তিনটি মেয়ে খুবই অসহায়। তাদের একান্ত আপন বলতে আর কেউ রইল না। অগ্নিসংযোগের কথা স্বীকার করে তিনি জানান, এটি রহস্যজনক। কে বা কারা অগ্নিসংযোগ করেছে তা নিশ্চিত না। তবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হত্যার সাথে জড়িতরা নিজেরা বাঁচতে এ ঘটনা ঘটিয়েও থাকতে পারে।
উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, হত্যার পর নানা ব্যস্ততায় নিহতের স্বজনরা অভিযোগ দিতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে তিনি জানান। এ ঘটনায় জড়িতদের আটকের তৎপরতা চলমান। পুলিশ মৃতদেহ নিয়ে আসার পর ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে কে বা কারা কয়েকটি ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছিল তা তদন্ত করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।