নতুন বছরের প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গেলেও সব পাঠ্যবই হাতে পায়নি চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রামে প্রাথমিকে এখন পর্যন্ত ৭৫ শতাংশের মতো বই এসেছে। মাধ্যমিকে এসেছে প্রায় ৯০ শতাংশের মতো। ঈদুল ফিতরের পর পর শিক্ষর্থীরা সব বই হাতে পাবে বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা অফিস ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেরিতে বই হাতে পাওয়ার প্রভাব পড়তে পারে শিক্ষা কার্যক্রমে। গত বছর শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন, এরপর পাঠ্যবইয়ে সংযোজন–বিয়োজন এবং পাঠ্যবই ছাপানোর কার্যাদেশ দিতে দেরি হওয়ায় নতুন শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যের পাঠ্যবই নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছেনি। অন্তর্বর্তী সরকার জানুয়ারির মধ্যে সব বই পৌঁছানোর আশ্বাস দিলেও সেটা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানোর কথা থাকলেও সব বই পায়নি শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের যাতে পড়াশোনায় সমস্যা না হয়, সেজন্য শিক্ষকদের এনসিটিবির ওয়েবসাইটে দেওয়া পাঠ্যবইয়ের পিডিএফ কপি সংগ্রহ করে নিয়মিত ক্লাস নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, ছয় থানা শিক্ষা অফিসে প্রাক–প্রাথমিকের শতভাগ বই এসেছে। আর ১৫ উপজেলার মধ্যে সবকটি উপজেলায় বই পৌঁছেছে। শুধু চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ৩টা করে বই পায়নি শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ বই এসেছে। এর মধ্যে ইবতেদায়ি, দাখিল, দাখিল ভোকেশনাল, মাধ্যমিক ভোকেশনাল, মাধ্যমিক বাংলা ও ইংলিশ ভার্সন মিলে মোট ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ৯৯৪ জন শিক্ষার্থী নতুন বই পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। বই এসেছে প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ। এছাড়া চট্টগ্রামের স্কুলগুলোতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ৩০৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য তাদের মাতৃভাষায় লেখা বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৬৭১ কপি। যা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এবং নগরের পাঁচলাইশ থানা শিক্ষা অফিসের আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা এবং গারো সমপ্রদায়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মাতৃভাষায় লেখা এসব বই পেয়ে থাকে। এসব বই বেশিরভাগ এসে পৌঁছেছে।
জানা গেছে, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার কথা জানিয়েছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। কিন্তু সব বই পৌঁছেনি শিক্ষার্থীদের হাতে। তবে সব বই ছাপা শেষ হয়েছে বলে জানান এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান। গত ১০ মার্চ এনসিটিবির চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন, চলতি বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে মোট বইয়ের সংখ্যা ৩৯ কোটি ৬০ লাখের বেশি। এর মধ্যে ১০ মার্চ পর্যন্ত ছাপা হয়েছে ৩৮ কোটি ৭০ লাখ ৪ হাজারের মতো। প্রাথমিকের ৯ কোটি ১৯ লাখের মতো বইয়ের মধ্যে ছাপা হয়েছে ৯ কোটি ১৮ লাখের বেশি। সরবরাহ করা হয়েছে ৯ কোটি ১৬ লাখের বেশি। আর মাধ্যমিকের (ইবতেদায়ি মাদ্রাসাসহ) প্রায় ৩০ কোটি ৪১ লাখ বইয়ের মধ্যে ১০ মার্চ পর্যন্ত ছাপা হয়েছে ২৯ কোটি ৫১ লাখের বেশি। সরবরাহ হয়েছে ২৭ কোটি ২০ লাখের মতো। ছাপাখানার মালিকরা জানান, নানান চাপে বই ছাপাতে দেরি হচ্ছে। ঈদের পর পর সব বই ছাপানো ও সরবরাহ সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুর রহমান আজাদীকে বলেন, প্রাথমিকের ৭৫ শতাংশ বই এসেছে। অল্পকিছু বাকি আছে। আশা করছি বাকি বই ঈদের পর পর পেয়ে যাবো। শুধুমাত্র চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ৩টা করে বই বাকি আছে। জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম খীসা আজাদীকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে এক কোটি ৬০ লাখ কপির মত বই পেয়েছি। যা চাহিদার ৯০ শতাংশের মতো। মাদ্রাসার চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির কিছু বই আসেনি। ভোকেশনালের কিছু বই আসেনি। প্রায় ১৩ লক্ষের মতো বই আসেনি। আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষার্থীদের হাতে দ্রুত সময়ে বই তুলে দিতে। কিছুদিনের মধ্যে সবগুলো বই পেয়ে যাব আশা করি।