ঈদকে পরিবারের সাথে অবশ্যই কাটাতে হবে আনন্দে, মহা আনন্দে। কিন্তু ঈদের ছুটি কাটাতে কোথায় যাওয়া যায় সেটা যখন ভাবছেন তখন নিশ্চয়ই মনে পড়ে যায় ঘরের কাছেই কনকর্ডের ফয়’স লেক কমপ্লেক্সের কথা।
এখানে সব বয়সী মানুষের আনন্দ বিনোদনের জন্য রয়েছে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, ওয়াটার পার্ক সী–ওয়ার্ল্ড, ফয়’স লেক রিসোর্ট ও বাংলো। ফয়’স লেক কমপ্লেক্স–এ ভ্রমণে নগরবাসী পায় বাড়তি অনন্দ কারণ এখানে রয়েছে বিনোদনের সকল উপকরণ আর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বন্ধু–বান্ধব ও পরিবারের সকলকে নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে তাই মানুষ ভিড় করে ফয়’স লেকে। ঈদের দিন হতে পরবর্তী বেশ কয়েক দিন নগরীর অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মতো দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে এখানে।
অ্যামিউজমেন্ট পার্ক : প্রাচ্যের রাণী খ্যাত চট্টগ্রাম শহরের বুক চিরে গড়ে ওঠা সবুজে ৩৩৬ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র ফয়’স লেক। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত বিনোদন কেন্দ্র ফয়’স লেকের প্রবেশের পথ শেষে দেখা যাবে বিশাল এক তোরণ। আর এই তোরণ পার করে ভেতরে গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলেই দেখা পাওয়া যাবে সেই নয়নাভিরাম ফয়’স লেকের। আর্কষণীয় এই বিনোদন কেন্দ্রটি দুই ভাগে বিভক্ত– অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও সী ওয়ার্ল্ড। অ্যামিউজমেন্ট পার্ক সাজানো হয়েছে অনেকগুলো রাইড নিয়ে যেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রাইডগুলো হলো সার্কাস সুইং, বাম্পার কার, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, ফেরিস হুইল, পাইরেট শিপ, কফিকাপ, রেড ড্রাইস্লাইড, ইয়েলো ড্রাই–স্লাইড, বাগ বাউন্স ইত্যাদি। লেক ভ্রমণের জন্য আছে বোট, স্পিড বোট, ইঞ্জিন বোট, ওয়াটার–বি। নানা রকম দেশী–বিদেশী খাবারের জন্য আছে অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট। এ্যাডভেঞ্চারল্যান্ড রেস্টুরেন্টের ঠিক পাশেই দেখা মিলবে হরেক রকম মাছের। আছে লেকের উপর ভেসে থাকা ফ্লোটিং রেস্টুরেন্ট। পাহাড়ের ঠিক উপরেই আছে ফটো কর্নার যেখানে দেখা মিলবে নানা ভঙ্গিতে হরেক প্রাণীর ভাস্কর্য। লেকের গা–ঘেঁষেই সামুদ্রিক প্রাণীদের ভাস্কর্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে পিকনিক স্পট অ্যাকোয়াটিক জোন। ফয়’স লেকের দু’পাশে শুধুু যেন সবুজের সমারোহ। জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর লেকটির দু’পাশ জুড়ে রয়েছে সারি সারি গাছ। বোটে করে লেকে বেড়ালে কিংবা ওয়াটার পার্ক সী–ওয়ার্ল্ডে গেলে চারিদিকে চোখে পড়বে শুধু সবজু আর সবুজ। যেন ব্যস্ত শহরের মাঝখানে পাহাড় আর পানির মিতালী। এখানকার বিভিন্ন পাহাড়ের মধ্যে রয়েছে অরুণিমা, জলটুঙ্গি, গোধুলি, অস্তাচল, আকাশমণি, বনশ্রী, হিমঝুরি, আসমানি, গগনদ্বীপ, উদয়ন প্রভৃতি গাছ। এসব পাহাড়ে নানা প্রজাতির গাছগাছালির মধ্যে আরো রয়েছে সেগুন, গর্জন, কড়াই, একাশিয়া, আগর, সোনালু, কনকচূড়া, রাধাচূড়া, কাঠবাদাম, ডুমুর, পাম, থাইকড়াই সহ বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছ। ঔষধি গাছের মধ্যে রয়েছে বসাক, নিম, অর্জুন, বিশল্যকরণী, পাথরকুচি, দারুচিনি, স্বর্ণগন্ধা, মতমূলি সহ নানা প্রজাতির গাছ। ফুলের মধ্যে গোলাপ, গাঁদা, রঙ্গন, জুঁই, চম্পা, করবী, বকুল, নয়নতারা, চেরি ইত্যাদি। এই সব প্রাকৃতিক উপাদান অক্ষুণ্ন রেখে সব বয়সী মানুষদের জন্য কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কো. লি. গড়ে তুলেছে বিনোদন কেন্দ্রটি।
সী ওয়ার্ল্ড : ফয়’স লেকের বোট স্টেশন থেকে ইঞ্জিন বোটে দশ মিনিটের পথ পেরোলেই দেখা মিলবে দেশের সর্ববৃহৎ ওয়াটার পার্ক সী–ওয়ার্ল্ড। ফয়’স লেকের এক প্রান্তে গড়ে তোলা হয়েছে জলের রাজ্যে এক রোমাঞ্চকর এই পার্ক। দিনভর সকলকে নিয়ে জলকেলি উৎসবে মেতে ওঠার জন্য রোমাঞ্চকর সব রাইড রয়েছে এখানে।
এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানটি কৃত্রিম সমুদ্র সৈকত যা ওয়েভ–পুল নামে পরিচিত। সাগরের ঢেউয়ের মতোই ঢেউ খেলা করে এখানে। টিউবে চড়ে ঢেউয়ের তালে ভেসে বেড়ানো যায় ইচ্ছেমতো, ডুবে যাওয়ার ভয় থাকে না। ওয়েভ–পুলের ঠিক পাশেই রয়েছে ড্যান্সিং জোন। কৃত্রিম বৃষ্টি, নানা রঙের আলো আর মন মাতানো মিউজিকের তালে তালে নেচে উঠে আগত দর্শনার্থীরা। চিলড্রেন পুলটি সাজানো হয়েছে বাচ্চাদের উপযোগী অনেকগুলো রাইড নিয়ে যেগুলোতে শিশুরা মেতে উঠে অনাবিল আনন্দে। এটা যেন শিশুদের জন্য গড়ে তোলা এক স্বপ্ন রাজ্য। পরিবারের সবাইকে নিয়ে মজা করার জন্য আছে ফ্যামিলি পুল। সামান্য উঁচু থেকে খুব দ্রুত নিচের দিকে পানিতে পড়ে মজা পায় দর্শনার্থীরা। বেশ উঁচু জায়গা থেকে আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে পুলে ধপাস করে পড়ার মজা পাওয়া যাবে এখানকার স্লাইড ওয়ার্ল্ডে। এছাড়াও আছে মাল্টি স্লাইড, ডোম স্লাইড, প্ল্লে–জোনের মতো মজার মজার সব রাইড। ঈদের দিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত চলবে ডি–জে শো। ডি–জে মিউজিক আর পুলের ঢেউয়ে নেচে গেয়ে ওঠার মজার তুলনাই হয় না ওয়াটার পার্ক সী ওয়ার্ল্ডে। তাই তরুণ–তরুণীদের কাছে আনন্দ–বিনোদনের দারুণ এক আকর্ষণীয় স্থান এটি।