ঈদ এলেই নানা সংকট তৈরি হয় আমাদের সমাজে। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। সড়কে লেগে থাকে যানজট। ঈদী পেতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন কতিপয় সরকারি কর্মকর্তা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতির আশংকা থাকে। গত ২৩ মার্চ দৈনিক আজাদীতে ‘ঈদ ধান্ধায় ওঁত পেতে আছে ছিনতাইকারীরা’ শীর্ষক এক সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে, আছে শতেক প্রতারণার বেড়াজাল। ‘ঈদ ধান্ধা’য় অনেকেই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। ছিনতাইকারীরা ওঁত পেতে আছে সড়কের আনাচে কানাচে। আছে সালাম পার্টি, মলম পার্টি, থুথু পার্টি, ধাক্কা পার্টির সীমাহীন দৌরাত্ম্য। সক্রিয় রয়েছে পকেটমার চক্রের কয়েকশ সদস্য। মাঝেমধ্যে পুলিশের হাতে চক্রের কিছু সদস্য ধরা পড়লেও অধিকাংশই থাকে অধরা। যাদের আটক করা হয় তারা আইনের ফাঁক গলে বাইরে এসে আবারও একই কাজ করে। তবে এবার নগরে ১১১টি স্পট চিহ্নিত করে ছিনতাই প্রতিরোধে মাঠে নেমেছে পুলিশ। শুধু রমজানের সময় নয়, ঈদের ছুটিতেও তৎপর থাকে এসব অপরাধী চক্র। তাই রমজান মাস শুরু হওয়ার পর থেকে ঈদের ছুটিকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, তারা মাঠে সক্রিয় আছে। অপরাধীরা সুবিধা করতে পারবে না। তবে তারই ফাঁকে ঘটে যাচ্ছে ঘটনা।
সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় জানান, নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুই পালায় ভাগ করে পর্যাপ্ত সংখ্যক মহিলা পুলিশ, সাদা পোশাকের পুলিশ, অন্যান্য পুলিশ বাহিনীর সদস্য, র্যাব ও এপিবিএন মাঠে নামানো হয়েছে। প্রতিটি মার্কেটে প্রথম রোজা থেকে ১৫ রোজা পর্যন্ত বেলা ২টা থেকে রাত ১২টা এক পালা এবং ১৬ রোজা থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং ৮টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত দুই পালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, একটা দেশের আইনশৃঙ্খলা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই আইন শৃঙ্খলাকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব পুলিশ বাহিনীকেই পালন করতে হয়। এ জন্য পুলিশ বাহিনীর প্রশিক্ষণ এবং সেক্টর ওয়াইজ বাহিনী করে সার্বিক সুযোগ–সুবিধা সরকার বৃৃদ্ধি করে দিয়েছে। কারণ একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পুলিশ বাহিনীকেই এই দায়িত্ব পালন করতে হয়। থানা, তদন্ত কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি এমনকি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নও বর্তমান সরকার করে দিয়েছে।
মার্চের প্রথম সপ্তাহে পবিত্র রমজান ও ঈদ সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, যানজট, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সচিবদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সভাকক্ষে এক পর্যালোচনা সভায় এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে বিশেষ নির্দেশনাগুলো তুলে ধরেন তিনি। পবিত্র রমজান মাসে কোনোভাবেই যাতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি না পায়, সে বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে বাণিজ্য সচিবকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে মজুতদারি রোধে সংশ্লিষ্ট সকলকে সজাগ থাকা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এবং ইফতার ও সেহরিতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে যে কোনো সংকট নিরসনে প্রথমে পুলিশ এগিয়ে আসে। দেশের শান্তি–শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ সদস্যরা সাধারণত নিজেদের জীবনে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। তাঁরা সবসময় পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুত থাকেন। যতটুকু জানা যায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে পুলিশ বাহিনীকে সর্বাধুনিক করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে জনবল। পাশাপাশি উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বাংলাদেশ পুলিশ এখন দক্ষ ও পেশাদারিত্বের মনোভাব নিয়ে কাজ করছে। এ জন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো। তবু নগরবাসীর শঙ্কা হলো ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য নিয়ে। ঈদ ধান্ধায় যেভাবে ওরা ওঁত পেতে আছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তা থেকে রেহাই পেতে তাঁরা প্রশাসনের সুদৃষ্টি প্রত্যাশা করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে জেনেও তাঁরা অধিকহারে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চান। ঈদে ছিনতাইকারীরা যেন কোনোভাবেই সুবিধা করতে না পারে, সেব্যাপারে পুলিশ সদস্যদের তৎপর হতে হবে।