আমাদের প্রতিটি জাতীয় উৎসব–বিশেষ করে ঈদ উৎসবে লাখ লাখ মানুষ নাড়ির টানে বাড়ি ফেরে। মাটির টানে উৎসে ফিরে যান, আনন্দ ভাগাভাগি করেন স্বজনদের সঙ্গে। গ্রামের সঙ্গে যাদের আত্মিক সম্পর্কটি এখনো অটুট ও অম্লান রয়েছে, তারা যেভাবেই হোক ঘুরে আসবে। দুর্যোগ কিংবা প্রতিকূল অবস্থাকে মাড়িয়ে তারা ছুটে যায় গ্রামে। এটি আমাদের সামাজিক সংহতিকেও সুদৃঢ় করে।
এই যে ঈদে মাটির টানে বাড়ি ফেরা হাজার হাজার নারী–পুরুষ ও শিশুর যাত্রাকে নিরাপদ করা সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব। ঈদের আনন্দ যাত্রা যেন দুঃখ–শোকের না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঈদে মাটির টানে যাওয়া এবং ঈদের পরে মানুষের ফিরে আসা যাতে স্বস্তিদায়ক হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সর্বোচ্চ সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো যাত্রীদের নির্বিঘ্ন ঈদ যাত্রা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের সর্বদা তৎপর থাকার নির্দেশ দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় এ নির্দেশ দেওয়া হয়। আলোচনা সভায় বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেনসহ মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এতে যাত্রীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এ সময় প্ল্যাটফর্মে বিনা টিকিটের যাত্রী প্রবেশ প্রতিরোধ, টিকিট কালোবাজারি, বিনা টিকিটে ভ্রমণ, ঝুঁকিপূর্ণভাবে ছাদে ভ্রমণ, নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম ছাড়া অন্যত্র যাত্রী ওঠানামা এবং স্টেশন এলাকায় আইন–শৃঙ্খলা পরিপন্থী যেকোনো কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের, বিশেষ করে আরএনবি সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। পাওয়ার কার, খাবার গাড়ি ও ইঞ্জিনে যেন কোনো যাত্রী উঠতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতেও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করা বাংলাদেশের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জের বিষয়। নাড়ির টানে বাড়ির পানে ছুটতে থাকা লোকজনকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো বড় কঠিন হয়ে পড়ে সবসময়। ঈদযাত্রায় ঝুঁকি ও বিড়ম্বনার কিছু কারণ রয়েছে এবং প্রতি বছরই উৎসব উদযাপনে বাড়ি ফিরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যায় বিপুলসংখ্যক মানুষ, আহত হয় অনেকে। এ ছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ভোগান্তি–বিড়ম্বনার কারণ।
আমাদের মনে রাখতে হবে, তাড়াহুড়ো করার কোনো কারণ নেই। জীবনের মূল্য অনেক বেশি। যাত্রী হয়ে পণ্যবাহী পরিবহনে না ওঠার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। পশুসহ মানুষের জীবনহানির সংশয় থাকায় ট্র্যাক বা ট্রলারে অতিরিক্ত পশু বহন না করার অনুরোধ রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। ঈদের ছুটিতে বাসা বাড়ি ফাঁকা রেখে যাওয়ার সময় নিজ নিজ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সব মিলিয়ে ঈদযাত্রা একটা কঠিন যাত্রায় পরিণত হওয়ার আশংকা তৈরি হয় প্রতি বছর। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লাখ লাখ মানুষের ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সড়ক, নৌ ও রেলপথে যেহেতু অধিকাংশ মানুষ ভ্রমণ করে, সেক্ষেত্রে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করার পাশাপাশি যাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা ঈদযাত্রায় অনেক সময় নানা দুর্ঘটনা ঘটে। লঞ্চডুবির ঘটনা প্রায়ই আমরা দেখতে পাই। সুতরাং অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করার ব্যাপারটিও গুরুত্বের সঙ্গে তদারকির প্রয়োজন। বিশেষ করে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী না তোলা এবং ট্রেনের ছাদে যাতে কোনো যাত্রী ভ্রমণ করতে না পারে সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি মহাসড়কগুলোর যানজট নিয়ন্ত্রণে হাইওয়ে পুলিশের সংখ্যা এবং তৎপরতা বাড়ানোকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেয়া জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতারাতি যেমন পরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব নয়, তেমনি রস্তাঘাটের উন্নতি করাও কঠিন। কিন্তু পরিকল্পনা করে কিছু স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ নিলে সুফল মিলতে পারে। সড়কে আনফিট গাড়ি যাতে চলাচল করতে না পারে সেটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ঈদযাত্রায় প্রায়শই সড়কে গাড়ি বিকল হতে দেখা যায়, যা যানজট তৈরির বড় কারণ। এ ক্ষেত্রে সড়কে নজরদারি বাড়ানোর বিকল্প নেই।