কক্সবাজারে ইয়াবার এ যাবতকালের সর্ববৃহৎ একটি চালান আটক করেছে পুলিশ। ১৭ লাখ ৭৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ ২ মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার চৌফলদন্ডী ব্রিজের নিচে একটি মাছধরা ট্রলারে অভিযান চালিয়ে প্রথমে ৭ বস্তায় ১৪ লাখ ইয়াবাসহ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে এক মাদক কারবারির বাসায় অভিযান চালিয়ে আরো ৩ লাখ ৭৫ হাজার পিস ইয়াবা ও দুই বস্তায় ইয়াবা বিক্রির নগদ ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
দৈনিক আজাদীতে বুধবার প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে আসা মাছধরা নৌকাটি প্রথমে ইনানীতে নোঙর করে বলে গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। পরে তারা সেখান থেকে মহেশখালী চ্যানেল দিয়ে সোনাইছড়ি খালে প্রবেশ করে এবং চৌফলদণ্ডির অদূরে ভারুয়াখালী ঘাটে নোঙর করে। সংশ্লিষ্টদের সন্দেহ এড়াতে সেখান থেকে শহরের ৬ নম্বর জেটি ঘাটে এসে চালানটি খালাস করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। কিন্তু চারদিকে পুলিশের ঘেরাওয়ের মুখে তারা চৌফলদণ্ডি ঘাটে এসে নোঙর করলে সেখান থেকেই তাদের গ্রেপ্তার করে সাদা পোশাকে থাকা পুলিশ। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মোহাম্মদ আলী বলেন, ইয়াবার একটি বড় চালান কঙবাজারের দিকে আসছে- এমন খবরের ভিত্তিতে পুলিশের একটি দল ইয়াবা কারবারিদের পিছু নেয়। পরে সেটি চৌফলদণ্ডি ঘাটে থামলে অভিযান চালিয়ে দুই মাদক কারবারিসহ ৭ বস্তা ইয়াবা জব্দ করি। যেখানে ১৪ লাখ ইয়াবা পাওয়া যায়, যেটি এ যাবৎকালের সর্ববৃহৎ চালান।
কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারী বেড়েছে। তবুও প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও ইয়াবাসহ নানা মাদকদ্রব্য উদ্ধারের খবর পাওয়া যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থানের পরও টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ইয়াবার চালান আসছে বলে প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে খবর বেরোচ্ছে।
‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগানে প্রায় ৩ বছর আগে শুরু হয়েছিল মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান। বিশ্লেষকরা জানান, মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স ঘোষণা দেওয়া অভিযানে গ্রেপ্তার ও নিহত হয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ী, মাদক বহনকারী ও কয়েকজন জনপ্রতিনিধি। কিন্তু অধরা থাকা অধিকাংশ ইয়াবার নেপথ্য নায়ক নানা কৌশলে মাদকের এ অবৈধ ব্যবসা জিইয়ে রেখেছে। কঙবাজারে ইয়াবার গডফাদাররা আবার সউদ্যেমে ফিরতে শুরু করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইয়াবা মিয়ানমার থেকে কঙবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া হয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। অভিযোগ আছে, বান্দরবান সীমান্ত এবং বঙ্গোপসাগর হয়ে উপকূলীয় বিভিন্ন সীমান্ত দিয়েও আসছে ইয়াবার চালান। ফলে ইয়াবার চোরাচালান কোনোভাবেই থামছে না।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হলে গডফাদারদের ধরতে হবে। তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখলে অন্য মাদক ব্যবসায়ীরা ব্যবসা ছেড়ে দেবে। তবে শুধু আইন প্রয়োগের মধ্য দিয়ে মাদকের বিস্তার রোধ সম্ভব নয়। মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ় করতে হবে। স্কুল-কলেজে মাদকবিরোধী প্রচারণা জোরদার করতে মাদক যোগানের পথগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। মাদকের অপব্যবহার এবং কুফল সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, মাদক প্রতিরোধ আন্দোলন, গণমাধ্যম এবং নাটক-নাটিকার মাধ্যমে মাদকের কুফল নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। তাঁরা বলেন, দেশ প্রেম না থাকলে, ইয়াবা পাচার বন্ধ করা সম্ভব হবে না। মাদক কারবারি গ্রেফতারের পাশাপাশি দেশে ইয়াবার চাহিদাও কমাতে হবে। সীমান্ত ঘেঁষা মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা দেশ ও যুব-সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এ মাদকের কারণে একটা প্রজন্ম ধ্বংস হতে পারে না। তাই সকলকে সমন্বিতভাবে তা প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। মাদকের সহজলভ্যতা রোধ করতে না পারলে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ফলপ্রসূ হবে না। মাদক প্রতিরোধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সামাজিক বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে হবে। ইয়াবা পাচার বন্ধ করতে হলে সবার সহযোগিতা দরকার।