ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন-ব্যবস্থার নাম

ফখরুল ইসলাম নোমানী | শুক্রবার , ৩ মার্চ, ২০২৩ at ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ দ্বীন। যে দ্বীন আল্লাহ তায়ালার কাছে অতিপ্রিয়। দুনিয়ার প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো দ্বীন বা ধর্মের অনুসারী হয়ে থাকে। আর এ পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকেই মানবজাতি এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থার চরম প্রয়োজন অনুভব করে আসছিল যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য অর্জন করা যায়। বিশ্ব মানবের এ সম্মিলিত প্রয়োজন মেটানোর মহান লক্ষ্যেই আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে নবীরাসূল পাঠিয়েছেন এ পৃথিবীতে। যাতে জগদ্বাসী সর্বোত্তম দ্বীনের অনুসারী হতে পারে। কিন্তু এতদসত্ত্বেও অসংখ্য মানুষ নিজেদের সেই পুরনো গোমরাহীর ভয়াল সাগরেই নিমজ্জিত রাখল। তারা নিজেদের মস্তিষ্কপ্রসূত বাতিল মতবাদকে সঠিক ধর্মের (ইসলামের) ওপর প্রাধান্য দিয়ে নানা উপায়ে দ্বীনের বিরোধিতা করতে লাগল। অথচ তারাও প্রথমে পারলৌকিক শান্তিপ্রাপ্তি ও মহান সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে সঠিক দ্বীনের সন্ধান লাভের জন্য হৃদয়ে চরম ব্যাকুলতা অনুভব করেছিল।

আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নবীরাসূলগণ যখন যে দ্বীনই নিয়ে এসেছেন সবগুলোতেই এক দিকে যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সর্বোত্তম পন্থা বর্ণিত ছিল ঠিক তেমনি অপর দিকে বর্ণিত ছিল খোদায়ি বিধান মতে এ দুনিয়াতে নিরাপদে বসবাসের যাবতীয় মূলনীতি। নবীরাসূলদের এ পবিত্র আগমনী ধারার সর্বশেষ যাত্রী হলেন আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ(সা.)। তিনি এসে দ্বীনকে আবার নতুন করে ঢেলে সাজালেন। বিশ্ববাসীকে পুনঃ দ্বীনের দাওয়াত দিলেন। মানুষকে ইসলামের সাথে নতুন করে পরিচয় করালেন। মিথ্যা ছেড়ে সত্যের পথে আসার জন্য সবাইকে আহ্‌বান জানালেন। তার আনীত দ্বীন হচ্ছে একটি নিখুঁত ও পূর্ণাঙ্গ দ্বীন। তিনি এসেই একদিকে পার্থিব জীবনব্যবস্থাকে সংশোধনের ঐতিহাসিক ঘোষণা দিলেন। অপর দিকে পারলৌকিক জীবনে অফুরন্ত সুখশান্তি প্রাপ্তির মূলনীতিগুলোও বাতলে দিলেন বিশ্বমানবকে।

তিনি নিজেও এই দ্বীনের মূলনীতি অনুসারে জীবনযাপন করেছেন আর সব ভুল মতবাদের মূলোৎপাটন করে সেখানে সত্য সুন্দর দ্বীনের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। দ্বীনকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রে। দুনিয়া থেকে সব প্রকার ফিতনা ফ্যাসাদ দূরীভূত করে সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই ইসলাম ধর্মকে ‘সর্বোত্তম দ্বীন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং নিজের সব বান্দার জন্য তা পছন্দ ও মনোনয়ন করেছেন। বিশ্বমানবের একমাত্র এটিই শান্তি ও মুক্তির ধর্ম। এটিই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। কিয়ামত পর্যন্ত আর কোনো নতুন দ্বীন প্রবর্তনের অবকাশ নেই। অতএব কিয়ামত পর্যন্ত দেশদেশান্তরে যুগযুগান্তরে বর্ণ ও গোত্রবংশ নির্বিশেষে সবার কাছে এই সুমহান দ্বীনই অনুসৃত ও প্রতিপালিত হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন আমি আপনার প্রতি এমন কিতাব অবতীর্ণ করেছি যার মধ্যে প্রতিটি বস্তুর স্পষ্ট বর্ণনা বিদ্যমান।

এই আয়াত থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট বোঝা যায় মানবজীবনের প্রয়োজনীয় সব দিকনির্দেশনা পবিত্র কুরআনে বিদ্যমান রয়েছে। মুজতাহিদ ও ইমামরা কুরআনসুন্নাহ গবেষণা করে মানবজাতির জীবনযাপন পদ্ধতির পরিপূর্ণ সমাধান তুলে ধরেছেন আমাদের সামনে। এই জীবনব্যবস্থায় কোনো অপূর্ণতার কথা চিন্তা করা যায় না। মানুষের ঈমানআকিদা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক জীবনের মূলনীতিসমূহ বা নীতিমালা অথবা বিধানগুলো ইসলামে এমনভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যা প্রকৃতপক্ষেই পরিপূর্ণ এবং অতুলনীয়। সুন্দর ও কল্যাণকর। এতে নতুনভাবে কোনো কিছুর সংযোজন বা বিয়োজন করার কোনো অবকাশ নেই।

আল্লাহতায়ালার কাছে একমাত্র ইসলামই সত্যসঠিক ধর্ম হিসেবে মনোনীত। তাই তিনি বিশ্ববাসীকে সম্বোধন করে পবিত্র কুরআনের অন্যত্র ইরশাদ করেছেনতোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। ঘোষিত হচ্ছে নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালার কাছে গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম (সূরা আলইমরান১৯)

রাসূলে কারিম সা: বলেন, কুরআন হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব। আর মুহাম্মদ (সা.)-প্রবর্তিত দ্বীন ইসলামই হচ্ছে মানুষকে হিদায়াত দানে সহায়ক পথগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম পথ।

ইসলাম হচ্ছে সব দ্বীনধর্মের মাঝে সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। ইসলামই হচ্ছে আগেকার সব ধর্ম ও মতবাদকে রহিতকারী। কেননা পবিত্র কুরআনে প্রিয় নবী (সা.)-কে খাতামুন নাবিয়িন বলা হয়েছে। অর্থাৎতিনি হলেন সর্বশেষ নবী। তাঁর পরে আর কোনো নতুন নবীর আগমন ঘটবে না। আর তাঁর পরে যদি কোনো নতুন নবীরাসূলের আগমন না ঘটে তাহলে তাঁর আনীত দ্বীনইসলামই কিয়ামত পর্যন্ত একমাত্র মনোনীত ধর্ম হিসেবে চালু থাকবে।

ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম ধর্ম হওয়ার কারণ ইসলাম দুনিয়ার সব প্রকার বাতিল মতবাদের মূলোৎপাটন করে তদস্থলে সঠিক মূলনীতির ভিত্তি স্থাপন করেছে। তা ছাড়া ইসলাম সাম্য মৈত্রীর যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে অন্য সব ধর্ম তা বিকাশে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। মুনিবগোলাম একই আরোহণে চড়ে পাশাপাশি বসে ঘুরে বেড়ানো কিংবা উভয়ে একই সাথে বসে একই দস্তরখানায় খানা খাওয়ার আদর্শ বিধান একমাত্র ইসলামই সমর্থন করে। পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্মে এ ধরনের সাম্যমৈত্রীর নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না।

ইসলাম পূর্বযুগে নারীরা তাদের সব অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। তাদের শুধু দাসীবাঁদি ও ভোগ্যবস্তু মনে করা হতো। ইসলাম এসে নারীকে সন্তানের মা ও গৃহের রানী হওয়ার মর্যাদা দান করেছে। শুধু তাই নয় বরং তাদের সব প্রকার হৃত অধিকারকে পুনরুদ্ধার করেছে। বিশ্বমানবতাকে সর্বশীর্ষে সমাসীন করেছে। দুনিয়ার সব ভুল মতবাদকে (যেগুলো মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল) চিরতরে ধ্বংস করে অপূর্ব সুখশান্তির প্রতিশ্রুত সত্য ও ন্যায়ের মূলনীতি বাস্তবায়ন করেছে। ফলে জগতের সর্বত্র শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পৃথিবীর মানুষ মূর্খতার অতল গহ্‌বরে হাবুডুবু খাচ্ছিল ইসলাম এসে তাদের সেই বিভীষিকাময় মিথ্যা ও মূর্খতার দুর্গন্ধময় গর্ত থেকে উদ্ধার করে একটি আলোময় জনপদে দাঁড় করিয়েছে। শহরবাসীর মতো তাদের সুশিক্ষিত ও সুসভ্য জাতিতে পরিণত করেছে।

শান্তিপূর্ণ নির্ভেজাল এবং ভারসাম্যপূর্ণ জীবনাদর্শের বাস্তব রূপ হলো ইসলাম। মানব জীবনের কোনো একটি বিষয় অথবা কোনো একটি দিকের উপর অধিক গুরত্ব আরোপ করা এবং স্বাভাবিক ভারসাম্য বিনষ্ট করাকে ইসলাম কোনোক্রমেই সমর্থন করে না। ইবাদতবন্দেগী, ব্যবসাবাণিজ্য, লেনদেন আচারআচরণ ও আমলআখলাক তথা জীবনের এমন কোনো স্তরে নেই যার ব্যাপারে ইসলাম মানসম্মত যথার্থ ও কল্যাণকর বিধান প্রদান করেনি। সুতরাং সার্বিক বিবেচনায় ইসলামই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ জীবন বিধান বা জীবন ব্যবস্থা।

সারমর্ম হচ্ছেইসলাম হলো একটি সহজসরল সর্বজনীন বিশ্বজনীন ও চিরন্তন পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। ইসলাম হচ্ছে শান্তি ও মুক্তির ধর্ম। ইহলৌকিক শান্তি ও পারলৌকিক মুক্তি অর্জনের মহান লক্ষ্যে সব প্রকার ভ্রান্ত মতবাদ চিরতরে পরিহার করে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করা।

সুতরাং কুরআন ও হাদীসের আলোকে উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা এই বিষয়টি সুষ্পষ্টভাবে বুঝে এসেছে যে বর্তমান যুগে পরকালে মুক্তির জন্য ধর্ম হিসেবে ইসলাম ধর্মকেই বেছে নিতে হবে। মুক্তির পথ কেবল ইসলামই। অন্যান্য ধর্ম অনুসারীদের মুক্তির জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ব্যতীত মুক্তির অন্য কোন পথ খোলা নেই। আল্লাহতাআলা আমাদেরকে সঠিক বিষয় বোঝার তাওফীক দান করুন।

লেখক : ইসলামি গবেষক

পূর্ববর্তী নিবন্ধকিছু কিছু বন্ধুত্বের আহবান খুব বিরক্তিকর
পরবর্তী নিবন্ধজুম্‌’আর খুতবা