ইসরায়েলে বন্দিদশায় মানসিক নির্যাতন বেশি হয়েছে

দেশে ফিরেছেন শহিদুল আলম বললেন, ফিলিস্তিনে হাজারো ফ্লোটিলা দরকার

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ১২ অক্টোবর, ২০২৫ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

ইসরায়েল থেকে মুক্তি পেয়ে তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুল হয়ে দেশে ফিরেছেন আলোকচিত্রী, মানবাধিকারকর্মী ও দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম। ঢাকায় ফিরেই তিনি বললেন, আমাদের মতো আরো হাজার ফ্লোটিলা যাওয়া দরকার, যতদিন না ফিলিস্তিন স্বাধীন হয়। গতকাল শনিবার ভোরে শহিদুল আলমের ফ্লাইটটি ঢাকায় পৌঁছায়। এর আগে শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটার দিকে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে শহিদুল আলম ইসরায়েল থেকে ইস্তাম্বুলে পৌঁছান। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শহিদুল আলম বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা আমাকে ফিরে আসার সুযোগ করে দিয়েছে। মনে রাখতে হবে যে, গাজার মানুষ এখনো মুক্ত হয়নি। গাজার মানুষ এখনো আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের ওপর এখনো নির্যাতন চলছে। সেটা যতক্ষণ না হয় আমাদের কাজ কিন্তু শেষ হয়নি। সারা পৃথিবী থেকে বাংলাদেশিরা যেভাবে সাড়া দিয়েছেন, দোয়া করেছেন, বাংলাদেশ সরকার ও টার্কিশ সরকার যেভাবে সাহায্য করেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। খবর বিডিনিউজের।

বন্দিদশায় মানসিক নির্যাতন বেশি হয়েছে : গাজাগামী নৌবহর ফ্রিডম ফ্লোটিলার একটি জাহাজ থেকে ইসরায়েলি বাহিনী আটক করার পর মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন শহিদুল আলম। তিনি বলেন, অনেক রকম নির্যাতনের মধ্যে মানসিক নির্যাতন বেশি করা হয়েছে। গভীর রাতে ইসরায়েলি সেনারা মেশিনগান নিয়ে কারাগারের সেলে ঢুকে আতঙ্ক সৃষ্টি করত।

বুধবার গাজাগামী নৌবহর ফ্রিডম ফ্লোটিলার জাহাজগুলো দখল করে নেয় ইসরায়েলি বাহিনী। ওই বহরে ‘কনশানস’ নামের একটি জাহাজে ছিলেন শহিদুল আলম। পরে অন্যদের সঙ্গে শহিদুল আলমকেও বন্দি করে ইসরায়েলি বাহিনী।

বিকালে রাজধানীর দৃক পাঠ ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসে ফ্লোটিলায় অবস্থান, আটক এবং আটকের পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কথা বলেন। তিনি বলেন, অনেক রকমের নির্যাতন হয়েছে। প্রধান যদি বলি, সেটা মানসিক নির্যাতন, আঘাত যদিও আমরা তেমন পাইনি। গভীর রাতে হঠাৎ করে ইসরায়েলি বাহিনী মেশিনগান নিয়ে সেলের মধ্যে ঢুকে যেত। তারা জোরে আওয়াজ করত, চিৎকার করে দাঁড়ানো বা অন্য আদেশ দিত এবং আতঙ্ক তৈরি করার চেষ্টা করত। হামাসের সমর্থক দাবি করে আমাদের একজন সহযাত্রীকে গুলি করে মারারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।

শহিদুল আলম বলেন, আমরা যখন জাহাজ থেকে নামি, তখন হাত পেছনে নিয়ে বেঁধে হাঁটুমুড়ে বসানো হয়েছিল। আমার জন্য বেশ কষ্টকর ছিল। প্রায় দুই ঘণ্টা এভাবে উবু হয়ে বসেছিলাম। বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখে ইসরায়েলি বাহিনী তা ছুড়ে ফেলেছে জানিয়ে বলেন, আমার সবচেয়ে অপমানবোধ হয়েছে, যখন বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখে ইসরায়েলি সেনা সদস্যরা বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং বাংলাদেশি পাসপোর্ট মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। এটা দেখে আমার খুবই খারাপ লেগেছে। এর জন্য আমাদেরকে বিচার আদায় করে নিতে হবে। একটি দেশের পাসপোর্ট এমনভাবে ছুড়ে ফেলে অপমান করে পার পেয়ে যাবে, তা মেনে নেওয়া যায় না।

তিনি বলেন, জুলাই গণ অভ্যুত্থান তাকে গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রার পরিকল্পনা করতে সাহস জুগিয়েছে। সে সময় রাস্তায় নেমেছি, আন্দোলন করেছি। এ রকম একজন স্বৈরাচারকেও আমরা হঠাতে পেরেছি। এখানেও সেই জিনিস, আন্তর্জাতিকভাবে সে রকম একটা জিনিস করা দরকার।

পরবর্তী পরিকল্পনা জানতে চাইলে শহিদুল আলম বলেন, তারা আন্তর্জাতিক একটা নেটওয়ার্ক দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। অসাধারণ কিছু ব্যক্তি একসঙ্গে হওয়ার কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমরা এখন আন্তর্জাতিকভাবে একটা নেটওয়ার্ক দাঁড় করাব। যেহেতু গ্লোবাল লিডাররা করবে না, আমরা অ্যাকটিভিস্টরা কীভাবে করতে পারি সেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। একটা ‘ব্লুপ্রিন্ট’ আমরা করে রেখেছি এবং আমরা ফেরার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আবার আমরা যাব এবং হাজারটা জাহাজ যাবে।

২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা ছেড়েছিলেন শহিদুল আলম। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর ইতালি থেকে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনএফএফসির উদ্যোগে ‘কনশানস’ জাহাজে চড়ে প্রায় ১০০ জনসহ গাজা অভিমুখে রওনা হন। বুধবার ভূমধ্যসাগরে গাজাগামী নৌববহর ফ্রিডম ফ্লোটিলার জাহাজগুলো আটক করে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখান থেকে শুরুতেই অপহৃতদের ইসরায়েলের আশদদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে তাদের দেশটির কেৎজিয়েত কারাগারে বন্দি রাখে ইসরায়েলি বাহিনী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআনোয়ারায় চাঞ্চল্যকর সিএনজি চালক হত্যাকাণ্ড
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে ৮শ শ্রমিকের মহাসড়ক অবরোধ