দেশের খ্যাতিমান এবং অত্যন্ত ভদ্র–স্বজ্জন–মেধাবী রাজনীতিক জনাব আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সুযোগ্য পুত্র ইসরাফিল খসরুকে এখনো আমার স্বচক্ষে দেখা হয়নি। একই কাট্টলী এলাকার বাসিন্দা, একই সাথে লাভলেইন আবেদিন কলোনীতে পাশাপাশি বসবাস ও নানাদিক থেকে আত্মীয়তার সম্পর্কে খসরু ভাইদের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক অত্যন্ত গাঢ়। খসরু ভাইয়ের প্রয়াত পিতা প্রাক্তন মন্ত্রী আলহাজ্ব মাহমুদুন্নবী চৌধুরী ও তাঁর সহধর্মিণীর স্নেহধন্য আমাদের জীবন প্রবাহ। বিগত কিছু দিন ধরে বিভিন্ন সূত্রে জনাব ইসরাফিল খসরুর রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালনের বিষয়টি অবগত হচ্ছি। সৌভাগ্যক্রমে সম্প্রতি গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধেয় খসরু ভাইয়ের সাথে ইসরাফিলকেও দেখা–শোনার সুযোগ হয়েছে। তার সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠান দেখার পরে সামগ্রিক পর্যালোচনায় রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি অকৃত্রিম প্রতিশ্রুতি, জনকল্যাণ ও পরোপকারে ব্রতী হওয়ার বিষয়গুলো আমাকে সত্যিই অভিভূত করেছে। তার প্রজ্ঞা–দূরদর্শী চিন্তা–চেতনা ও দেশপ্রেমের গভীর স্পর্শ কিছুটা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। উচুমার্গের পরম্পরায় ধনী পরিবারের সন্তান হয়েও দরিদ্র–নিম্নমধ্যবিত্তসহ সকল স্তরের জনগণের প্রতি তার মমত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ চমৎকার।
পিতার মত পরিশীলিত–পরিশুদ্ধ–সততার অনন্য স্মারকে রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার অঙ্গীকার সত্যিই প্রশংসনীয়। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসরাফিল খসরু চট্টগ্রাম–১১ আসনে পিতার পক্ষে প্রচার–প্রচারণায় অংশ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি উক্ত আসনে নীরবে রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে আসছেন। দলীয় নেতা–কর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছেন। তার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার বিষয়টিকে সচেতন নাগরিকবৃন্দ ইতিবাচক মনে করছেন। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণ প্রজন্মের প্রতিভাদীপ্ত নেতৃত্ব বিকাশে ইসরাফিল প্রকৃত অর্থে একজন যোগ্য রাজনীতিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সকল ধরনের গুণাবলীতে সমৃদ্ধ বলে আমার বিশ্বাস। সাক্ষাৎকারে তার কথোপকথনে পারিবারিক ধারায় জনকল্যাণে রাজনীতি করার অভিপ্রায় অত্যন্ত সুককর বিষয়। অকাট্য যুক্তিতে সকল বিরূপ মন্তব্যকে সংহার করে অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ রাজনীতিকে ধারণ করার সদিচ্ছা অতুলনীয়। এটি সর্বজনবিদিত যে, রাজনৈতিক পরিমন্ডলে দেশ সেবার অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে সুষ্ঠু–নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে পদপদায়নে অভিসিক্ত হওয়া। ইসরাফিলকে যদি সুযোগ করে দেওয়া হয় দেশ ও দেশবাসী অবশ্যই উপকৃত হবে এ সম্পর্কে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
ব্যক্তিগত কিছু স্মৃতিচারণে তার পিতা খসরু ভাইয়ের আদর্শিক উপমা স্মরণযোগ্য। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব পালনকালে বিশেষ একটি ছাত্র সংগঠনের কথিত নেতাকর্মী নামধারী সন্ত্রাসী বহুবার আমাকে নাজেহাল করার চেষ্টা করেছিল। নানা প্ররোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থির–অচল করার উদ্দেশ্যে এবং ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধিতে সম্ভবত নষ্ট চরিত্রের নেতাদের নির্দেশে তারা বিভিন্ন হিংসাত্মক কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করেছে। পরিবহন পুলের সকল বাস এবং অন্যান্য যানবাহনগুলোকে শুধু ভাঙচুর করেনি; সম্পূর্ণ অচল করে চলাচলের অনুপযুক্ত করে রেখেছিল। এক সময় অযৌক্তিক দাবিদাওয়া না মানার কারণে তারা উপাচার্যের রুম ভাঙচুর ও প্রশাসনিক ভবনের অনেক ক্ষতিসাধন করেছিল। অদ্ভুত এক বিকৃত মানসিকতায় এসব অপকর্ম দেশের সকল গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রকাশ পেয়েছিল। সে সময় জনাব আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এসব অযৌক্তিক দাবি আদায়ের নামে ঘৃণ্য অপতৎপরতার বিরুদ্ধে জনসভায় শুধু প্রতিবাদ করেননি; জাতিকে এসব জঘন্য কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। খসরু ভাইয়ের নির্ভীক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে আমাকে বিএনপি–জামায়াতের পৃষ্ঠপোষক ও আমির খসরুর অনুসারী হিসেবে চিহ্নিত করে উধ্বর্তন মহলে কুৎসা রটনার অপচেষ্টাও নিরন্তর অব্যাহত ছিল। এটি অবিশ্বাস্য হলেও সুস্পষ্ট যে, একজন সৎ–যোগ্য উপাচার্যকে কথিত সন্ত্রাসীদের কাছে কতটুকু অসহায় অবস্থায় নিপতিত করে তা খসরু ভাইয়ের বক্তব্য জাতিকে বোধগম্য করার সুযোগ করে দিয়েছে। একবার–দুইবার নয়, বহুবার এই ধরনের আচরণে পদত্যাগ করার একান্ত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শুধু ব্যর্থতার দায়ভার গ্রহণ না করার লক্ষ্যে মহান স্রষ্টার অপার কৃপায় অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি।
২০১৭ সালে একই ধরনের আচরণে তারা সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবন থেকে ড. ইউনূস স্যারের নাম মুছে ফেলার অনাকাঙ্ক্ষিত দাবি নিয়ে আসে। আমাকে কোনভাবেই টলাতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে চবি শহীদ মিনারে মানববন্ধন করে নানা কারসাজিতে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে। নিজেদের মধ্যেই হলে হলে তুচ্ছ অজুহাতে অধিকাংশ সময় দল–উপদলে বিভক্ত হয়ে সংঘাত–সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। দেশপ্রেমিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে ওদের বিরুদ্ধে বহুবার অভিযান পরিচালনা করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এসব কারণে সকলস্তরে সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও এরা এবং এদের পৃষ্ঠপোষকদের কাছে শত্রুতুল্য গণ্য হয়েছি। তৎকালীন সরকারের উর্ধ্বতন মহলে ভিত্তিহীন বানোয়াট কল্পনাপ্রসূত লিখিত অভিযোগ জানিয়ে পত্র প্রেরণসহ বহুবিধ চক্রান্ত–ষড়যন্ত্র চলমান রাখে। অজ্ঞাত কারণে এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে কর্তৃপক্ষ নানা সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে। উপাচার্যের টেবিলকে পবিত্র জায়নামাজ ঘোষণা দিয়ে সর্বোচ্চ সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করলেও নানাভাবে মানসিক নিপীড়ন–নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। গণমাধ্যমের বিভিন্ন সংখ্যায় বিষয়গুলো এখনও সাক্ষ্য বহন করছে।
এটি অনস্বীকার্য় যে, যেকোন ধরনের সরকার কর্র্তৃক প্রদত্ত দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন রাজনৈতিক বা সরকারের উর্ধ্বতন মহলের বা এমপি–মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে অযৌক্তিক দাবিসমূহ চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা হয়। দৃঢ়চেতা মনোভাবের ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষই শুধু কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও এসব মোকাবেলা করতে পারে। নির্লোভ–নির্মোহ ব্যক্তি কর্তৃত্ববাদী শাসনকে উপেক্ষা করে স্বীয় যোগ্যতা–মেধাবলে প্রশাসন পরিচালনাকারী ব্যক্তির সংখ্যা নেহায়েত কম। ভিত্তিহীন–বানোয়াট অভিযোগ তৈরি করে নষ্ট চক্রান্তের মাধ্যমে বিভিন্ন মামলা–মোকদ্দমায় ফাঁসিয়ে দিয়ে হয়রানিমূলক অবিচার খুবই প্রচলিত। এসব কারণে আমাকে বাধ্য হয়ে বিপুল সমালোচনামূলক পুস্তক–প্রবন্ধ প্রকাশ করেও প্রশংসা–স্তুতিমূলক লেখালেখির পুস্তক উপস্থাপন করতে হয়েছে। দমন–পীড়নের অভিশপ্ত কষাঘাত থেকে সম্মান বাঁচাতে সরকারি সংস্থার তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে অনেক লেখা এখন অপাংক্তেয় মনে হচ্ছে। এজন্য আমি শুধু লজ্জিত নয়, জাতির কাছেও ক্ষমাপ্রার্থী। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সঠিক দায়িত্ব পালনকালেও অজ্ঞাতসারে ভুল–ত্রুটি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা একটি মহৎ গুণ। রাজনীতিবিদদেরও রাজনৈতিক ইতিবাচক পরিবর্তনে ভুল–ত্রুটিগুলো স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা অবশ্যই রাজনীতিকে অধিকতর পরিশুদ্ধ করে। নীতি–নৈতিকতা বা ধর্মীয় অনুশাসনে বিশ্বাসী সকলেই একই মত পোষণে ঐক্যবদ্ধ হওয়া সমীচীন।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, রাজনৈতিক সংস্কৃতির আমূল পরিবর্তন ছাড়া দেশের রাজনীতি কোনভাবেই জনমুখী হতে পারে না। শ্রদ্ধেয় আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী তাঁর বহু বক্তব্যে বিষয়টি সুস্পষ্ট করেছেন। রাজনীতির গতিপ্রবাহ, উত্থান–পতন ও প্রাসঙ্গিক সমস্যাগুলো খসরু ভাই প্রকৃত অর্থেই অনুধাবন করতে পেরেছেন। এ জন্য তাঁর প্রতি অসংখ্য কৃতজ্ঞতা। তাঁর পিতা প্রয়াত মাহমুদুন্নবী চৌধুরী সাহেবও জনকল্যাণে এক আদর্শ ও নৈতিকতায় পরিপুষ্ট রাজনীতিক ছিলেন। নবী চৌধুরী ১৯৪৯ সালে চট্টগ্রাম পৌরসভার কমিশনার হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি এ. কে ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক পার্টিতে যোগ দেন। তিনি ১৯৫৪ সালের পূর্ব পাকিস্তানের আইনপরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসাবে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং–সীতাকুন্ড থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি গণ–যোগাযোগ এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর দায়িত্ব পালনকালে সাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প ও টেস্ট রিলিফের প্রচলন এবং চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (এফডিসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৮ সালে তিনি আইয়ুব বিরোধী অবস্থান নেন। তিনি ১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজে প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি নির্বাচিত হন। একই বছরে তিনি জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) এর প্রাদেশিক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম জেলার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় শত শত চেনা–অচেনা মানুষকে উনি পরিচয় পত্র দিয়ে পাকিস্তানি হায়েনাদের হিংস্র শিকার থেকে সুরক্ষা দিয়েছেন। চট্টগ্রামের বহু অঞ্চলের ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের প্রাণরক্ষার্থে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন।
পিতামহ ও পিতার মত ইতিমধ্যেই অনেক মানুষের জানমাল রক্ষায় ইসরাফিল শুধু এগিয়ে আসেননি; সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সেগুলো প্রতিরোধও করেছেন। তার রাজনৈতিক অভিযাত্রায় শুধু চট্টগ্রামবাসী নয়, বাংলাদেশের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সকলের আশীর্বাদ রয়েছে বলে আমার বদ্ধমূল ধারণা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে নিঃসন্দেহে সে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়যুক্ত হবে। অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক যোগ্য প্রার্থী হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হলে শুধু সংশ্লিষ্ট এলাকা নয়; সমগ্র দেশ–জাতি উপকৃত হবে। তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে যোগ্যতা–মেধায় পরিপক্ব ব্যক্তিত্ব হিসেবে সহজে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জনকল্যাণে নিজেকে নিবেদন করার ক্ষেত্রে ইসরাফিল খসরু অবশ্যই অপরাজিত থাকবে– এই আশাবাদটুকু ব্যক্ত করে মহান আল্লাহর দরবারে তার সার্বিক মঙ্গল প্রার্থনা করছি।
লেখক : শিক্ষাবিদ, সমাজ–অপরাধবিজ্ঞানী