গভীর সাগর থেকে ইলিশ ধরে ঘাটে ফিরতে শুরু করেছেন কক্সবাজারের জেলেরা। গতকাল মঙ্গলবার প্রথমদিন শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাটে এসেছে প্রায় ১৯ মেট্রিক টন ইলিশ। এর বেশিরভাগ আকারে ছোট। এর মধ্যে এক টন ইলিশ স্থানীয় বাজারে এবং বাকী ১৮ মে. টন ইলিশ রাজধানী ঢাকায় পাঠানো হয়। ইলিশের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে সাগরে মাছ ধরার উপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত শুক্রবার থেকে ফের মাছ ধরতে সাগরে রওয়ানা দেয় জেলেরা।
ফিশারীঘাটস্থ মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, নিষেধাজ্ঞার কারণে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় প্রায় ২৭ দিন পর বাজারে এসেছে সাগরের ইলিশ। গতকাল মঙ্গলবার ফিশারীঘাটে ৩০/৩৫টি বোট ফিরলেও সর্বোচ্চ ইলিশ নিয়ে ফিরেছে মহেশখালী গোরকঘাটার শাহাদাত কোম্পানির ট্রলার। তার ট্রলারে ছিল প্রায় ১০ হাজার ইলিশ। এছাড়া মহেশখালীর আলতাজ কোম্পানির মালিকানাধীন ট্রলারে ছিল প্রায় ৮ হাজার ইলিশ, একই এলাকার মোহাম্মদ কোম্পানির ট্রলারে ছিল প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ইলিশ এবং মো. ছিদ্দিক রিমন মেম্বারের মালিকানাধীন ট্রলারে ছিল প্রায় ৬ হাজার ইলিশ। বাকী ট্রলারগুলোতে বেশি ইলিশ পাওয়া যায়নি বলে জানান কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির সভাপতি জানে আলম পুতু।
তিনি জানান, মঙ্গলবার ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফেরা ট্রলারগুলো সোনার চর ও মহীপুর এলাকার গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিল, যেখানে সাগরের গভীরতা প্রায় ১১ বাম বা ১১ মিটার। জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ বলেন, কক্সবাজার শহরের জেলেরা এখনও ইলিশ ধরে ঘাটে ফেরেনি। মহেশখালীর কিছু বোট ঘাটে ফিরলেও কয়েকটি বোট ছাড়া বাকী বোট গুলোতে তেমন ইলিশ দেখা যায়নি। তবে সাগরের ইলিশের পাওয়া সাপেক্ষে শহরের বোটগুলো আজকালের মধ্যে ফিরতে শুরু করতে বলে মনে করেন তিনি। সরেজমিন শহরের ফিশারীঘাটস্থ প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র গিয়ে দেখা যায়, সাগর থেকে আসা বেশিরভাগ ইলিশ আকারে ছোট। গড় ওজন ৫শ গ্রামের কম। তবে কিছু ইলিশ সর্বোচ্চ ৮শ’ গ্রামের কাছাকাছি ছিল বলে জানান মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
মৎস্য ব্যবসায়ী আবুল কাশেম জানান, মঙ্গলবার শহরের ফিশারীঘাটে ৫শ’ গ্রাম ওজনের এক কেজি ইলিশ ৬শ’ থেকে সাড়ে ৬শ’ টাকা দরে, ৬শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজি ৭শ’ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকা দরে, ৭শ’ গ্রামের ইলিশ ৮শ’ থেকে সাড়ে ৮শ’ টাকা দরে এবং ৮শ’ গ্রামের কাছাকাছি ওজনের ইলিশ প্রায় এক হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
ট্রলার মালিকরা জানান, কঙবাজার বঙ্গোপসাগরে বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। এরমধ্যে ইলিশ জাল বা ভাসা জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। এছাড়া ফইল্যা জালের বোটগুলো ৫/৬ দিনের রসদ নিয়ে মাছ ধরতে যায়। তবে চাউপ্পা জাল, ডোবা জাল, চামিলা জাল ও চোখফোলা জালের বোটগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে যায় এবং মাছ ধরে দিনে দিনেই ফিরে আসে। এই ধরনের জালের বোটগুলো সাগর উপকূলে ছোট প্রজাতির মাছ ধরে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়। বোটগুলোতে একেক মৌসুমে একেক প্রজাতির মাছ বেশি ধরা পড়ে। আর এখন ধরা পড়ছে পোয়া, ফাইস্যা, চোখফোলা, অলুয়া, কামিলা ও কৈ পুটি, হুন্দুরা বা সামুদ্রিক বাইলা ও রূপচান্দা মাছ। এছাড়া ককশিটের বোটগুলোও একই ধরনের জাল নিয়ে মাছ ধরতে যায়। এই ইঞ্জিনবিহীন বোটগুলো প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার পর্যন্ত সাগরে আসা–যাওয়া করে।
জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির মতে, কঙবাজারে মাছ ধরার ছোট বড় ৭ সহস্রাধিক যান্ত্রিক বোট রয়েছে। বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কঙবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। এসব বোটে প্রায় ১ লাখ জেলে শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে।