ইরানের সমর্থনে তেহরান-বাগদাদ বৈরুতের রাস্তায় লাখো মানুষ

ইরানের সঙ্গে ইউরোপের বৈঠক শুরু জেনেভায় ইরানের হামলায় নিহত এক ও আহত ২০ ইসরায়েলি

| শনিবার , ২১ জুন, ২০২৫ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে ইরানের রাজধানী তেহরান, ইরাকের বাগদাদ ও লেবাননের বৈরুতে। গতকাল শুক্রবার জুমার পর বিক্ষোভমিছিল বের করেন লাখো মানুষ। ব্যানারপতাকা হাতে নিয়ে তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে এর প্রতিবাদও জানান বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভের ছবিগুলোতে দেখা গেছে, জুমার নামাজের পর তেহরানের রাস্তায় অসংখ্য মানুষ নেমে আসেন। ইসরায়েলের হামলায় নিহত ইরানি কমান্ডারদের ছবি নিয়ে তারা মিছিল করেন। অনেকে ইরান, ফিলিস্তিন ও হিজবুল্লাহর পতাকা তুলে ধরেন। বিক্ষোভে ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তারাও অংশ নেন। তেহরানে মিছিলে এক বিক্ষোভকারী তার পোস্টারে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির জন্য নিজের আত্মত্যাগের বার্তা তুলে ধরেন। দেশজুড়ে ছোটবড় অন্য শহরগুলোতেও বাসিন্দারা ইসরায়েলের ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। লোকজন ইরান, ফিলিস্তিনি ও লেবাননের হিজবুল্লাহর পতাকা ওড়ান। আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ছবি বিক্ষোভে তুলে ধরেন ইরানিরা। ইসরায়েলের ব্যাপক হামলার মধ্যে অনেকে তেহরান ছেড়ে চলে গেছেন।

তেহরানে জুমার নামাজ ও পরে বিক্ষোভের কিছু ছবি এক্সে পোস্ট করেছে ইরানের জামারান নিউজ। সেখানে দেখা গেছে, দেশটির প্রধান বিচারপতি গোলামহোসেইন মোহসেনিএজে’ই, প্রাক্তন আইআরজিসি কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জাফারি এবং বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও সংসদের ডেপুটি স্পিকারও জুমার জামাত ও বিক্ষোভে অংশ নেন। খবর বিডিনিউজের।

জুমার দিনে ইরাকের বাগদাদের সদর এলাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন হাজারো মানুষ। বাগদাদের উপকণ্ঠের সদরকে ‘বিপ্লবের নগরীও’ বলা হয়। সেখানে দশ লাখের বেশি মানুষের বাস, যাদের বেশিরভাগই শিয়া মুসলিম। শিয়া নেতা মুকতাদা আলসদর ইরানের বর্তমান শাসকদের ঘনিষ্ঠ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচক।

ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে ইরানের সমর্থনে লেবাননের বৈরুতের দক্ষিণাংশেও স্থানীয় বাসিন্দারা মিছিল করেছেন। ইরানের পতাকা হাতে নারীপুরুষকে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার ছবি, ব্যানারপোস্টার হাতে তারা মিছিলে যোগ দেন। এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, শত্রুর আগ্রাসন নিঃশর্তভাবে বন্ধ এবং ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অভিযান চিরতরে অবসানই আরোপিত এই যুদ্ধ বন্ধের একমাত্র পথ। আর লেবাননের হিজবুল্লাকে ইঙ্গিত করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, যারা ইসরায়েলকে হুমকি দেয়, সেই সন্ত্রাসীদের প্রতি আমাদের ধৈর্যের সীমা পার হয়ে গেছে।

জেনেভায় কূটনৈতিক আলোচনা : ইরানইসরায়েল সংঘাতের মধ্যেই সুইজারল্যান্ডের জেনিভায় শুরু হয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের কূটনৈতিক আলোচনা। তবে আলোচনার টেবিলে শান্তির আহ্বান থাকলেও মাঠে লড়াই থেমে নেই। এরই মধ্যে আলোচনা নিয়ে কে কী বলেছেন, তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ইসরায়েলইরান সংঘাত নিরসনে একটি কূটনৈতিক প্রস্তাব দেওয়া হবে ইরানকে। তবে তার জন্য শর্ত হচ্ছেইরানকে আগে আলোচনায় সদিচ্ছা দেখাতে হবে। চারটি মূল বিষয় প্রস্তাবে থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি মনে করছেন, কূটনৈতিক সমাধানের জন্য ‘এই দুই সপ্তাহই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়’। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দুই সপ্তাহ সময় ঘোষণার পর ল্যামি বলেন, এখনও একটি পথ খোলা আছেএখনই আলোচনা ফলপ্রসূ করার সময়।

জেনেভায় ইসরায়েলের জাতিসংঘ দূত ড্যানিয়েল মেরন বলেছেন, ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যেন ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি গুটিয়ে নেওয়ার জন্য দাবি তোলেন। তার মতে, কেবল যুদ্ধবিরতির আহ্বান যথেষ্ট নয়; ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধের বিষয়েও কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। অন্যদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ইসরায়েলি হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনও আলোচনা হবে না।

জাতিসংঘ বলছে ‘আস্থা সংকট’: জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইরানইসরায়েল সংঘাত নিয়ে ফের সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, এই সংঘাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে গোটা অঞ্চলই ধ্বংস হয়ে যাবে। গুতেরেসের মতে, এই সংঘাতের মূলে আছে ‘পারমাণবিক প্রশ্ন’। তিনি বলেন, ইরান বহুবার বলে এসেছে তারা পারমাণবিক অস্ত্র চায় না। কিন্তু এখানে যে এক আস্থা সংকট আছে সেটি আমাদেরকে স্বীকার করে নিতে হবে। অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করে ‘গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায়’ ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গুতেরেস।

ইরান ও ইসরায়েলের সংঘাতেদর সমাধান খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। মস্কো দুই পক্ষের সঙ্গেই কথা বলছে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে এক বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের কিছু প্রস্তাব আছে, যেখানে রাশিয়া অংশ নিতে পারে। তবে এটি যে কোনওভাবেই মধ্যস্থতা নয় সে বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন পুতিন। তিনি বলেন, আমরা মধ্যস্থতা চাইছি না। আমরা কেবল ধারণা তুলে ধরছি। পুতিনের ভাষ্য, ইরান ও ইসরায়েল উভয়ের পক্ষেই গ্রহণযোগ্য হবে এমন একটি সমাধান নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে।

শুক্রবার সারাদিন যা ঘটল : ইরানের সবশেষ মিসাইল হামলায় ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে বহু মানুষ আহত হওয়ার খবর জানিয়েছে দেশটির জরুরি সেবা বিভাগ। বিস্ফোরণে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। যার মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া কারমিয়েল এলাকার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৫১ বছর বয়সী এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।

ইরানের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে যুক্তরাজ্য জানিয়েছে যে, তারা তেহরানে অবস্থিত তাদের দূতাবাস থেকে কর্মীদের সরিয়ে নিচ্ছে। ইসরায়েলে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত হওয়ায় বেশ কয়েকটি এলাকায় সতর্কতা সাইরেন বাজিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত তিন তরুণের বাড়িতে শোকের মাতম
পরবর্তী নিবন্ধফৌজদারহাটে তেলবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত