ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতের মধ্যে ইরানের তেহরানে থাকা বাংলাদেশিদের প্রথম দলকে আগামী সপ্তাহে ফেরানোর পরিকল্পনা জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র, জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক শাহ আসিফ রহমান গতকাল রোববার এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য দেন।
তিনি বলেন, ইরানে উদ্ভূত যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেখানে বসবাসরত এবং দেশে ফিরতে ইচ্ছুক সকল বাংলাদেশি নাগরিকের দেশে প্রত্যাবর্তনের প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া বাংলাদেশ সরকার শুরু করেছে। ইরানের পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সহযোগিতায় এই প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হবে। মন্ত্রণালয় চেষ্টা করছে যে, প্রত্যাবাসনে আগ্রহী প্রথম দলটি যাতে আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশে পৌঁছায়। খবর বিডিনিউজের।
গত ১৩ জুন ভোররাতে ইরানের বিভিন্ন সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। পরে ইরানও পাল্টা হামলা চালায়। এর মধ্যে ইরানের একটি নৌঘাঁটির কাছে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলায় বাংলাদেশি কূটনরীতিকদের ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে আতঙ্ক আরো বাড়ে। দুই দেশের হামলা পাল্টা হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়ায় নতুন মাত্রা পেয়েছে এই সংঘাত।
ইসরায়েল হামলা শুরুর পরপরই সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ফেরানোর উদ্যোগ নেয় সরকার; তাদেরকে তেহরানের বাইরে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। গত মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে তখনকার ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী জানিয়েছিলেন, ইরানে থাকা প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশির মধ্যে ৪০০ জনের মত তেহরানে রয়েছেন। আমরা তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন, যারা তেহরানে আছে। তারা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে আছে। তাদের এবং আমাদের দূতাবাসে যারা কাজ করছেন, তাদের জন্য এখন কাজ করছি, যাতে এরা নিরাপদে থাকতে পারে।
তেহরানে থাকা ব্যক্তিদের ফেরানোর প্রক্রিয়ার কথা তুলে ধরে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেছিলেন, তেহরানে থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে ১০০ জন দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হটলাইনে যোগাযোগ করে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই ১০০ জনের সঙ্গে দূতাবাসের ৪০ জন কর্মীকে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার কথাও তিনি বলেছিলেন।
তিনি জানিয়েছিলেন, ইরানে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় বাংলাদেশিদের প্রথমে স্থলপথে পাকিস্তান কিংবা তুরস্কে নিতে হবে। এরপর সেখান থেকে ফিরবেন তারা। প্রথম দফায় প্রায় একশজন বাংলাদেশি ফিরতে পারেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। পাকিস্তান হয়ে তাদের ফেরানো তুলনামূলকভাবে সহজ হবে বলে তাদের ধারণা।
ফিরতে ইচ্ছুক বাকিদেরও পর্যায়ক্রমে দেশে আনা হবে জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গতকাল রোববার বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে ইরানে বসবাসরত সকল বাংলাদেশি নাগরিক এবং তাদের স্বজনদের জরুরি যোগাযোগের জন্য হটলাইন চালু করেছে সরকার। পর্যায়ক্রমে অন্যদেরও বাংলাদেশে ফেরত আসার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে মর্মে আশা করা যাচ্ছে। প্রত্যাবাসনের বিষয়ে এ মন্ত্রণালয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণলায়ের সাথে যোগাযোগ রাখছে।
ফিরতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি বা তাদের পরিবারের সদস্যদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা তেহরানে দূতাবাসের প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠানোর আহ্বান জানান মুখপাত্র আসিফ রহমান। তিনি বলেন, দেশে প্রত্যাবর্তনে আগ্রহী সকল বাংলাদেশি নাগরিককে তাদের নাম–ঠিকানা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যসহ তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। এ বিষয়ে তারা এবং বাংলাদেশে তাদের স্বজনরা প্রয়োজনে দূতাবাসের ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিম্নোক্ত হটলাইনগুলোতে (ওয়াটসঅ্যাপ–সহ) সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।
বাংলাদেশ দূতাবাস, তেহরান–হটলাইন: +৯৮৯৯০৮৫৭৭৩৬৮, +৯৮৯১২২০৬৫৭৪৫। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা–হটলাইন: +৮৮০১৭১২০১২৮৪৭।