ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে ছাত্র–শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ।
তবে এ বহিষ্কারাদেশে খুশি হতে পারছেন না নির্যাতনের শিকার ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। তিনি বলছেন, বহিষ্কারাদেশের মেয়াদ শেষ হতে বেশি দিন বাকি নেই। এ অবস্থায় দোষী শিক্ষার্থীদের আবারও ক্যাম্পাসে মুখোমুখি হতে হবে এটা ভাবতেই তিনি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন, নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। খবর বিডিনিউজের।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাচ্ছুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম এবং ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মী। এদের মধ্যে সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের প্রাক্তন সহসভাপতি, তাবাসসুম দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল শাখার সাবেক সহসভাপতি ইসলাম এবং বাকি তিনজন সাধারণ কর্মী ছিলেন।
এর আগে গত ১২ জুন ছাত্র–শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে মৌখিক বক্তব্য দিতে ক্যাম্পাসে যান অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রী। কমিটির কাছে তারা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন। কারণ দর্শানো নোটিশের লিখিত জবাব দেওয়ার পরও কোনো বক্তব্য থাকলে তা জানতে শিক্ষার্থীদের এই বক্তব্য গ্রহণ করে ইবি কর্তৃপক্ষ। সেসময় ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুনেরও সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। সেদিন উপাচার্য, উপ–উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টাসহ ইবি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এই সাজায় ন্যায় বিচার পাননি বলে জানিয়েছেন সানজিদা চৌধুরী অন্তরা। তবে ছাত্রত্ব বাতিলের চিঠি হাতে পাওয়ার আগে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ডেকে রাত ১১টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহ–সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নেতৃত্বে আরও কয়েকজন সহযোগীর দ্বারা নবীন ওই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে মারধর ও শারীরিকভাবে নির্যাতন এবং নির্যাতনের ঘটনা ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরদিন সকালে ভয়ে ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে বাড়ি চলে যান ওই ছাত্রী। পরে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর ঘটনার বিবরণ দিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।
এ ঘটনায় আইন বিভাগের অধ্যাপক রেবা মন্ডলকে আহ্বায়ক করে ১৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপাচার্য। এছাড়া হল প্রশাসন, শাখা ছাত্রলীগ এবং হাইকোর্টের নির্দেশেও আলাদা একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত শেষে সব কমিটিই ঘটনার সত্যতা খুঁজে পায়। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় হাইকোর্টের নির্দেশে অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার করে। একই সঙ্গে হল থেকে এবং সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগও দল থেকে সানজিদাকে বহিষ্কার করে।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ভুক্তভোগী ছাত্রী ফুলপরী খাতুন বলেন, আমি কোনোভাবেই এই বিচারে সন্তুষ্ট নই; কারণ একাধিক তদন্ত কমিটির তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও এখনও পর্যন্ত অন্তরাসহ সহযোগীরা আমাকে নির্যাতনের কথা স্বীকারই করছে না। এখনও পর্যন্ত তারা বিভিন্নভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমার সম্পর্কে আজেবাজে কথা ছড়াচ্ছে, নানাভাবে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। এক বছরের বহিষ্কারাদেশ তো প্রায় শেষ হওয়ার পথে। ওরা যখন আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসবে, নিশ্চয়ই আমার ক্ষতি করতে চাইবে। সে কথা ভাবতেই আমি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছি।
দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ জানান, ছাত্র–শৃঙ্খলা আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী দোষী প্রমাণিত পাঁচ শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তারা কোনো ক্লাস–পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না।