ইন্টার্ন ডাক্তারদের বিরুদ্ধে নার্সদের মারধরের অভিযোগ, বিক্ষোভ

চমেক হাসপাতাল ।। চার ঘন্টা সেবা কার্যক্রম ব্যাহত

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৮ জুন, ২০২২ at ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনে বিক্ষোভ করেছেন নার্সরা। গতকাল বিকেলে হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে (অর্থো সার্জারি) মারধরের এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে হাসপাতালের গোল চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন নার্সরা। বিক্ষোভে যোগ দিতে দায়িত্বরত নার্সরাও ওয়ার্ড থেকে গোল চত্বরে নেমে আসেন। এ সময় বিভিন্ন ওয়ার্ডে সেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়।

আন্দোলনরত নার্সদের দাবি, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এক রোগীকে ভর্তি করাতে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে (অর্থো সার্জারি) আসেন মেডিকেলের ৫ম বর্ষের একজন শিক্ষার্থী। এ সময় নার্সিং ডেস্কে থাকা আকলিমা খাতুন ফাইলে লিপিবদ্ধ করতে রোগীর নাম ও মোবাইল নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য জানতে চান। রোগী জবাব দিলেও কথা বুঝতে না পেরে দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করায় সাথে থাকা ওই শিক্ষার্থী (ইন্টার্ন ডাক্তার) নার্স আকলিমা খাতুনের উপর ক্ষিপ্ত হন। তাকে গালমন্দ করেন। এ সময় পাশে থাকা অপর নার্স আব্দুল্লাহ হিল কাফি এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করেন ওই ইন্টার্ন ডাক্তার। মারধরের এক পর্যায়ে ওই ইন্টার্ন ডাক্তার আকলিমার গায়েও হাত তুলেন বলে অভিযোগ নার্সদের। আকলিমা অন্তসত্ত্বা বলে জানান তার সহকর্মীরা। নার্সদের অভিযোগ, এ ঘটনার পর ওই ইন্টার্ন ডাক্তার ফোন করে আরো বেশ কয়েকজনকে ওয়ার্ডে নিয়ে আসেন। তারা পরে নার্সদের পোশাক পরিহিত দেখলেই তাদের উপর চড়াও হয়েছেন। মারধর করেছেন। বিষয়টি ফোনে জানতে পেরে উপ-পরিচালক ও এক সহকারী পরিচালককে ঘটনাস্থলে পাঠান হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় পরে হাসপাতাল পরিচালক নিজেই হস্তক্ষেপ করেন। এর আগেই ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে হাসপাতালের গোল চত্বরে জড়ো হয়ে নার্সরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা দোষীদের বিচার দাবি করেন।

এ ঘটনায় সন্ধ্যা ৭টার দিকে নার্স এসোসিয়েশনের নের্তৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে বসেন চমেক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বৈঠক চলাকালীনও নার্সরা বিক্ষোভ চালিয়ে যান। তিন ঘণ্টারও বেশি সময় বিক্ষোভের পর রাত দশটার দিকে নার্সরা কাজে ফিরে যান। ঘটনা তদন্ত পূর্বক দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষের ‘আশ্বাসের’ প্রেক্ষিতে তারা বিক্ষোভ থেকে সরে আসেন বলে জানান নার্সেস এসোসিয়েশনের নের্তৃবৃন্দ।

রাত সাড়ে দশটার দিকে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান ও চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার।

এ প্রসঙ্গে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, আমরা একটি দুর্যোগময় পরিস্থিতি অতিক্রম করছি। এর মাঝে অপ্রীতিকর একটি ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আমরা খুবই বিব্রত। এ ধরণের ঘটনা স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাস্বরুপ। পুনরায় যাতে এ ধরণের ঘটনা না ঘটে আমরা সতর্ক থাকবো। হাসপাতাল পরিচালক বলেন, আমরা নার্সদের সাথে আলোচনায় বসেছি। তারা যদিও দাবি করেছে ইন্টার্নি ডাক্তাররা মারধর করেছে। কিন্তু তারা কারও পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি। অবশ্য ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে পরিচয় শনাক্তে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবো। কমিটি দায়ীদের শনাক্ত করবে। শনাক্তের পর তার ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা নেবো বলে নার্সদের আশ্বস্ত করেছি। আমাদের আশ্বাসে শান্ত হয়েছে এবং কাজে ফিরেছে।
আর চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার বলেন, ঘটনাটি আমরা সিরিয়াসলি নিয়েছি। মারধরে যারা জড়িত তারা ইন্টার্ন ডাক্তার বলে নার্সরা দাবি করেছে। কিন্তু তারা কারও নাম-পরিচয় নিশ্চিত করতে পারছেনা। ঘটনায় জড়িতরা সত্যিকার অর্থে স্টুডেন্ট বা ইন্টার্ন ডাক্তার কিনা তা তদন্তে উঠে আসবে। আর আমাদের স্টুডেন্ট বা ইন্টার্ন হিসেবে শনাক্ত হলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।

এদিকে, নার্সদের সাথে বৈঠক চলাকালীন রাত সাড়ে ৯টার দিকে কয়েকজনকে সাথে নিয়ে হাসপাতাল পরিচালকের কার্যালয়ে আসেন ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একটি গ্রুপের নের্তৃত্বে থাকা ডা. তানভীর ও ডা. খোরশেদ। তবে তাদের বৈঠকে যোগ দিতে দেখা যায়নি। তারা হাসপাতাল পরিচালকের কক্ষে বসে ছিলেন। নার্সদের বিক্ষোভকালীন ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি কেয়ারে নার্সদের দায়িত্ব পালনে দেখা গেছে। কিন্তু অন্যান্য অধিকাংশ ওয়ার্ডে নার্সদের দেখা যায়নি। দীর্ঘ প্রায় চার ঘন্টার মতো ওয়ার্ডগুলোতে নার্সরা সেবা কার্যক্রম থেকে বিরত ছিলেন। এতে রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

প্রসঙ্গত, শনিবার সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত ও দগ্ধদের চিকিৎসা সেবায় গত কয়েকদিন ধরে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন চমেক হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। হাসপাতাল প্রশাসনের কর্মকর্তারা তো আছেনই। তাদের অনেকেই নির্ঘুম টানা ৪৮ ঘণ্টাও দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের ক্লান্তিহীন ও আন্তরিক এ ভূমিকায় কেবল চট্টগ্রাম নয়, সারাদেশের মানুষ প্রশংসার পাশাপাশি স্যালুট জানিয়েছেন। যা বড় ধরণের এক অর্জন বলে মনে করেন চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা। তবে ইন্টার্ন ডাক্তার ও নার্সদের গতকালের এ ঘটনায় সে অর্জন অনেকটাই ফিকে হয়েছে জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই কয়দিনে হাসপাতালের যে সুনাম-স্বীকৃতি অর্জন হয়েছে, মাত্র গুটি কয়েক ইন্টার্ন ডাক্তারদের কারণে সে অর্জনে কালিমা লেগেছে। তাদের মারমারির কারণেই এমন দুর্যোগময় পরিস্থিতে প্রায় চার ঘণ্টা সেবা কার্যক্রম থেকে বিরত ছিল নার্সরা। এটা এ সময়ে কোন ভাবেই মানা যায়না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচমেক হাসপাতালে জোনায়েদ সাকীর ওপর হামলা
পরবর্তী নিবন্ধসিএন্ডএফের কর্মবিরতিতে দিনভর স্থবির কাস্টমস