ইতিহাসের নতুন নাম চবি লেখক পরিষদ

বিপ্লব বড়ুয়া | মঙ্গলবার , ২৫ নভেম্বর, ২০২৫ at ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ

কোন কোন বিষয় কখন যে ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠে বলা যায় না। কর্মই মানুষকে ইতিহাসের অংশ করে তুলে। হ্যাঁ, যে কথা বলছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লেখক সম্মেলনকে ঘিরে কয়েকদিন বেশ ঘোরের মধ্যে কাটিয়েছিলাম। গুনতে গুনতেই যেন আকাঙ্ক্ষিত দিনটি নিমিষে ফুরিয়ে গেলো। গত ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৬০ বছর পূর্ণ হলো এটি যেমন একটি জনপদের জন্য গৌরবের ইতিহাস, তেমনি বিগত ৬০ বছর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক, সাবেক ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যাঁরা লেখালেখি জগতের সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত রেখেছেন তাদেরকে নিয়েই আত্মপ্রকাশ হলো ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লেখক পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন। আমি মনে করি এটিও একদিন বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠবে। যতটুকু জানা যায়, এরকম সংগঠনের আত্মপ্রকাশ বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটিই প্রথম সূচনা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রয়াত অধ্যাপক, গবেষক, বাংলা একাডেমি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মাহবুবুল হক এমন একটি সংগঠনের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তাঁর মৃত্যুর পরে হলেও বিশিষ্ট সাংবাদিক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক রাশেদ রউফ’র হাত ধরে সেই সংগঠনের এর সফল আত্মপ্রকাশ ঘটলো। কবি ও শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফ তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেছেনএই স্বপ্নটি প্রথম দেখেছিলেন আমাদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ভাষাবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মাহবুবুল হক স্যার। তিনি যদি দেখে যেতে পারতেন তাহলে অনেক বেশি খুশি হতেন। গত ২১ ও ২২ নভেম্বর দুই দিনব্যাপী এক জমকালো উৎসবের মধ্যে দিয়ে এ লেখক সম্মেলনের সূচনা হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে এ জন্য আমি নিজেও অত্যন্ত গর্বিত ও আনন্দিত। আমার মতো এই দুইদিনব্যাপী সম্মেলনে লেখক পরিষদের প্রায় তিনশতাধিক সদস্য এতে অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়া দেশের শীর্ষস্থানীয় কবি, লেখক, গল্পকার, সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক এবং অধ্যাপকবৃন্দ লেখালেখি বিষয়ে তাঁদের সারগর্ভ বক্তব্য তুলে ধরেছেন। আবার অনেকে স্বরচিত লেখা পাঠ করেছেন। সম্মেলনে লেখালেখি বিষয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এতে প্রায় একশতের কাছাকাছি নবীনপ্রবীণ লেখক অংগ্রহণ করেন। এছাড়া সেমিনার ও লেখক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সেমিনার ‘অর্ধ শতকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্যচর্চা ও সাহিত্যগবেষণা’ বিষয়ের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেনপ্রফেসর ড. নুরুল আমিন। সম্মেলনে ইংরেজী সাহিত্যের শিক্ষক, গবেষক প্রফেসর ড. জি এইচ হাবীব বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করায় সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। পরিষদের পক্ষ থেকে প্রত্যেক সদস্যদেরকে একটি থলে ও একটি করে বই স্মারক হিসেবে উপহার দেওয়া হয়। যারা লেখালেখি জগতের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত তাঁদের জন্য এরকম একটি সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা আমি নিজেও অনুভব করছিলাম এবং শেষ পর্যন্ত যুক্ত হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।

বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহম্মদ ইয়াহ্‌ইয়া আখতার। তিনি বলেনলেখালেখি বিষয় মানুষের অনন্য সৃষ্টিকর্ম যা সকলের দ্বারা হয়ে ওঠে না। এই সৃষ্টিকর্মের কারণে লেখকের কোনদিন মৃত্যু হয় না। একজন লেখকের কাছে বড় সম্পদ হচ্ছে তার রেখে যাওয়া লেখা। ইতিহাসকে সঠিকভাবে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে এ জাতীয় সংগঠন সমাজসংস্কৃতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাগ্রসর সমাজ জীবনে সাহিত্য হচ্ছে একটি জাতিগোষ্ঠির প্রধান মাধ্যম। সাহিত্য জগতকে বলা হয় মানব জীবনের প্রতিচ্ছবি। সে ক্ষেত্রে লেখকগবেষকদের দায়দায়িত্ব অন্যান্য শ্রেণি পেশার মানুষের তুলনায় অত্যন্ত বেশি। একমাত্র লেখকসাহিত্যিকরাই পারেন সমাজজাতিকে একটি সমৃদ্ধতর ইতিহাস উপহার দিতে। ইতিহাস হতে হবে বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ, লোভহীন ও সংশয়মুক্ত। কারণ লেখকদের হাত ধরে প্রকৃত সত্য উন্মোচিত হতে হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লেখক পরিষদ সে ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। পুরো আয়োজনটি ছিল অভিনব ও মনমুগ্ধকর। লেখক: প্রাবন্ধিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রকৃতির কথা
পরবর্তী নিবন্ধভেজাল রোধে সরকারকে আরো অনেক বেশি সচেষ্ট হতে হবে