লালদিঘি ময়দান আমাদের জনসভার ময়দান। ব্রিটিশ আমলের কথা বলতে পারবো না। তখন তো মিটিং হতো গান্ধী ময়দানে (এখন যেখানে জেমিসন ম্যাটারনিটি হাসপাতাল আছে, সেখানে তখন খোলা মাঠ ছিলো। সেখানে ছোট একটি হলও ছিলো, যাকে বলা হতো মুসলিম হল) ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় গান্ধীজী এসে জনসভা করে যাওয়ার পর থেকে সে স্থানের নাম হয়ে যায় গান্ধী ময়দান, প্যারেড ময়দানে। পাকিস্তান হতে না হতেই মুসলিম লীগ নেতারা পূর্বোক্ত স্থান হতে মুসলিম হল সরিয়ে এনে চিকদাইরের জমিদার রাজকুমার ঘোষের মালিকানাধীন হ্যান্ডস পার্ক দখল (অন্য কোন ব্যবস্থায় তারা জায়গার দখল পেয়েছিলেন কিনা কিংবা রাজকুমার বাবুর জায়গা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলো কিনা আমি বলতে পারবো না) করে সেখানে নতুন মুসলিম হল নির্মাণ করেন। গান্ধী ময়দানে জেমিসন মাতৃসদন স্থাপিত হলে জনসভার স্থান হিসেবে লালদিঘি ময়দান গড়ে উঠতে থাকে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোটা সময় লালদিঘি ময়দান জনসভার স্থান হিসেবে গমগম করতো। সোহরাওয়ার্দী, ভাসানী, বঙ্গবন্ধু থেকে শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অনেক বড় বড় নেতাও এখানে এসে বক্তৃতা দিয়ে গেছেন। ছাত্রনেতারাও এখানেই বক্তৃতা করতেন।
বহু আন্দোলন-সংগ্রাম, বহু ইতিহাস যেখানে রচিত হয়েছে, ছাত্র-জনতার রক্তে যে মাঠ রক্তাক্ত হয়েছে, সেই মাঠ মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা অধিদপ্তর নাকি আধুনিকায়নের নামে মাঠের অস্তিত্ব সম্পূর্ণ লুপ্ত করে দিয়ে পার্ক করে ফেলেছেন। আমরা পার্কের বিরোধী নই। কিন্তু পার্ক তো একটা লালদিঘির চারপাশ ঘিরে আছে। যেটা নওফেল সাহেবের পিতা আমাদের প্রিয় নেতা মহিউদ্দিন ভাই তৈরি করেছেন। তাই লালদিঘির মাঠকে পার্কে রূপান্তরিত করার কথা শুনে আমরা বিচলিত হয়ে পড়েছি। লালদিঘির ময়দানকে ৬ দফার আঁতুরঘর হিসেবে সংরক্ষণের জন্য প্রস্তাব দিয়ে আমি বিভিন্ন সময়ে লেখা প্রকাশ করেছি। মহিউদ্দিন ভাই মেয়র থাকার সময়ে তাঁকেও বলেছি। শিক্ষা অধিদপ্তর যখন সংস্কারের জন্য মাঠ হাতে নেয়, তখন আমরা ভেবেছিলাম, ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে লালদিঘির ময়দানের আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। ১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা ঘোষণার জনসভায় আদলে একটি ম্যুারালও উত্তর পাশে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরে পুরো মাঠ যেটা জনসভার দর্শক-শ্রোতারা বসে নেতাদের বক্তৃতা শুনতেন, সেই স্থানে কৃত্রিম ঘাস লাগিয়ে পুরোটা পার্ক করে ফেলা হয়েছে, ঘাসের গালিচা সুন্দরই লাগছে, কিন্তু ইতিহাস হত্যা করে, ঐতিহ্যকে লুপ্ত করে কি আমরা সৌন্দর্য উপভোগ করবো? পার্ক করতে চাইলে মাঠের পশ্চিম পাশে যেখানে পেট্রোল পাম্প আছে, সেখানে করা যায়। সেই জায়গাটা আগে পার্ক ছিলো। তাকে বলা হতো ভিক্টোরিয়া পার্ক, সেখানে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার মর্মর মূর্তি ছিলো। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্রহত্যার সংবাদ শুনে বীর চট্টগ্রামের বিপ্লবী জনতা ঐ ভিক্টোরিয়া পার্কে চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করেছিলেন।
লালদিঘির ময়দান শুধু জনসভা নয়, আরো দুটি কারণে আমাদের প্রয়োজন। এক লালদিঘি মাঠ মুসলিম হাইস্কুলের মাঠ এবং স্কুলের ছাত্ররা এখানে খেলাধুলা করে। দুই প্রতি বছর বৈশাখ মাসে লালদিঘি মাঠে জব্বারের বলিখেলা ও বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। গোটা চট্টগ্রামের মানুষ বিশেষ করে গৃহিণীরা সারা বছর ধরে লালদিঘির মেলার দিকে তাকিয়ে থাকেন। গৃহস্থালীর নানা সামগ্রী মেলা থেকে কিনে সারা বছরের জন্য সঞ্চয় করেন। লালদিঘির মেলা বন্ধ হয়ে গেলে চট্টগ্রামের আর্থিক জীবনের ওপর বিরাট ধস নেমে আসবে।
অন্যদিকে ছাত্রদের খেলাধুলাও বন্ধ হয়ে যাবে। তাছাড়া এখানে মহিউদ্দিন ভাই স্বাধীনতার মেলা, বৃক্ষ মেলা ইত্যাদি আয়োজন করতেন। এখন সেসবও বন্ধ হয়ে যাবে। শিক্ষা অধিদপ্তর মাঠটা নিয়ে এমন তোঘলকি সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে মুসলিম হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ এবং মাঠ ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের মতামত নিতে পারতেন। মাঠের উত্তর পূর্ব কোণায় একটি জিমন্যাসিয়াম ছিলো, সেটাও ভেঙে ফোয়ারা করা হচ্ছে। ছাত্রদের শরীর চর্চার জন্য জিমন্যাসিয়ামটা খুবই প্রয়োজনীয় ছিলো। এখন শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তা ব্যক্তিদের মাথায় ফোয়ারার ভূত চাপায় জিমন্যাসিয়ামটাও অতীত হয়ে যাচ্ছে। ফোয়ারার জন্য উপযুক্ত স্থান ছিলো উত্তর পাশে লালদিঘি ঘিরে পার্ক আছে সেটি। আমরা চাই জিমন্যাসিয়ামটা পুনঃস্থাপন করা হোক।
লালদিঘির মাঠে রাজনীতির চর্চা বন্ধ করে দেয়ার উদ্যোগ একটি আত্মঘাতী পদক্ষেপ বলে আমি মনে করি। জিয়াউর রহমান এক সময় রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতিকে কঠিন করে তোলার উদ্দ্যেশ্যে ঢাকায় মুক্তমঞ্চ জাতীয় কিছু হাস্যকর কাজ করেছিলেন। শেষে দেখা গেল সেখানে গঞ্জিকাসেবী ও পাগলদের আড্ডা বসেছে। পল্টন মোড়ে এমনি একটা মুক্তমঞ্চ আজো আছে।
আমাদের শিক্ষা অধিদপ্তরের উদ্দেশ্য কি আমরা বুঝতে পারছি না। মাঠের আসল মালিক মুসলিম হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোন আলোচনা না করে তারা একটা কাজ করে ফেললেন। কার লাভে, কার স্বার্থে করলেন সেটা বুঝতে পারছি না। তারা কি এই সংস্কারকৃত মাঠ মুসলিম হাইস্কুলের কাছে বুঝিয়ে দেবেন? আইন অনুযায়ী সেটাই করতে হয়। করতে গেলে এই প্রশ্নটা উঠবে যে, আমরা তো এমন মাঠ চাইনি। মাঠে যেকোন সংস্কারই করুন না কেন, মাঠ রেখেই সেটা করতে হবে। মাঠই যদি না থাকলো, তাহলে সেটা কোন্ প্রয়োজন সিদ্ধ করবে। চট্টগ্রামের শতবর্ষের ঐতিহ্য জব্বারের বলীখেলা তো রাখতে হবে। বলীখেলা হলে আপনারা যে ঘাস লাগিয়েছেন, সেটা থাকবে না। জনসভা, খেলাধুলা ও অন্যান্য মেলা করতে দিতে হবে। সেগুলো করতে দেয়া হলে ঘাস থাকবে না। তাহলে কারো সঙ্গে কোনো কথা না বলে ঘাস লাগিয়ে দিলেন, যেন সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য কত বড় কাজ করে ফেললেন। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ইট বিছানো যেতো কিংবা মাঠ পাকা করা যেত, চার পাশের ভেতরের ও তিন পাশের বাইরের দেয়ালে ম্যুরাল করা যেত। বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা ঘোষণার ম্যুরালটা হুবহু ছবির মতো করা যেতো। যেমন ছবিতে আমরা দেখছি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এমএ আজিজ ও জহুর আহমদ চৌধুরী আছেন। চট্টগ্রামের ম্যুরালে তাঁরা থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। এরপর চারদিকের ম্যুরালে ৬৬ সালের ৭ জুনের হরতালের দৃশ্য আঁকা যেত, অথবা ৬৯ কালে (কোন সাল সেটা আমার এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না) ফ কা চৌধুরীকে তাঁর গণবিরোধী ভূমিকার জন্য ছাত্ররা ইট, পাটকেল মেরে ও ধূলাবালি ছড়িয়ে তাঁর লালদিঘির জনসভা পণ্ড করে দিয়েছিলো এবং পরদিন ইত্তেফাক উক্ত ঘটনার সংবাদের হেডিং দিয়েছিলো-‘শুক্কুইয্যা কডে’। এই ঘটনা দেয়ালে আঁকা যেত। কত সুন্দরই না হত। এই ঘটনার দু’জন নায়ক আছদগঞ্জের নূর মোহাম্মদ চৌধুরী ও এয়াকুবনগরের শাহ বদিউল আলম এখনো বেঁচে আছেন। তারিখটা তাঁরাই বলতে পারবেন। ’৭১ সালের ২৫ মার্চ লালদিঘির ময়দানে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী স্বাধীনতার মার্চ পাস্ট করে। মার্চ পাস্টের অধিনায়ক ছিলেন নুর মোহাম্মদ চৌধুরী ও শাহ বদিউল আলম। গার্ড অব অনার পরিদর্শন করেছিলেন জহুর আহমদ চৌধুরী, এম আর সিদ্দিকী, শেখ মোজাফফর আহমদ ও ডা. নুরুন্নাহার জহুর। স্বাধীনতার পূর্বদিনের এ ঘটনা তো ইতিহাস। এটাও ম্যুরালে আঁকা যেত। এমএ আজিজ যেদিন লালদিঘির ময়দানের নাম ‘মুজিব পার্ক’ ঘোষণা করেছিলেন, সেদিনের জনসভার ছবিটাও ম্যুরালের চমৎকার বিষয়বস্তু হতে পারে। আমি নিশ্চিত, নওফেল সাহেবকে এসব কথা কেউ বলেন নি। আমি সামান্য মানুষ, আমাকে একটু কনসাল্ট করলে তিনি মাঠ অবিকৃত রেখে সৌন্দর্যবর্ধনের আইডিয়া হয়তো পেতে পারতেন। লালদিঘির বলীখেলার দৃশ্যও ম্যুরালে স্থান পাবে না কেন? লালদিঘি ময়দানের কোথাও মুসলিম হাইস্কুলের নামগন্ধ নেই। মুসলিম হাইস্কুল যে এই মাঠের অধিকারী সেটি বুঝানোর জন্য মাঠের গেটে স্কুলের নামটা উল্লেখ করলেই হয়।
আমি বুঝতে পারি না কেন এরকম হয় চট্টগ্রামে। ডিসি হিলে কালচারাল কমপ্লেঙ নির্মাণের জন্য মোশাররফ ভাইকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তিনি প্রস্তাব মেনে আংশিক কাজ করেছেন। সাংস্কৃতিক কমপ্লেঙ আর হলো না। অনেক পরে প্রশাসনের সঙ্গে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্কে জড়িয়ে ডিসি হিলটা বোধ করি চিরদিনের জন্য অবরুদ্ধ হয়ে গেল।
লালদিঘি পার্ক প্রসঙ্গ শেষ করবো। তবে তার আগে লালদিঘির মাঠটা যে মুসলিম হাইস্কুলের, সেটা আরেকবার বলে নিতে চাই। লালদিঘি মাঠে সভা, মেলা করার জন্য মুসলিম হাইস্কুলকে দরখাস্ত দিয়ে অনুমতি নেয়ার রেওয়াজ ছিলো। মুসলিম হাইস্কুলকে লালদিঘি মাঠের কর্তৃত্ব দিয়েছিলেন একজন সাহেব জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেমিসন। তিনি ১৯৪০ সালে জেলা শাসক হয়ে আসার পর স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহমান মাঠের ব্যাপারে তাঁর মনোযোগ আকর্ষণ করলে তিনি মাঠটি স্কুলকে খেলাধুলার জন্য দেন। এরপর এই মাঠ দখল করার জন্য টেরিবাজারের কোন বণিক কল্যাণ সমিতি, কার মাইক্রো চালক সমিতি থেকে শুরু করে নানাজনে নানাভাবে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং প্রাক্তন ছাত্র সমিতির দৃঢ়তার কারণে সেসব প্রচেষ্টা বানচাল হয়ে যায়।
এত কথা বললাম কিন্তু লালদিঘির কথা ত বলা হলো না। লালদিঘির খননকাল এবং লালদিঘির ইতিহাস নিয়ে সংবাদপত্রে এত বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশিত হয় যে, পীড়িত না হয়ে পারি না। একটি পত্রিকায় লেখা হলো ১৯৩৯ সালে রায় বাহাদুর রাজকুমার ঘোষ লালদিঘি খনন করান। রিপোর্টার সাহেব এই তথ্য কোথায় পেলেন আমি জানি না। লালদিঘির উত্তর পাড়ে আগে সেখান দিয়ে ঢোকা যেত, সেখানে একটি গেইটের মতো ছিলো। তাতে লেখা ছিলো রাজকুমার ঘোষের অর্থ সাহায্যে এই স্কয়ার নির্মিত হলো। সম্ভবত সেটা পড়েই রিপোর্টার সাহেব সিদ্ধান্ত করেছেন ১৯৩৯ সালে লালদিঘি খনন করা হয়। পূর্ণচন্দ্র চৌধুরী, আবদুল হক চৌধুরী, ওহীদুল আলম সাহেবদের লেখা বইয়ে লালদিঘির উল্লেখ আছে। এ বইগুলি বাজারে পাওয়া যায়। পত্রিকার মালিকদের প্রতি আমি অনুরোধ করবো আপনারা উক্ত বইগুলো কিনে পত্রিকার লাইব্রেরিতে রাখুন। রিপোর্টার ও সহকারী সম্পাদক, যারা রিপোর্ট ও সম্পাদকীয় লেখেন, তারা প্রয়োজনে বইগুলি দেখে নিতে পারবেন।
এবার ইতিহাসটা বলি। ১৯১৬ সালে প্রকাশিত পূর্ণচন্দ্র চৌধুরীর গ্রন্থে তখন চট্টগ্রাম শহরের কোথায় কি ছিলো, কি পাওয়া যেত তার নাম তিনি উল্লেখ করেছেন। তাঁর বইতে দিঘির নাম লিখতে যেয়ে তিনি ৬টি দিঘির নাম লিখেছেন। এই দিঘিগুলি হলো-কমলদহ দিঘি (বর্তমানে আনিকা কমিউনিটি সেন্টার-কাতালগঞ্জ), আস্কর খাঁ দিঘি, বলু পোদ্দারের দিঘি (সম্ভবত বলুয়ার দিঘি), রাণীর দিঘি (এনায়েত বাজার-চাকমা রাজার রাণীর নামে ‘রাণীর দিঘি’ নামকরণ করা হয়েছে), শিবলাল বাবুর দিঘি ও লালদিঘি। তাহলে লালদিঘি যদি ১৯৩৯ সালে খনন করা হয়, তার নাম ১৯১৬ সালের বইতে কিভাবে উল্লিখিত হলো। এখানে আর একটি বড় দিঘির নাম পাচ্ছি না। সেটি হলো ভেলুয়ার দিঘি। আবদুল হক চৌধুরী পূর্ণচন্দ্র চৌধুরীর গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন-লালকুঠি ও লালঘরের সন্নিকটে প্রাচীনকালে একটি ছোট পুকুর ছিলো। ইংরেজ আমলের প্রথম দিকে সে পুকুরটিকে পরিবর্তন করে দিঘিতে রূপান্তরিত করা হয়। তখন লালকুঠি ও লালঘরের (জেলখানা) নিকটবর্তী দিঘিটি লালদিঘি নামে খ্যাত হয়।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মীর কাসিমের কাছ থেকে চট্টগ্রামের শাসনভার পায় ১৭৬১ সালে। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পর ১৮৫৮ সাল থেকে ভারতবর্ষের শাসনভার সরাসরি রাণী ভিক্টোরিয়া গ্রহণ করেন। কোম্পানি আমলে ধরলে লালদিঘির নির্মাণ কাল ধরতে হবে অষ্টাদশ শতাব্দিতে। রাণীর আমল থেকে ইংরেজ আমল ধরলে লালদিঘি ঊনিশ শতকে নির্মিত হয়।
ওহীদুল আমল সাহেব তাঁর ‘চট্টগ্রামের ইতিহাস’ গ্রন্থে লিখেছেন, বর্তমান পুলিশ অফিস (লালদিঘি মাঠের পূর্বপাশে) ব্রিটিশ আমলের প্রথমে উহা ছিল এন্তেকালী কাছারী, জমি সংক্রান্ত তহসিল অফিস। তার সংলগ্ন পূর্বদিকে জেলখানা, এই দুইটির দেওয়ালে লাল রক্ত দেওয়া হয়েছিলো বলে উহাকে লালকুঠি বলা হতো। জেলখানাকে লোকে ‘লালঘর’ বলতো, এই জন্যই সংলগ্ন দিঘিটাকেও লালদিঘি বলে অভিহিত করেছে।
গোরা সাহেবদের লালের প্রতি একটা দুর্বলতা আমি লক্ষ্য করেছি। শুধু চট্টগ্রাম নয়, বড় ছোট প্রায় শহরে একটি করে লালদিঘি আছে। কঙবাজারে দেখেছি, কলকাতায় দেখেছি, ঢাকায়ও দেখেছি। লালটা তাদের শাসনদণ্ড, আমাদের ভীতি প্রদর্শনের জন্য সম্ভবত ইংরেজরা ‘লাল’ চালু করেছিলো। লাল মানে ডেঞ্জার সিগন্যাল।
মুসলিম হাইস্কুল প্রাক্তন ছাত্র সমিতির কর্মকর্তা জনাব মোহাম্মদ আলীর অনুরোধ ও উপর্যুপরি তাগাদায় এই লেখাটা লিখলাম। সেজন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
লেখক : সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা ও সংস্কৃতি সংগঠক