কানাডা, যুক্তরাজ্য থেকে শুরু করে জার্মানি ও ফ্রান্সে কয়েক দশক ধরেই নারীদের নেতৃত্ব দিতে দেখা যাচ্ছে; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আড়াইশ বছরের ইতিহাসে ওভাল অফিসের নির্বাহী হিসেবে কোনো নারীকে দেখা যায়নি।
আফ্রিকান–আমেরিকানদের ওয়েবসাইট দ্যগ্রিও লিখেছে, ষাটের দশক থেকেই মার্কিন মুলুকে নারীদের নেতৃত্বে আনার চেষ্টা চললেও সেখানে ‘ম্যাডাম প্রেসিডেন্ট’ শব্দবন্ধটি উচ্চারণের সুযোগ এখনো হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে নারীদের সামনে যেসব বাধা আছে, তা ভাঙার চেষ্টা করতে দেখা গেছে শার্লি অনিতা চিশলম ও হিলারি ক্লিনটকে। তাদের আগে ১৯৬৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের মনোনয়নের লড়াইয়ে নাম লেখান মার্গারেট চেজ স্মিথ। তিনিই প্রথম নারী–যিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য বড় কোনো দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কংগ্রেসের দুই কক্ষে দায়িত্ব পালন করা প্রথম নারীও ছিলেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
দ্যগ্রিও লিখেছে, স্মিথের পরে ১৯৭২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়নের দৌড়ে ছিলেন চিশলম। কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী হতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। তবে স্মিথ বা চিশলম–কেউই দলীয় মনোনয়ন পাননি। কয়েক দশক বাদে ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো কেউ দলীয় মনোনয়ন পান; সেই নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে লড়েন হিলারি ক্লিনটন। আর তাকে হারিয়ে জয়ের মুখ দেখেন রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি পরের নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে ট্রাম্পের বিপক্ষে লড়ছেন ডেমোক্রেটিক পার্টিরই আরেক নারী প্রার্থী, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। এবার কি যুক্তরাষ্ট্র নারী প্রেসিডেন্ট দেখতে পাবে? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা চলছে কয়েক মাস ধরেই।
প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং কৃষ্ণাঙ্গ ও দক্ষিণ এশীয় ঐতিহ্যের নারী হিসেবে কমলা হ্যারিস এমন এক আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব করছেন, যা আগের চেয়ে অনেক বেশি বৈচিত্র্যময় ও বহুমুখী। প্রায়ই সহানুভূতির প্রকাশ, প্রান্তিক গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ এবং প্রজনন অধিকারের জন্য লড়াই করতে দেখা গেছে তাকে, যা ঐতিহ্যগতভাবে রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
তবে হ্যারিসের যে গুণাবলী ভোটারদের একটি অংশের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে, সেটির কারণেই অন্যরা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। বিশেষ করে লিঙ্গভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির শক্ত প্রভাব চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। কিছু ভোটার, বিশেষ করে ট্রাম্প শিবিরের অনেকেই হ্যারিসকে সেই দৃষ্টিতে দেখতে পারে। তারা প্রশ্ন তুলতে পারে, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা ও অভ্যন্তরীণ বিভাজনের সময়ে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার মত দৃঢ়তা একজন নারী দেখাতে পারবেন কিনা।
যুক্তরাষ্ট্র ১৭৮৯ সাল থেকে ৪৬ জন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে, যাদের মধ্যে ওবামা বাদে সবাই শ্বেতাঙ্গ। যে জাতি নিজেকে বিশ্বের প্রাচীনতম গণতন্ত্র বলে দাবি করে, তারা কখনো কোনো নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেনি। তার মানে দাঁড়ায় লিঙ্গবৈষম্য আমেরিকান সমাজের গভীরে প্রোথিত। তবে সামপ্রতিক দশকগুলোতে সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে বড় পরিবর্তন দেখা গেছে; হিলারি ক্লিনটন প্রথমবারের মত প্রার্থিতার বাধা অতিক্রম করকে পেরেছেন, তাও আট বছর হয়ে গেল। তবে সমাজের একটি অংশ এখনো নারী নেতৃত্ব মানতে পারেনি। ২০১৬ সালে অনেক নারী স্বীকার করেন যে, তারা হিলারি ক্লিনটনকে ভোট দেননি; কারণ তারা একজন নারীকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কল্পনাই করতে পারেন না। শ্রমিক শ্রেণি বা ডিগ্রিবিহীন শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের মধ্যে এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি বেশি দেখা যায়। পেনসিলভানিয়া, মিশিগান ও উইসকনসিনের মত রাজ্যে নির্বাচনের ফল ঠিক করে দেয় দোদুল্যমান ভোটাররা। এ ধরনের ভোটারদের নারী প্রার্থীকে সমর্থন করার সম্ভাবনা কম, তারা স্বভাবতই ট্রাম্পকে বেছে নেবেন।
যুক্তরাষ্ট্র হোয়াইট হাউজে একজন নারীকে দেখতে প্রস্তুত কিনা, তা মূল্যায়নের সুযোগ এনেছে কমলা হ্যারিসের প্রার্থিতা। পিউ রিসার্চ বলছে, ৯৩ শতাংশ আমেরিকান ‘যোগ্য নারী প্রার্থীকে’ ভোট দেওয়ার তথা বলেছেন। কিন্তু একজন নারী শিগগিরই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, তেমনটা বিশ্বাস করেন মাত্র ২৫ শতাংশ উত্তরদাতা। মার্কিন সমাজের গভীরে যে নারীবিদ্বেষ ঢুকে আছে, তা এই দ্বিধাতেই প্রকাশ পায়; এখনও অনেকে বিশ্বাস করেন যে একজন নারী ‘কার্যকর নেতৃত্ব’ দিতে পারেন কিনা।
কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের রাজনৈতিক অ্যাডভোকেসি গ্রুপ শি দ্য পিপলের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এইমি অ্যালিসন দ্যগ্রিওকে বলেন, একজন নারীকে হোয়াইট হাউসে বসাতে চাইলে রাজনৈতিক দলে ক্ষমতায়নের কাজ নারীদের চালিয়ে যেতে হবে।