১৯৯৩ এর মাঝামাঝি। একমাত্র ছোট ভাই সৌগত তখন নটরডেম কলেজের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তার পরীক্ষা উপলক্ষে আমি ও আমার মা ঢাকা গিয়েছিলাম। আমার একমাত্র ছোট ভাই সৌগত রামকৃষ্ণ মিশন ঢাকায় থাকতো। তার বন্ধু সুব্রত বোসও রামকৃষ্ণ মিশন ঢাকায় থাকতো।সেও নটরডেমিয়ান। আকস্মিকভাবে এক ভদ্রলোক বলা যায় তরুণ একটি মোটরসাইকেল চেপে আমাদের সামনে দাঁড়ালেন। অনেকটা গায়ে পড়ে আমার সাথে কথা বলতে লাগলেন। আমি মনে মনে খুব বিরক্ত হচ্ছিলাম। তিনি ছিলেন নাছোড়বান্দা। দেখলাম আমার মায়ের সাথেও বেশ ভাব জমিয়ে ফেলেছেন। ভাইয়ের কাছ থেকে জানলাম তিনি তার বন্ধু সুব্রত বোসের
কাকা। নাম সমীর বোস। তাঁর মেধা, দক্ষতা, জ্ঞানের ব্যপ্তি দেখে আমি রীতিমতো অভিভূত। যে কোন বিষয়ে তিনি আলাপ করে যাচ্ছেন অনায়াসে। তারপর যোগাযোগ। অতঃপর ১৯৯৪ সালে আমার বড় বোনের সাথে তাঁর বিয়ে।
এবার বলি কাস্টমস কর্মকর্তা সমীর বোসের কথা : জন্ম ১৯৬০। নড়াইল। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন ১২ বছরের বালক। ১২ বছর বয়সে মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য সরবরাহ করে গুপ্ত জায়গায় পৌঁছে দিতেন। অনেক বোমা–বারুদ গুপ্ত জায়গায় পৌঁছে দিতেন। বনেদি বোস পরিবারের সাত ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন ৫ম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের মেধাবী ছাত্র সমীর বোস ছাত্র জীবনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। দলের ত্যাগী নেতা ছিলেন। দলের জন্য স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তিনি তৎকালীন প্রয়াত ছাত্রনেতা জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকুর সাথে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে দেশের জন্য অনেক অবদান রেখেছেন। ব্যক্তি জীবনে ছেলের বিশাল হৃদয়ের অধিকারী এক মানুষ। তিনি শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ গোপাল দাশ (যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর বিচারের প্রত্যক্ষ সাক্ষী) অধ্যাপিকা মায়া দাশের বড় জামাতা।
ইতিহাস তাঁকে হয়তো কোনো মূল্যায়ন করেনি। তাঁর নাম ইতিহাসে লেখা হবেনা জানি। আমি তাঁকে চিনি। ক্ষণজন্মা এই মানুষটি গত বছর ৯ জানুয়ারি ২০২২ আমাদের ছেড়ে আকস্মিক ভাবেই অমৃত লোকে পাড়ি জমান। রেখে গেছেন ইউরোপে বার–এড–ল অধ্যয়নরত বড় কন্যা সংবৃতা, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যয়নরত ছোট কন্যা স্নাতা এবং আমার একমাত্র বোন মৃত্তিকা বোসকে।
‘চোখের জলে নামলো জোয়ার দুখের পারাবারে…ও চাঁদ।’ কোনোদিন ভুলবো দাদা। বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক; প্রফেসর,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।












