ইটের রাস্তায় নেই ইট, মাটির সড়কগুলো যেন চাষের জমি

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া | শনিবার , ২ আগস্ট, ২০২৫ at ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ

চকরিয়ায় ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে গ্রামীণ সড়কগুলো। বিশেষ করে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের পাহাড়ি ও উপকূলীয় জনপদের প্রত্যন্ত এলাকায় যাতায়াতের মাধ্যম মাটির ও ইটের রাস্তারগুলোর অবস্থা বেশ শোচনীয়। এই অবস্থায় এসব সড়ক দিয়ে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো মানুষ।

সরেজমিন বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নটির চতুর্দিকে পাহাড়ি জনপদ। এই জনপদে অন্তত ২০টি পাড়া রয়েছে। চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়ক থেকে এসব গ্রামীণ এলাকায় যাতায়াতের জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি অভ্যন্তরীণ সড়ক। কিন্তু এসব সড়কের কোনোটি ইটের আবার অধিকাংশ সড়কই মাটির। তাই মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এসব সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে তো দূরের কথা, সেখানে পায়ে হেঁটেও যাতায়াত করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে হাজারো মানুষকে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। খুটাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা ও যুবদল নেতা মিজবাউল হক সোহেল দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের পূর্বে হাজীপাড়া সড়ক দিয়ে চলাচল করেন মধ্যম ও পূর্ব বাক্কুমপাড়া, নতুন বাজার আর নলবুনিয়া এলাকার জনগণ। অতীতে এই সড়কের কোনো ধরনের উন্নয়ন না হওয়ায় চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। তার ওপর গত ১৫ দিনের একনাগাড়ে বৃষ্টিপাতের কারণে এই সড়কে গভীর ক্ষত হয়ে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, প্রসূতি ও রোগীদের চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। বন্ধ হয়ে পড়েছে এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল।

খুটাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা মাওলানা আবদুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমার ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হাজিপাড়া সড়কটির অবস্থা বেশ শোচনীয়। এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন ইউনিয়নের হাজি পাড়া, শান্তি বাজার, মসজিদ পাহাড়, চেয়ারম্যান পাড়া, কালাচাঁন পাহাড় ও উত্তর মেধাকচ্ছপিয়া গ্রামের লোকজন। কিন্তু সড়কটির একেবারে দুরবস্থার কারণে গত ১৫ দিন ধরে এসব গ্রামের হাজারো মানুষ যাতায়াত করতে গিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। চেয়ারম্যান বলেন, বিগত সরকারের সময়ে এই ইউনিয়নে কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। গ্রামীণ অবকাঠামোগুলো পড়েই ছিল একেবারে অভিভাবকহীন। তাই বর্তমান সরকারের প্রশাসনের কাছে চাওয়া, আমার ইউনিয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে গ্রামীণ অবকাঠামোর টেকসই উন্নয়নকল্পে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া। এজন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিক পত্র দেওয়া হয়েছে।

একই অবস্থা বিরাজ করছে উপকূলীয় চিরিঙ্গা ইউনিয়নের গ্রামীণ অবকাঠামোগুলোরও। এই ইউনিয়নের চরণদ্বীপ, সওদাগরঘোনা, পালাকাটা, বুড়িপুকুরসহ প্রত্যন্ত এলাকার মাটির সড়কগুলো দিয়ে চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে পড়েছে। কারণ এসব মাটির সড়কে বর্তমানে হাঁটু পরিমাণ কাঁদা মাড়িয়েই চলাচল করতে হয়। এজন্য জরুরি প্রয়োজন না হলে কোন মানুষ ঘর থেকেও বের হচ্ছেন না। এতে অনেকটাই নিজ বাড়িতেই বন্দি অবস্থায় থাকতে হচ্ছে অনেক পরিবারকে।

চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আহমদ জানান, চিরিঙ্গা ইউনিয়নের মাটির রাস্তাগুলোর অবস্থা একেবারেই শোচনীয়। ইউনিয়নের মাটির সড়কগুলো বর্তমানে ধান চাষের জমিতে পরিণত হয়েছে। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চরণদ্বীপ এলাকার সড়কটি দিয়ে প্রায় ১৫ দিন ধরে যানবাহন চলাচল কার্যত বন্ধ রয়েছে। হাঁটু পরিমাণ কাঁদা মাটি মাড়িয়েই চলাচল করতে হচ্ছে জরুরি প্রয়োজনে। তাই অনতিবিলম্বে এসব মাটির সড়ক প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে চলাচল উপযোগী করতে উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে।

জনপ্রতিনিধি আলী আহমদ জানান, ইতোমধ্যে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর। একইভাবে অন্য দপ্তরাধীন সড়কগুলোও যাতে দ্রুত মেরামতের মাধ্যমে যান ও জন চলাচল করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

সরেজমিন ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একইভাবে উপজেলার হারবাং, বরইতলী, কৈয়ারবিল, লক্ষ্যারচর, কাকারা, সুরাজপুরমানিকপুর, বমু মিলছড়ি, ফাঁসিয়াখালী, ডুলাহাজারা, পূর্ব বড় ভেওলা, পশ্চিম বড় ভেওলা, বিএমচর, বদরখালী, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, সাহারবিল ইউনিয়নের গ্রামীণ জনপদের ইটের ও মাটির সড়কগুলোর অবস্থা বেশ শোচনীয়। এসব ইউনিয়নের লাখো মানুষ বর্তমানে চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করছেন। এসব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা স্ব স্ব এলাকার কয়েকশত গ্রামীণ সড়কের দুরবস্থা নিরসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরের প্রধান সহকারী উত্তম নন্দীর দেওয়ার তথ্যানুযায়ী, যেসব ইউনিয়নে এলজিইডির নিয়ন্ত্রণাধীণ সড়ক রয়েছে এবং অতি বৃষ্টির কারণে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সেগুলোকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার আলোকে অতি দ্রুত চলাচল উপযোগী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা দিলীপ দে দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে থেমে থেকে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই কারণে গ্রামীণ অবকাঠামোর অধীন ইটের ও মাটির সড়কগুলোর চিত্র খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। তাই এলাকা ভিত্তিক তথ্য সংগ্রহের পর সেখানে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিয়ে মেরামতের মাধ্যমে সড়কগুলো চলাচল উপযোগী করার জন্য নির্দেশনা রয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার। সেই আলোকে গ্রামীণ অবকাঠামোগুলোর সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। তবে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে যেসব সড়ক একেবারেই চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সেগুলোর দিকে। আশা করি কিছুদিনের মধ্যেই এসব সড়কে নির্বিঘ্ন যাতায়াত করা সম্ভব হবে।

এই পরিস্থিতিতে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, বৃষ্টিপাতের কারণে যেসব ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার ইটের ও মাটির রাস্তারগুলোর বেহাল দশা হয়েছে ইউনিয়ন ভিত্তিক সেগুলোর তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। অনেক জনপ্রতিনিধি তাদের এলাকার সড়কগুলোর এই দুরবস্থার চিত্রসহ উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদনও জানাচ্ছেন সংস্কারের জন্য। আশা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এসব সড়ক টেকসইভাবে সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকখনও দিনে, কখনও রাতে চলছে পাহাড় কাটা
পরবর্তী নিবন্ধবদরখালীতে যুবককে গুলি করে হত্যা