ইঞ্জিন সংকটে বাড়ছে ভোগান্তি

মহানগর এক্সপ্রেস আসতে ৩ ঘণ্টা দেরি, যাত্রীদের ক্ষোভ ।। সৈকত ধরতে না পেরে পাহাড়িকার সামনে ইঞ্জিন লাগাতে বাধা ।। চট্টগ্রাম স্টেশনে প্রতিদিন ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৫ আগস্ট, ২০২৫ at ৪:২০ পূর্বাহ্ণ

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ ইঞ্জিন সংকটে যাত্রী ভোগান্তি দিনদিন বেড়েই চলেছে। ইঞ্জিন সংকটের কারণে অনেক ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে স্টেশনে না পৌঁছা এবং নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়তে না পারার কারণে প্রায় সময় চট্টগ্রাম স্টেশনে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে।

গতকালও মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছাতে না পারার কারণে এই ট্রেনের শতাধিক যাত্রী কক্সবাজারগামী সৈকত এক্সপ্রেস ট্রেন ধরতে না পেরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। এসময় তারা সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনের সামনে এসে ইঞ্জিন লাগাতে বাধা সৃষ্টি করেন। পরবর্তীতে সৈকত এক্সপ্রেসের যাত্রীদের রেল কর্তৃপক্ষ পর্যটন এক্সপ্রেস ট্রেনে করে কক্সবাজার যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এসময় আরএনবি এবং জিআরপি পুলিশের সদস্যরা পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন লাগাতে সহযোগিতা করলে এক ঘণ্টা বিলম্বে সিলেটের উদ্দেশ্যে ট্রেনটি স্টেশন ছেড়ে যায়।

চট্টগ্রাম স্টেশনে রেলওয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারী, আরএনবির সদস্যরা জানান, রেলওয়ের অনেক যাত্রী আছেন যারা একটি ট্রেনে করে চট্টগ্রাম স্টেশনে নেমে কানেক্টিং আরেকটি ট্রেনে করে কক্সবাজার কিংবা উদয়নে করে সিলেট অথবা ঢাকায় যান। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ইঞ্জিন সংকট প্রকট আকার ধারণ করায় কোনো ট্রেনই নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়তে পারছে না এবং গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। জিআরপি এবং আরএনবির বেশ কয়েকজন সদস্য আজাদীকে জানান, প্রতিদিন ঢাকাচট্টগ্রামকক্সবাজার ও সিলেটের অনেক যাত্রী ঢাকাকুমিল্লালাকসামআখাউড়া থেকে একটি ট্রেনে করে চট্টগ্রাম এসেচট্টগ্রাম থেকে আরেকটি ট্রেনে করে কক্সবাজার যান। আবার কক্সবাজার থেকে অনেকেই সৈকতপ্রবাল, কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেসে করে চট্টগ্রাম স্টেশনে নেমে পাহাড়িকা, মেঘনা, সোনার বাংলাসহ বিভিন্ন ট্রেনে করে গন্তব্যে যান। কিন্তু এখন ইঞ্জিন সংকটের কারণে প্রায় ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়তে পারছে না। আবার পথের মধ্যে ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে প্রায় ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যেও পৌঁছাতে পারছে না। যার কারণে প্রায় সময় চট্টগ্রাম স্টেশনে বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা বিক্ষোভভাঙচুরের মত ঘটনা ঘটাচ্ছেন।

এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (লোকো) মো. সাজিদ হাসান নির্ঝর বলেন, ট্রেন দেরি করে স্টেশনে আসার কারণে ওই ট্রেনের যাত্রীরা অন্য ট্রেন ধরতে না পারার বিষয়টি আমরা দেখছি। আমরা চেষ্টা করছি যাতে ট্রেন পৌঁছাতে এবং ছাড়তে বিলম্ব না হয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর আমান উল্লাহ আমান বলেন, ইঞ্জিন সংকটের কারণে এখন প্রায় ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে চট্টগ্রাম এসে পৌঁছাতে পারছে না। আবার অনেক ট্রেনের ইঞ্জিন মাঝপথে নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। আজকেও এরকম একটি ঘটনা ঘটেছে।

মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীরা সৈকত এক্সপ্রেস ট্রেন ধরতে না পেরে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনের সামনে এসে ইঞ্জিন লাগাতে বাধা সৃষ্টি করেন। এসময় আরএনবি এবং জিআরপি পুলিশের সহায়তায় পাহাড়িকার ইঞ্জিন লাগিয়ে ট্রেনটি এক ঘণ্টা বিলম্বে সকাল ৯টায় সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। পাহাড়িকা সিলেটের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল সকাল ৭টা ৫০মিনিটে।

ইন্সপেক্টর আমান উল্লাহ আমান বলেন, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি শনিবার রাত সাড়ে ৩ টায় চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু ট্রেনটি চট্টগ্রাম পৌঁছেছে রোববার সকাল ৬টায়। এই ট্রেনের প্রায় শতাধিক যাত্রী ছিল সৈকত এক্সপ্রেসের। সৈকত এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছাড়ে সকাল ৫টা ৫০ মিনিটে। মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি আর ১০ মিনিট আগে আসলে সৈকত এক্সপ্রেসের যাত্রীরা ওই ট্রেনে যেত পারতেন। একই ঘটনা গত বৃহস্পতিবারও ঘটেছে বলে জানান আরএনবির ইন্সপেক্টর আমান উল্লাহ আমান। তিনি বলেন, এখন প্রায় সময় এই ঘটনা ঘটছে। কিছুক্ষণ আগেও স্টেশনে এমন ঘটনা ঘটেছে। এই নিয়ে স্টেশনে প্রায় সময় হট্টগোল ও বিশৃক্সখল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ইদানিং এই ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাচ্ছে।

এসময় বেশ কয়েকজন যাত্রী আজাদীকে জানান, তারা আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, লাকসাম, ভৈরব বাজার, নরসিংদী থেকে মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে করে চট্টগ্রাম নামেন। এই স্টেশনগুলোতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কক্সবাজারগামী ট্রেনের টিকেট না পাওয়ায় মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে করে চট্টগ্রাম স্টেশনে আসেন এবং সৈকত এক্সপ্রেস ট্রেনে করে কক্সবাজার যেতে চান। সৈকত এক্সপ্রেস ট্রেন ধরতে না পারার কারণে তারা ভোগান্তিতে পড়েন। বারবার একই ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে একমত বাংলাদেশ-পাকিস্তান
পরবর্তী নিবন্ধসমাধান দুইবার হয়েছে : পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্যে একমত নয় বাংলাদেশ