বাংলাদেশ রেলওয়েতে পণ্যবাহী ট্রেনকে–রাজস্ব আয়ের প্রাণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতি বছর রেলওয়ের রাজস্ব আয়ের সিংহ ভাগ যোগান দিয়ে থাকে রেলওয়ের পণ্যবাহী বা মালবাহী ট্রেন। রেলওয়ের পরিবহন ও বাণিজ্যিক বিভাগ থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) থেকে ৬৮ লোডের (৩৪টি কনটেইনার) এবং ৬৪ লোডের (৩২টি কনটেইনার) নিয়ে একটি ট্রেন ঢাকা ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোতে (আইসিডি) গেলে ১৬ লাখ ১৮ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। মালবাহী ট্রেনে তেমন কোনো খরচ নেই। একটি মালবাহী ট্রেন চালাতে শুধুমাত্র একজন লোকোমাস্টার (ইঞ্জিন চালক), একজন সহকারী লোকামাস্টার, একজন গার্ড এবং কয়েকজন আরএনবি সদস্য থাকে। আর কোনো ক্রুর প্রয়োজন হয় না।
অপরদিকে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন ১০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১৪ লাখ টাকাও যদি আয় হয়, যাত্রীবাহী ট্রেনে খরচ অনেক বেশি। একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে একজন লোকোমাস্টার (ইঞ্জিন চালক), একজন সহকারী লোকামাস্টার, ৩ থেকে ৪জন টিটিই, গার্ড, প্রতি বগিতে অ্যাটেনডেন্ট, খাবার গাড়ির কর্মচারী, জিআরপি পুলিশ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা থাকেন। এছাড়াও টিকিট বিক্রির জন্য বুকিং সহকারী লাগে। রেলওয়ের যাত্রীবাহী ট্রেনের এই খাতগুলোতে ব্যয় সবচেয়ে বেশি। কিন্তু যেই খাতে তেমন কোনো খরচ নেই–সেই মালবাহী ট্রেন চালানোর দিকে রেলওয়ের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। বলতে গেলে বছরের পর বছর এই খাতে উদাসিনতার চাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রেলওয়ের মালবাহী ট্রেন পরিচালনার সাথে যুক্ত কর্মকর্তা–কর্মচারীরা।
এই ব্যাপারে রেলওয়ের হালিশহরস্থ চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) এর মাস্টার আবদুস সালাম আজাদীকে জানান, ইঞ্জিন সংকটে চাহিদা মতো কনটেইনার ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। গত দুই মাস ধরে এই ভাবে চলছে। সিজিপিওয়াই থেকে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮টি কনটেইনার ট্রেনের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ইঞ্জিন সংকটের কারণে গত দুই মাস ধরে ২–৩টির বেশি যাচ্ছে না। আজকেও (গতকাল বুধবার) অনেক চাহিদা ছিল, কিন্তু দিতে পরিনি। আজকে (গতকাল) শুধু ৩টি ট্রেন চালিয়েছি। মেকানিক্যালে ফোন দিয়েছি–তারা ইঞ্জিন দিতে পারেনি। তিনি বলেন, পণ্যবাহী ট্রেন হলো–রেলের প্রাণ। কনটেইনার ট্রেন যত বেশি চালাতে পারবো তত বেশি লাভ। আমাদের চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) থেকে কনটেইনারবাহী ট্রেনগুলো বন্দরের কনটেইনার নিয়ে ঢাকা ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোতে (আইসিডি) যায়। এছাড়াও গুপ্তখাল এলাকা থেকে তেলবাহী ট্রেন রাজশাহী, সিলেট, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন ডিপোগুলো যায়।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রেলপথে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কমলাপুর ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর (আইসিডি) মধ্যে কনটেইনার পরিবহন শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। তবে শুরু হওয়ার প্রায় ৩৮ বছর পরও এই পথে বন্দর থেকে পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহনের পরিমাণ ৩ শতাংশেরও কম। অথচ এটি সবচেয়ে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী পরিবহন মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বেশিরভাগ কনটেইনার সড়কপথে আনা–নেওয়া করা হয়। ৩ থেকে ৪ শতাংশ কনটেইনার আনা–নেওয়া হয় রেল ও নৌপথে। রেলওয়ের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের মোট কন্টেইনার পরিবহনের মাত্র ২% বর্তমানে রেলপথে হয়, যদিও বন্দর কর্তৃপক্ষ এ হার ২৫%-এ উন্নীত করতে চায়। তবে কমলাপুর অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপোর (আইসিডি) বিদ্যমান সক্ষমতা দিয়ে এটি সম্ভব নয় বলে জানা গেছে।