ভ্যাট আদায়ে গতি আনতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ৫ হাজারের বেশি ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) স্থাপন করে। এতে একজন ভোক্তা পণ্য ক্রয় বা সেবা নেয়ার পরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল্য পরিশোধের সময় ভ্যাট আলাদা হয়ে যায়। তবে বর্তমানে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত প্রায় এক হাজার ইএফডি মেশিন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ব্যবহার করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এতে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ইএফডি স্থাপন করা হয়েছিল, সেটি পূরণ হচ্ছে না। চট্টগ্রামে চলতি বছর পর্যন্ত মোট ১০ হাজার ইএফডি মেশিন স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ, ভ্যাট কমিশনারেট। সেটি তো হয়নি, উল্টো অনেক মেশিন নষ্ট পড়ে আছে। ফলে মেশিনে ভ্যাট আদায়ে সুফল মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতে আজ পালিত হবে জাতীয় ভ্যাট দিবস। একইসঙ্গে শুরু হচ্ছে ‘জাতীয় ভ্যাট সপ্তাহ’। এ বছর দিবসটিতে প্রতিপাদ্য ধরা হয়েছে-‘ভ্যাট দিব জনে জনে, অংশ নিব উন্নয়নে’।
জানা গেছে, গত ২০২২ সাল থেকে বাজেটে ভ্যাটের কেন্দ্রীয় নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। যেসব কোম্পানির এক বা একাধিক জায়গায় উৎপাদন থাকবে, তাদেরকে কেন্দ্রীয় নিবন্ধন নিতে হবে। ভ্যাট আইনে বর্তমানে কেন্দ্রীয় নিবন্ধনের ক্ষেত্রে কম্পিউটারাইজড অটোমেটেড পদ্ধতিতে হিসাবরক্ষণের শর্তে কেন্দ্রীয় নিবন্ধন গ্রহণ করার বিধান রাখা হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রামের ভ্যাট দেওয়ার সক্ষম ব্যবসায়ী এক লাখের অধিক থাকলেও নিবন্ধনের পরিমাণ এর অর্ধেক। ফলে কাঙ্ক্ষিত ভ্যাট আদায়ও হচ্ছে না। সর্বশেষ ২০২২–২৩ অর্থবছরে ভ্যাট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৫ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। ২০২১–২২ অর্থবছরে আদায় হয়েছিলো ১০ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। এছাড়া ২০২০–২১ অর্থবছরে ভ্যাট রাজস্ব আদায় হয়েছিলো ৯ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। ২০১৯–২০ অর্থবছরে ৮ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা, ২০১৮–১৯ অর্থবছরে ১০ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা, ২০১৭–১৮ অর্থবছরে ৮ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা, ২০১৬–১৭ অর্থবছরে ৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা ভ্যাট রাজস্ব আদায় হয়েছিলো চট্টগ্রাম থেকে।
ভ্যাট কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম কাস্টম এঙাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন ৮টি ভ্যাট বিভাগ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে আগ্রাবাদ বিভাগ, চান্দগাঁও বিভাগ, চট্টলা বিভাগ, রাঙামাটি বিভাগ, পটিয়া বিভাগ, কঙবাজার বিভাগ, খাগড়াছড়ি বিভাগ এবং বান্দরবান বিভাগ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভ্যাট আদায় হয় চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ সার্কেল থেকে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম এঙাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মো. জাকির হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ইএফডি মেশিন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। আবার কিছু মেশিন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নষ্ট পড়ে আছে। এসব মেশিন বাজারে না পাওয়ায় আমরা চাইলেই প্রতিস্থাপন করতে পারছি না। ইএফডি স্থাপন এবং তদারকির বিষয়টি এনবিআর সরাসরি দেখে। মেশিনের সমস্যার বিষয়টি জানানো হয়েছে। আশা করছি অর্থবছর শেষের আগেই আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী ভ্যাট আদায় করতে সক্ষম হবো।
এদিকে ভ্যাট দিবস উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, সকল ব্যবসায়ীকে ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। এটি দ্রুতই করব। তাহলে রাজস্ব ঘাটতি কমবে। জনস্বার্থে অনেক কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। এতে আয় কমছে। ছাড় কমানোর কোনো বিকল্প নেই। এটা এক ধরনের বৈষম্য। ছাড় দেশের প্রয়োজনে, পরিস্থিতি ভাল হলে ছাড় কমানো হবে। ব্যবসায়ীদের আস্থায় এনে কাজ করতে হবে। ভ্যাটের হার একটা হলে ভাল হয়, ফাঁকি কমে। আলোচনা করেই ছাড় কমানো হবে। প্রত্যেক কর্মকর্তাকে সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে হবে। এছাড়া ন্যায্য কর আদায় করতে হবে।