ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হবে? আদেশ ১২ জুন

| সোমবার , ৩ জুন, ২০২৪ at ৮:৫১ পূর্বাহ্ণ

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিককর্মচারীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হবে কিনা তা জানা যাবে ১২ জুন। গতকাল রোববার এ মামলায় ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে শুনানি হয় ঢাকার চার নম্বর বিশেষ জজ সৈয়দ আরাফাতের আদালতে। শুনানি শেষে আগামী ১২ জুন আদেশের জন্য তারিখ রেখেছেন বিচারক।

আদালতে দুদকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আর অভিযুক্তদের পক্ষে ব্যরিস্টার আব্দুল আল মামুন শুনানি করেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। গত ২ এপ্রিল অভিযোগপত্র আমলে নেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। তিনি অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য মামলাটি বিশেষ জজ আদালত৪ এ পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। খবর বিডিনিউজের।

ইউনূস ছাড়া এই মামলার অপর আসামিরা হলেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম, এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিককর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম এবং গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিককর্মচারী ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসান।

দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে ২০২৩ সালের ৩০ মে এই মামলা দায়ের করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিরা ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ। মামলার এজাহারে বলা হয়, . ইউনূস ও নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকম বোর্ড সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে অনুষ্ঠিত ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় হিসাব খোলা হয়। তবে ব্যাংকে হিসাব খোলা হয় একদিন আগেই। গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে সেটেলমেন্ট চুক্তি হয় ওই বছরের ২৭ এপ্রিল।

এজাহারে বলা হয়, সেটেলমেন্ট চুক্তিতেও ৮ মে ব্যাংক হিসাব দেখানো আছে, যা বাস্তবে অসম্ভব। ভুয়া সেটেলমেন্ট চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ও ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গ্রামীণ টেলিকমের ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মিরপুর শাখা থেকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় স্থানান্তর করা হয় ২০২২ সালের ১০ মে। পরে ২২ জুন অনুষ্ঠিত ১০৯তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অ্যাডভোকেট ফি হিসাবে অতিরিক্ত ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা প্রদানের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়।

অন্যদিকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাব থেকে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন নামীয় ডাচ বাংলা ব্যাংকের লোকাল অফিসের হিসাব থেকে তিন দফায় মোট ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু কর্মচারীদের লভ্যাংশ বিতরণের পূর্বেই তাদের প্রাপ্য অর্থ তাদের না জানিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে ২০২২ সালের মে ও জুন মাসের বিভিন্ন সময়ে সিবিএ নেতা মো. কামরুজ্জামান, মাইনুল ইসলাম ও ফিরোজ মাহমুদ হাসানের ডাচ বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখার হিসাবে ৩ কোটি টাকা করে স্থানান্তর করা হয়।

একইভাবে আইনজীবী মো. ইউসুফ আলীর কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিলনের ধানমন্ডি শাখার হিসাবে ৪ কোটি টাকা ও দি সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাবে ৫ কোটি টাকা এবং আইনজীবী জাফরুল হাসান শরীফ ও আইনজীবী মো. ইউসুফ আলীর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের গুলশান নর্থ শাখায় যৌথ হিসাবে ৬ কোটি স্থানান্তর করা হয়, যা তাদের প্রাপ্য ছিল না।

দুদকের রেকর্ডপত্র অনুযায়ী, অ্যাডভোকেট ফি হিসেবে প্রকৃতপক্ষে হস্তান্তরিত হয়েছে মাত্র ১ কোটি টাকা। বাকি ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বোর্ড সদস্যদের সহায়তায় গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা এবং আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সেটেলমেন্ট চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে অসৎ উদ্দেশে জালিয়াতির আশ্রয়ে গ্রামীণ টেলিকম থেকে উক্ত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

এটি দণ্ডবিধি ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়, যে কারণে আসামি ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪()() ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভ্যাপসা গরম, বৃষ্টির আভাস
পরবর্তী নিবন্ধএক নোবেল জয়ীর বিরুদ্ধে আরেক নোবেল জয়ীর মামলার নজির নেই : ইউনূস