বাংলাদেশের আদালতে দণ্ডিত নোবেলজয়ী মুহাম্মাদ ইউনূস ‘অন্য একটি পুরস্কারকে ইউনেস্কোর পুরস্কার হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছেন’ বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ডক্টর ইউনূস ইউনেস্কোর নাম নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন, যেটি অনৈতিক এবং অপরাধমূলক। এটি আমাদের দেশের জন্য মানহানিকর যে, একজন ইসরাইয়েলি ভাস্করের পুরস্কারকে তিনি ইউনেস্কো পুরস্কার হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন। বাংলাদেশ ইউনেস্কোর সদস্য রাষ্ট্র এবং শিক্ষামন্ত্রী নওফেল পদাধিকার বলে বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কো বা বিএনসিইউর চেয়ারম্যান।
ইউনূস সেন্টার গত ২১ মার্চ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মুহাম্মাদ ইউনূসের ওই পুরস্কারপ্রাপ্তির খবর দেয়। সেই বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও খবরটি ছাপা হয়। খবর বিডিনিউজের।
সেখানে বলা হয়, আজারবাইজানের বাকুতে ১৪–১৬ মার্চ একাদশ বিশ্ব বাকু ফোরামে অংশ নিয়ে বিশেষ বক্তা হিসেবে ভাষণ দেন নোবেলবিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। সম্মেলনের শেষ দিনে তাকে ‘ইউনেস্কার দি ট্রি অব পিস’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। অনুষ্ঠানের সমাপনী নৈশ ভোজে তার হাতে ওই সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। সেই সম্মাননা গ্রহণের একটি ভিডিও গত ১৭ মার্চ মুহাম্মাদ ইউনূসের ফেসবুক পেইজেও প্রকাশ করা হয়। সেখানেও একে ইউনেস্কোর পুরস্কার বলা হয়
সেই প্রসঙ্গ ধরে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো পুরস্কার দিয়েছে বলে একটি প্রচারণা রয়েছে। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে ইউনেস্কোর মূল সদর দপ্তরে যোগাযোগ করেছি। সেখান থেকে তারা আমাদেরকে নিশ্চিত করেছেন যে ইউনেস্কো ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এই নামে এই ধরনের কোনো সম্মাননা দেননি। ডক্টর ইউনুস আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে একটি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। গজনভী ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার নামের একটি সংস্থার আমন্ত্রণে ইসরাইলি ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদমা সেয়ার ‘ট্রি অফ পিস’ নামক একটি সম্মাননা স্মারক দিয়েছেন। হেদমা সেয়ার নিশ্চিত করেছেন যে, এটি ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার বা সম্মাননা নয়। গজনভী সেন্টারের আমন্ত্রণে তিনি সেটা ইউনূসকে দিয়েছেন।
সরকারের তরফ থেকে এ বিষয়ে ইউনেস্কোকে একটি ‘ব্যাখ্যা’ পাঠানো হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ইউনূস সেন্টার এবং ডক্টর ইউনূসের বরাত দিয়ে যে সংবাদটি প্রচারিত হয়েছে সেটি প্রতারণামূলক এবং সর্বৈব মিথ্যা। ইউনেস্কোর পুরস্কারের কথা বলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে। এটা প্রতারণামূলক এবং শঠতামূলক কার্যক্রম। একজন ইসরাইয়েলি ভাস্করের দেওয়া পুরস্কারকে তিনি ইউনেস্কো কর্তৃক সম্মাননা হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ বিষয়টি অবগত করেই আমরা বাংলাদেশ ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে একটা ব্যাখ্যা পাঠাব সদর দপ্তরে। শ্রম আইন লক্সঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা এক মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে গত ১ জানুয়ারি ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয় ঢাকার শ্রম আদালত। সে প্রসঙ্গ ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তিনি (ইউনূস) শ্রম আইন লক্সঘনের জন্য ইতোমধ্যে দণ্ডিত হয়েছেন। একজন দণ্ডিত ব্যক্তি ইউনেস্কোর নাম নিয়ে এই ধরনের অপপ্রচারগুলো করছে। এই ধরনের ভয়াবহ অপপ্রচার থেকে তারা বিরত না থাকলে এর বিরুদ্ধে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।