রাশিয়ার সামরিক অভিযানের মধ্যে এখন পর্যন্ত ইউক্রেন সীমান্ত পার হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়েছেন চার শতাধিক বাংলাদেশি। গতকাল রোববার বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও রোমানিয়ায় নিরাপদে পৌঁছাতে পেরেছেন তারা। তাদের মধ্যে প্রায় চারশ জন গেছেন পোল্যান্ডে এবং বাকিদের অবস্থান রোমানিয়া ও হাঙ্গেরিতে। প্রবাসী এসব বাংলাদেশিকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। খবর বিডিনিউজের।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোববার পর্যন্ত প্রায় চারশ বাংলাদেশি পোল্যান্ডে ঢুকেছেন। তাদের মধ্যে ৪৬ জন ওয়ারশতে বাংলাদেশ দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে সাময়িক আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। বাকিরা ‘স্বেচ্ছায়’ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ওই দেশে অবস্থান করছেন জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অবশ্য তাদেরকে দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় থাকার কথা বলা হয়েছিল। রেডক্রসের মাধ্যমে ইউক্রেন থেকে আরও ২৮ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার ও স্থানান্তরের কাজ দূতাবাস করছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইউক্রেনের জেল বা অন্যত্র আটক বাংলাদেশিদের উদ্ধারের আইওএমের সঙ্গেও কাজ করছে দূতাবাস।
এদিকে এক জরুরি বার্তায় ইউক্রেন থেকে আগত এবং বর্তমানে পোলান্ডে অবস্থানরত সকল বাংলাদেশিদের নাম, পাসপোর্ট নম্বর, মোবাইল নম্বর এবং পূর্ণ ঠিকানাসহ দূতাবাসে পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে ওয়ারশতে বাংলাদেশ দূতাবাস।
দূতাবাসের কর্মকর্তা তৌহিদ ইমামের নম্বরে (+৪৯ ১৫৭৭ ৮৬৭৬৩৭৬) হোয়াটস অ্যাপে এবং service.warsaw@mofa.gov.bd ইমেইলে তথ্যগুলো পাঠানোর কথা বলা হয়েছে বার্তায়। পাশাপাশি এখনও ইউক্রেনে আটকপড়া বাংলাদেশিদের নাম, মোবাইল নম্বর ও পূর্ণ ঠিকানাও ওই হোয়াটস অ্যাপ নম্বরে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে।
জরুরি বার্তায় বলা হয়, এ পরিস্থিতিতে যে যেখানে আছেন সেখানেই অবস্থান করুন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি) আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ পূর্বক আপনাদের উদ্ধার করে সুবিধাজনক সীমান্তে পৌঁছে দেবে।
৩৫ কিলোমিটার হেঁটেছেন খালেদ : এত কষ্ট হচ্ছে, আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না, পোল্যান্ড সীমান্তে পৌঁছানোর পর বললেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী শেখ খালেদ বিন সেলিম। ইউক্রেনের ওডেসার একটি মেডিকেল কলেজে পড়েন খালেদ। রাশিয়া গত বৃহস্পতবার ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে ওই শহর ছাড়েন তিনি। আর সবার মতো তারও গন্তব্যস্থল পোল্যান্ড। ওডেসা থেকে ট্রেনে ইউক্রেনের লিভভ শহরে পৌঁছানোর পর অনেকটা পথ হাঁটতে হয় খালেদকে।
রোববার পোল্যান্ড সীমান্তে পৌঁছার পর তিনি বলেন, ৩৫ কিলোমিটার হেঁটে সবে বর্ডারে পৌঁছেছি। সামনে অনেক অনেক লম্বা লাইন। কখন পার হতে পারব জানি না। ইউক্রেনের রাশিয়া যেদিকে তার বিপরীত দিকের সীমান্তে দীর্ঘ অপেক্ষার লাইনে দাঁড়ালেও নিজেকে সৌভাগ্যবানই মনে করছেন খালেদ।
কৃষ্ণসাগর তীরের বন্দর নগরীর ওডেসার অভিজ্ঞতা স্মরণ করে তিনি বলেন, রাশিয়া আক্রমণ করার পর মানুষ ওডেসা ছাড়তে মরিয়া হয়ে উঠে। ওডেসা রাশিয়ার একদম হাতের নাগালে। অনেক ছুটোছুটি করে আমি একটা ট্রেনের টিকেট পেয়েছিলাম। রওনা হওয়ার পর ট্রেনে বসেই জেনেছি ওডেসাতে মিসাইল অ্যাটাক হয়েছে। এখন তো সেখানে রীতিমতো যুদ্ধ চলছে। সেখান থেকে বের হতে না পারলে কী হত, ভাবলেই গা শিউরে উঠছে। আমি দেখেছি প্রাণপণ চেষ্টা করেও বহু মানুষ ট্রেনে উঠতে পারেনি।
ওডেসা থেকে ট্রেনে পোল্যান্ড সীমান্তবর্তী লিভভ শহরে পৌঁছানোর পর থেকে শনিবার সকালে বাংলাদেশি আরও দুটি পরিবার এবং অন্য ছয় বাঙালি তরুণের সঙ্গে খালেদ ক্রাকোভেৎস সীমান্তের দিকে রওনা হন। লিভভ থেকে ক্রাকোভেৎস সীমান্তের দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার। যে পথের বেশিরভাগটাই তাদের হাঁটতে হয়েছে।
খালেদ বলেন, প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে হাঁটতে কী পরিমাণ কষ্ট হচ্ছে, তা আমি আপনাকে বোঝাতে পারবো না। গত তিন-চার দিন চোখের পাতা এক করতে পারিনি। ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে আসছে। পা দুটো আর চলতে চাইছে না। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। তাড়াতাড়ি যেন বর্ডার পার হয়ে যেতে পারি।