ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল সোমবার (বাংলাদেশ সময় রাত ১১ টার পর) হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেছেন। ইউরোপীয় নেতারাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠককে অনেকেই যুদ্ধ অবসানের সম্ভাব্য মোড় ঘোরানো মুহূর্ত হিসেবে দেখছেন।
ট্রাম্প–জেলেনস্কি বৈঠকের ফাঁকে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছে হোয়াইট হাউজ, যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বর্ণনা করা হয়েছে শান্তির প্রেসিডেন্ট হিসেবে। পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করব, সবার সঙ্গে কাজ করব, আর আমরা নিশ্চিত করব – যদি শান্তি আসে, সেই শান্তি যেন দীর্ঘমেয়াদি হয়।’
বৈঠক শেষে রাত ২টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় এ আশাবাদ ব্যক্ত করা হয় যে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়ে একটি ত্রিপাক্ষিক আলোচনা আয়োজন সম্ভব হবে – যার মাধ্যমে ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটানো যেতে পারে।
বৈঠকে ট্রাম্প জানান, ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্র এ উদ্যোগে তাদের পাশে থাকবে। যদিও তিনি সরাসরি মার্কিন সেনা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেননি, তবে জানান, ইউক্রেনের জন্য একটি ‘ন্যাটো–ধাঁচের’ নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলার বিষয়ে আলোচনা চলছে। ট্রাম্প বলেন, তারা ইউক্রেনকে রক্ষা করতে চান এবং এটা নিয়ে তারা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছেন। তিনি বলেন, সোমবার তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং বৈঠকের পর আবার কল করবেন। ট্রাম্প বলেন, ‘এরপর আমরা একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজন করব এবং চেষ্টা করব যুদ্ধটি শেষ করে স্থায়ীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে।’ জেলেনস্কির সঙ্গে ওভাল অফিসে এই বৈঠক ছিল আগের চেয়ে একেবারে ভিন্ন মাত্রার। গত ফেব্রুয়ারিতে হওয়া বৈঠকে ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন, জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার প্রতি যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেননি। ওই বৈঠক শেষ হয় তিক্ততার মধ্য দিয়ে। তবে এবারের বৈঠকে জেলেনস্কি শুরুতেই একটি বিশেষ বার্তা নিয়ে আসেন – তার স্ত্রী ওলেনা জেলেনস্কার লেখা একটি চিঠি, যা তিনি দেন ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়ার জন্য। উল্লেখ্য, মেলানিয়া সমপ্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে একটি চিঠি পাঠিয়ে ইউক্রেনে তিন বছর ছয় মাস ধরে চলা ভয়াবহ যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানান।
বৈঠকের এক পর্যায়ে ট্রাম্প ইউক্রেনে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া নিয়ে রসিকতা করেন। ২০২৪ সালে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও যুদ্ধের কারণে তা স্থগিত রাখা হয়েছে, কারণ মার্শাল ল’ (সামরিক আইন) জারি থাকা অবস্থায় দেশটিতে নির্বাচন আয়োজন নিষিদ্ধ। এই প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘তাহলে ধরে নিচ্ছি তিন–সাড়ে তিন বছর পরেও যদি যুদ্ধ চলতে থাকে, নির্বাচন আর হবে না? ভাবছি, আমাদের দেশে এমন কিছু হলে ‘ফেক নিউজ’ কী বলত!’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসতে তিনি প্রস্তুত। তার ভাষায়, এই যুদ্ধ থামাতে হলে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেভাবে হত্যাযজ্ঞ থামাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তার জন্য আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
এই বৈঠকে আরো অংশ নেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার স্টুব, ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুট এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লায়েন।
বৈঠকের আগে ইউক্রেইনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার চিন্তা বাদ দিতে বলেন ট্রাম্প। ক্রিমিয়া ফেরত পাওয়া যাবে না, জেলেনস্কিকে এ বাস্তবতা মেনে নেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।