ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িত সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত রাশিয়া। কিন্তু কিয়েভ এবং তাদের পশ্চিমা সমর্থকরা আলোচনার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে বলে এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গতকাল রোববার ‘রোশিয়া ওয়ান’ টেলিভিশনে পুতিনের এ সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরিণত হয়েছে এবং ‘কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস’ এর পর মস্কো ও পশ্চিমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘাত। যুদ্ধ ১১ মাসে গড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে এ যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দৃষ্টিসীমার মধ্যে নেই। ক্রেমলিন বলছে, সব লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা এই যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। কিয়েভ বলছে, তাদের ভূখণ্ডের প্রতিটি ইঞ্চি থেকে রুশ সেনাদের না তাড়ানো পর্যন্ত তারা শান্ত হবে না। এমনকি তারা ২০১৪ সালের যুদ্ধে হাতছাড়া হয়ে যাওয়া ক্রাইমিয়া পুনরুদ্ধারের সংকল্পও করেছে।
রোববারের সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে পেতে আমরা যুদ্ধে জড়িত সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত আছি, যদিও এটি তাদের উপর নির্ভর করছে। আমরা আলোচনার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিচ্ছি না, তারা দিচ্ছে। এ মাসের শুরুতে সিআইএ পরিচালক উইলিয়াম বার্নসের একটি সাক্ষাৎকার আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, বেশিরভাগ যুদ্ধই যেখানে আলোচনার মাধ্যমে শেষ হয়েছে সেখানে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে এখনও যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে সত্যিকারের আলোচনায় বসতে আগ্রহী না।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির একজন উপদেষ্টাও প্রায় একই কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, পুতিনের বাস্তবে ফেরা প্রয়োজন এবং তাকে মেনে নিতে হবে যে, রাশিয়াই আলোচনা চাইছে না।
যুদ্ধের শুরু থেকেই পুতিন বারবার বলে আসছেন, ইউক্রেনে রাশিয়া ‘সঠিক পথেই অগ্রসর হচ্ছে’। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমারা রাশিয়াকে টুকরো টুকরো করার চেষ্টা করছে। ওয়াশিংটন রাশিয়াকে ভেঙে ফেলার চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পুতিন বলেন, আমার বিশ্বাস–আমরা সঠিক পথেই আছি। আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থ, আমাদের নাগরিকদের ও আমাদের জনগণের স্বার্থের সুরক্ষা করছি।
তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল পশ্চিমাদের সঙ্গে এই ভূরাজনৈতিক সংঘাত যদি ভয়ঙ্কর পর্যায়ে চলে যায় তখন কী হবে? জাবাবে পুতিন বলেন, আমার মনে হয় না এটা অতটাও বিপজ্জনক। ২০১৪ সালে গণবিপ্লবের মাধ্যমে ইউক্রেনের রুশপন্থি প্রেসিডেন্টকে উৎখাত করে পশ্চিমারাই বরং এই যুদ্ধ শুরু করেছিল বলে মনে করেন পুতিন। ওই বিপ্লবের পরপরই রাশিয়া ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রাইমিয়া দখল করে এবং রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলো পূর্ব ইউক্রেনের দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
পুতিন বলেন, আসলে, এখানে মূল বিষয় হল আমাদের ভূরাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নীতি, যার লক্ষ্য রাশিয়া, ঐতিহ্যবাহী রাশিয়াকে টুকরো করা। পশ্চিমারা সেই ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকেই রাশিয়াকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করছে বলেও অভিযোগ করেন পুতিন। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত রাশিয়া পশ্চিমাদের ওই চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে।