ওয়ানডে ক্রিকেটে ছয়বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নও তারা। এই অস্ট্রেলিয়ার সামনে পাহাড় সমান রান দিয়েও স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই। গতকাল শনিবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচে সেটাই দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব। ইংল্যান্ডের ৩৫১ রানের পুঁজি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলো স্টিভেন স্মিথের দল। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের ছুঁড়ে দেওয়া ৩৫২ রানের বড় সংগ্রহ অস্ট্রেলিয়া তাড়া করে ফেললো ১৫ বল আর ৫ উইকেট হাতে রেখেই।
পাহাড় ডিঙানোর চ্যালেঞ্জে অসাধারণ এক ইনিংস উপহার দেওয়া ইংলিসের ব্যাট থেকেই আসে জয়সূচক রান। তার রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি ও অ্যালেঙ কেয়ারির সঙ্গে রেকর্ড জুটিতে ইংল্যান্ডকে হতাশ করে দুর্দান্ত এক জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোরের রেকর্ড কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে লেখা হলো দুবার। বেন ডাকেটের ১৬৫ রানের রেকর্ড গড়া ইনিংসে ইংল্যান্ড করে ৩৫১ রান। সেই রান অস্ট্রেলিয়া পেরিয়ে যায় ১৫ বল বাকি থাকতেই। তারা ৫ উইকেটে তুলে নেয় ৩৫৬ রান। আইসিসির যেকোনো পঞ্চাশ ওভারের টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান তাড়ায় জয় এটিই। ২০২৩ বিশ্বকাপে হায়দরাবাদে শ্রীলংকার বিপক্ষে পাকিস্তানের ৩৪৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় জয় ছিল আগের রেকর্ড।
মূল তিন পেসার প্যাট কামিন্স, জশ হেইজেলউড, মিচেল স্টার্ককে হারানোর ধাক্কা, টানা চার ওয়ানডেতে হার, সবশেষ ম্যাচে রান তাড়ায় ১০৭ রানে গুটিয়ে যাওয়ার হতাশা– সবকিছুকে পেছনে ফেলে স্মরণীয় এক জয় ছিনিয়ে নিলো অস্ট্রেলিয়া। অথচ বড় রান তাড়ায় শুরুতেই চাপে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ২৭ রানের মধ্যে সাজঘরে ফিরে যান দুই ব্যাটার ট্রাভিস হেড (৬) আর স্টিভেন স্মিথ (৫)। সেখান থেকে মার্নাস লাবুশেন আর ম্যাথিউ শর্টের দুর্দান্ত এক জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় অসিরা। ৯১ বলে ৯৫ রান যোগ করেন তারা। হাফ সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় থাকা লাবুশেনকে (৪৭) ফিরিয়ে জুটিটি ভাঙেন আদিল রশিদ। তিন ওভারের মধ্যে আরেক সেট ব্যাটারকেও হারিয়ে বসে অস্ট্রেলিয়া। লিভিংস্টোনকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শর্ট। ৬৩ রান আসে শর্টের ব্যাট থেকে। ১৩৪ রানে ৪ উইকেট হারানো দলকে এরপর টেনে নিয়েছেন জস ইংলিস আর অ্যালেঙ ক্যারে। পঞ্চম উইকেটে শতরানের জুটিতে ম্যাচ জয়ের ভিত গড়ে দেন তারা। ১১৬ বলে ১৪৬ রানের জুটিটি ভাঙে ক্যারে ফিরলে। ৬৩ বলে ৬৯ করেন তিনি। বাকি পথটুকু অনায়াসে পাড়ি দিয়েছেন সেঞ্চুরিয়ান জশ ইংলিস আর গ্লেন ম্যাঙওয়েল। ৮৬ বলে ৮ বাউন্ডারি আর ৬ ছক্কায় ১২০ রানে অপরাজিত থাকেন ইংলিস। ছক্কা মেরেই ম্যাচ শেষ করেন তিনি। ম্যাঙওয়েল অপরাজিত থাকেন ১৫ বলে ৩২ রানে।
এর আগে বেন ডাকেট বড় এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ইংল্যান্ডকে উঠিয়ে দেন রানপাহাড়ে। বাঁহাতি এই ওপেনারের ১৬৫ রানের মারকুটে ইনিংসে ভর করে ৮ উইকেটে ৩৫১ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে ইংলিশরা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড এটি। এর আগে ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ওভালে নিউজিল্যান্ডের করা ৩৪৭ রানই ছিল সর্বোচ্চ। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। শুরুটা ভালোই ছিল তাদের। বাঁহাতি পেসার বেন ডোয়ারসুইস ১৩ রানে ভাঙেন উদ্বোধনী জুটি। ৬ বলে ১০ করে আউট হন ঝোড়ো শুরু করা ফিল সল্ট। এরপর ১৩ বলে ১৫ রানে জেমি স্মিথকেও ফেরান ডোয়ারসুইস। ৪৩ রানে ২ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। সেখান থেকে জো রুট আর বেন ডাকেটের বিশাল জুটি। ১৫৫ বলে ১৫৮ রান যোগ করে দেন তারা। ডাকেট ৯৫ বলে ঝোড়ো গতিতে সেঞ্চুরি তুলে নেন। যেটি ছিল তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি। অবশেষে রুটকে এলবিডব্লিউ করে জুটি ভাঙেন অ্যাডাম জাম্পা। ৭৮ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৬৮ রান আসে রুটের ব্যাট থেকে। এরপর হ্যারি ব্রুককেও (৩) তুলে নেন অসি লেগস্পিনার জাম্পা। জস বাটলার ২১ বলে ২৩, লিয়াম লিভিংস্টোন ১৭ বলে ১৪ করে সাজঘরে ফেরেন। তবে ডাকেট তার মতোই খেলে যেতে থাকেন। ১৩৪ বলে ১৫০ রানের গণ্ডি পার করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ার সেরা ১৬৫ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে মার্নাস লাবুশেনের বলে বোল্ড হন ডাকেট। ১৪৩ রানের ইনিংসে ১৭টি চার আর ৩টি ছক্কা হাঁকান এই ওপেনার। শেষদিকে ১০ বলে অপরাজিত ২১ করেন জোফরা আর্চার। অস্ট্রেলিয়ার বেন ডোয়ারসুইস তিনটি আর অ্যাডাম জাম্পা ও মার্নাস লাবুশেন নেন দুটি করে উইকেট। দুর্দান্ত এ ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হন অস্ট্রেলিয়ার জস ইংলিস।