তৃতীয় দিনেও পাওয়া যায়নি শিশু আয়াতের শরীরের কোনো অংশ। আসামিকে নিয়ে পিবিআই টিম অভিযান চালাচ্ছে। সে যেখানে যেতে বলছে, সেখানেই যাচ্ছে এসপি নাইমা সুলতানার নেতৃত্বে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দিন শেষে ব্যর্থ মনোরথে ফিরেছে পিবিআই টিম। আর আয়াতের বাবা সোহেল রানা বুক চাপড়ে আহাজারি করছে। পিবিআই যখন লাশের টুকরোগুলোর খোঁজ করছে স্থানীয় কয়েকশ লোক জড়ো হয়ে আবিরের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিল তখন।
পাঁচ বছর বয়সী শিশু আয়াতকে অপহরণের পর খুন করে লাশ ছয় টুকরো করে খালে-সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া খন্ডিত দেহ উদ্ধারে গতকাল ইপিজেডে খুনি আবিরকে সঙ্গে নিয়ে তৃতীয় দিনের মতো অভিযান চালায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। রোববার দুপুরে পিবিআই টিমের সদস্যরা বে-টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে সাগরতীরে পানি ও কাদার মধ্যে প্রায় তিন ঘণ্টা তল্লাশি করেন। এর আগে নগরীর ইপিজেড থানার পকেটগেট বাজার এলাকায় আবিরের মায়ের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে একটি ডায়েরি উদ্ধার করে পিবিআই টিম। ডায়েরিতে আবিরের উচ্চবিত্ত হওয়ার আকাঙ্খার কথা লেখা আছে। ডায়েরির একটি পাতায় সে লিখেছে ‘ও যধঃব ষড়াব, ও যধঃব মরৎষ্থ কেন ভালোবাসা কিংবা মেয়েদের প্রতি তার এই ঘৃণা; তাও খতিয়ে দেখছে পিবিআই।
গ্রেপ্তারের পর আবির আলী দাবি করেছিল, আয়াতের লাশের ছয় টুকরোর মধ্যে প্যাকেট বন্দী তিন টুকরো নগরীর ইপিজেড থানার আকমল আলী রোডের শেষ প্রান্তে বেড়িবাঁধের পর আউটার রিং রোড সংলগ্ন বে-টার্মিনাল এলাকায় সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছিল। বাকি তিন টুকরো একইভাবে আকমল আলী রোডের শেষ প্রান্তে একটি খালে স্লুইচগেটের প্রবেশ মুখে ফেলে দেয় আবির। গতকাল রোববার দুপুরে আবির আলীকে নিয়ে পিবিআই টিম যখন সেই স্থানগুলোতে যায়, তখন
আয়াতের বাবাসহ স্বজনরা দেখে সেখানে বুক চাপড়ে আহাজারি শুরু করেন। আয়াতের বাবা সোহেল রানা কান্নায় ভেঙে পড়ে রাস্তায় বসে যান। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, সে (আবির) মিথ্যা কথা বলছে। তাকে রিমান্ডে নিলে সে আমার মেয়ের লাশ কোথায় ফেলেছে দেখিয়ে দেবে। আমার মেয়েটার কি অপরাধ ছিল? কেন তার লাশ পাচ্ছি না। কোথায় লাশ? একটা হাত, পা, একটা জামা পেলেও মনকে বোঝাতে পারতাম।
আয়াতের দাদা মনজুর আলম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তার (আবির) মা আর বোন সব জানে। সেই বাসায় একটা মানুষকে সে কেটে রেখে দিল আর তার মা-বোন জানবে না, এটি হয় না। পুলিশ তার মা-বোনকে গ্রেপ্তার করছে না কেন? সঠিক তথ্য কেন বের করা হচ্ছে না?
আয়াতের বাবা-নানার আহাজারিতে সমবেত লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে তাদের উদ্দেশ্যে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, আবির যে আপনাদের বাসা থেকে কালো ব্যাগ নিয়ে বের হয়েছে, সেটি তো আপনারা দেখেছেন। তাহলে ঘটনার পর তাকে আপনারা কিছু জিজ্ঞেস করেননি কেন? আপনারা তো তাকে সন্দেহের কথাও আমাদের বলেননি। আমরা বিভিন্নভাবে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়ে সে যেখানে লাশের টুকরাগুলো ফেলে দিয়েছে বলে জানিয়েছে, সেখানে আমরা গত চারদিন ধরে কয়েকবার তল্লাশি করেছি। এখনও করছি। আমরা চেষ্টা করছি, কিন্তু সেগুলো পাচ্ছি না। পিবিআই এসপি নাইমা সুলতানা বলেন, আবির যতটুকু তথ্য আমাদের দিয়েছে আমরা সেই অনুসারে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই, একটা রেজাল্ট আসুক।












