আহমদুল ইসলাম চৌধুরীর তুরস্কের শত প্রবন্ধ

আ ব ম খোরশিদ আলম খান | সোমবার , ১৯ আগস্ট, ২০২৪ at ১১:১২ পূর্বাহ্ণ

আহমদুল ইসলাম চৌধুরীর একটি ব্যতিক্রমধর্মী গ্রন্থ এটি বলা যায়। গ্রন্থটি তুরস্কের ওপর শত প্রবন্ধ নিয়ে যা বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছিল। তুরস্ক আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ, বন্ধু রাষ্ট্র। তুরস্কের প্রসিদ্ধ ও প্রাচীন নগরী ইস্তাম্বুল। যা তুরস্কের শত বছর আগের রাজধানী ছিল। তুরস্কের প্রায় ৩৭ জন সুলতান এই ইস্তামু্বলে বসে আফ্রিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার বর্তমান সৌদি আরব, ইরাক, জর্ডান, লেবানন, সিরিয়া, ফিলিস্তিনসহ এসব অঞ্চল নিয়ে শাসন করে গেছেন। লেখকগবেষক আলহাজ্ব আহমদুল ইসলাম চৌধুরী একজন ভ্রমণপ্রিয় মানুষ। দেশে দেশে তিনি ভ্রমণ করেন। যা দেখেন তাই লেখার মাধ্যমে নির্মোহভাবে তুলে ধরেন। তাঁর লেখা তত্ত্বতথ্যবহুল ও ইতিহাসনির্ভর এবং সাবলীল, সহজ ঝরঝরে। তিনি একজন নন্দিত ইসলামী চিন্তাবিদ। সম্প্রতি চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত হয় সংবাদপত্রে তুরস্কের শত প্রবন্ধ গ্রন্থ।

লেখকগবেষক আহমদুল ইসলাম চৌধুরী একাধিক বার তুরস্ক সফর করেন। প্রথমবার ইরান হয়ে, দ্বিতীয়বার সরাসরি, তৃতীয়বার তুরস্ক সফর শেষ করে মিশর সফর করেন। আমি দীর্ঘকাল ধরে তাঁর লেখার নিয়মিত মুগ্ধ পাঠক। তিনি চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী ও দৈনিক পূর্বকোণে নিয়মিত কলাম লিখে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তিনি চট্টগ্রামের সন্তান। চট্টগ্রামকেই ভালোবাসবেন অবশ্যই। চট্টগ্রামের সেইকালের শিপইয়ার্ড (বর্তমানে বিলুপ্ত) থেকে তুর্কি সুলতানগণ শিপ কিনে নিতেন। তখনকার শিপ মজুবত, টেকসই, সস্তা ছিল বিধায়। তিনি চট্টগ্রামের সন্তান হয়ে আবেগে দাবি উপস্থাপন করেন, যেহেতু তুর্কি সুলতানগণ চট্টগ্রাম থেকে শিপ কিনে নিতেন অতএব ইস্তাম্বুল জয়কালে চট্টগ্রামের শিপ এবং চট্টগ্রামের লোকজন ছিল না তা অস্বীকার করা যাবে না। ইস্তাম্বুল জয়কালে চট্টগ্রামের নির্মিত শিপ লোকজন যেমন ছিল বলা এক কথা, ছিল না বলা ভিন্ন কথা। ছিল বলাটিকে প্রমাণ করতে না পারলে খণ্ডন করা সহজ। কিন্তু ছিল না কথাটিকে খণ্ডন করার প্রশ্ন আসে না, প্রমাণ করারও প্রয়োজন পড়ে না। চট্টগ্রামের অপর কৃতী সন্তান বর্ষীয়ান ব্যক্তিত্ব সালাহউদ্দিন কাশেম খান বিগত ৪০ বছর যাবৎ তুরস্কের অনারারি কনসাল জেনারেল। গ্রন্থ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সালাহউদ্দিন কাশেম খানের অনারারি কনসুলেট এর মাধ্যমে গ্রন্থটি প্রকাশ করা হয়। এতে লেখক প্রকাশক উভয়ের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ফুটে উঠেছে। ভূমিকায় লেখক উল্লেখ করেছেন, তিনি একশত প্রবন্ধ যাচাইবাছাই এর মাধ্যমে নির্ধারণ করেন। সংবাদপত্রে একশতটি প্রবন্ধ নিয়ে প্রকাশিত এ গ্রন্থকে তিন ভাগে মূল্যায়ন করা হয়। প্রথমদিকে ৮ পৃষ্ঠাব্যাপী ইংরেজি ভাষায় সালাহউদ্দিন কাশেম খানের বক্তব্য, সাবেক রাষ্ট্রপতি সুলায়মান ডেভিডেন এর বক্তব্য রয়েছে। ২য় পর্বে ২২ আগস্ট ২০০১ সাল থেকে ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ সাল পর্যন্ত সংবাদপত্রে প্রকাশের তারিখসহ প্রবন্ধের নামের আগে ক্রমিক নাম্বার দিয়ে ধারাবাহিকভাবে একশতটি প্রবন্ধ গ্রন্থে দেখতে পাওয়া যায়।

মহান সাহাবা হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (.) ও অনেক সাহাবা তবেতাবঈন হযরত আমিরে মুয়াবিয়ার (রহ) আমলে ইস্তাম্বুল জয় করতে আসেন। দীর্ঘ প্রায় ৬ বছরব্যাপী ইস্তাম্বুলকে অবরোধ করে রাখেন। কিন্তু বিজয় লাভে সক্ষম হননি। হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (.)সহ অনেক সাহাবা ইন্তেকাল করলে ইস্তাম্বুলে শায়িত হন। যার বর্ণনা এই গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।

মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (রহ.), মাওলানা আফেন্দী (রহ.) সহ একাধিক সুফি, দরবেশের বর্ণনা আছে গ্রন্থে। আরও রয়েছে তুরস্কের পূর্বাংশে হযরত ইব্রাহীম (.)’র জন্মস্থান উর্ফার বর্ণনা। ইস্তাম্বুলে বিশ্বখ্যাত তোপকাপি জাদুঘর, কেন্দ্রীয় মসজিদ তথা সুলায়মানী মসজিদ ও বিশ্বখ্যাত মসজিদের বর্ণনা রয়েছে এই গ্রন্থে। শুধু তাই নয়, তুরস্ক যে ৪/৫ শত বছর হেজাজকিন্দ্রিক পবিত্র মক্কা, পবিত্র মদিনা শাসন করে গেছেন। ঐ সময়কার তুর্কি সুলতানগণের নানান অবদান ইতিহাস তথ্য গ্রন্থের একাধিক প্রবন্ধে উল্লেখ করা আছে। এখানে লেখক প্রকাশের তারিখের আগে পরেকে গুরুত্ব দিয়েছেন। গ্রন্থের তৃতীয় পর্বে রয়েছে এলবাম। তুরস্কের ৫ জন রাষ্ট্রদূত নিয়ে ১০ পৃষ্ঠাব্যাপী এলবাম রয়েছে। এতে লেখক ও প্রকাশকের সাথে মাননীয় রাষ্ট্রদূতগণের একাধিক স্মৃতির ১৫/২০টি ছবি সন্নিবেশিত আছে।

৩৮৪ পৃষ্ঠার গ্রন্থটি ৪ রংএ ছাপানো হয়েছে। লেখক প্রকাশক গ্রন্থের বিক্রির মূল্য উল্লেখ করেননি। হয়ত আর্থিক দিক পুষিয়ে নিতে প্রকাশক ইচ্ছুক নন। লেখক প্রকাশক উভয়ে মনে করেন গ্রন্থটি সৌজন্য কপি হিসেবে দিবেন। গ্রন্থটির প্রকাশকাল ১৪ মে ২০২৪। এরকম ব্যয়বহুল গ্রন্থ চট্টগ্রাম তো নয়ই ঢাকা থেকে ছাপানো গ্রন্থ হাতেগোনা কয়েকটি পাওয়া যেতে পারে। চট্টগ্রামের সাথে ইস্তাম্বুল তুর্কি সুলতানগণের ভ্রাতৃপ্রতিম খুবই নিবিড় সম্পর্ক ছিল তা গ্রন্থের একাধিক প্রবন্ধে ফুটিয়ে তুলতে তিনি কুণ্ঠাবোধ করেননি। গ্রন্থটিতে কিছু মুদ্রণ বিভ্রাট ও বানানে ত্রুটি দেখা যায়। ভাল সম্পাদনা হলে হয়তো এই ভুলগুলো এড়ানো যেতো। তবুও মান বিচারে গ্রন্থটি উতরে গেছে। গ্রন্থটি বর্তমান প্রজন্মের জন্য বটেই, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যও নানান তথ্যউপাত্তের খোরাক হতে পারে। গ্রন্থটি সর্বমহলে সমাদৃত হোক এই কামনা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাশেদ রউফ – এর অন্ত্যমিল
পরবর্তী নিবন্ধকেমন দেশ চাই!