আহমদ শরীফ : যুক্তিনিষ্ঠ, প্রগতিশীল লেখক

| বৃহস্পতিবার , ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:১৮ পূর্বাহ্ণ

আহমদ শরীফ। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ, লেখক এবং মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম গবেষক। তিনি ছিলেন একজন যুক্তিনিষ্ঠ, বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রগতিশীল লেখক। ১৯২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার সুচক্রদণ্ডী গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল আজিজ। খ্যাতনামা পুথি সংগ্রাহক আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ছিলেন তাঁর চাচা। তিনি পটিয়া হাই স্কুল, চট্টগ্রাম কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করেন। ১৯৪৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলায় এমএ ডিগ্রি লাভের পর লাকসাম পশ্চিমগাঁও নওয়াব ফয়জুন্নেসা কলেজে বাংলার অধ্যাপকরূপে তাঁর কর্মজীবন শুরু। কিছুদিন তিনি রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের কর্মসূচি নিয়ামক ছিলেন। ১৯৫০ সালের ১৮ ডিসেম্বর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে গবেষণা সহকারী হিসেবে যোগদান করেন এবং পরে এ বিভাগের শিক্ষক হন। মধ্যযুগের কবি সৈয়দ সুলতানের ওপর গবেষণা করে তিনি ১৯৬৭ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৭২ সালে প্রফেসর পদে উন্নীত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যকালের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান, কলা অনুষদের ডীন, সিন্ডিকেট সদস্য এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-উত্তরকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুবছরের (১৯৮৪-৮৬) জন্য নজরুল অধ্যাপক পদে সমাসীন ছিলেন। বাংলাদেশের সমাজ, সাহিত্য, রাজনীতি, ধর্ম, দর্শন ইত্যাদি সম্পর্কে তিনি বিভিন্ন সময়ে যে প্রবন্ধগুলি রচনা করেছেন তার সংকলন গ্রন্থের সংখ্যা চল্লিশোর্ধ্ব।
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো: বিচিত চিন্তা (১৯৬৮), সাহিত্য ও সংস্কৃতি চিন্তা (১৯৬৯), স্বদেশ অন্বেষা (১৯৭০), জীবনে সমাজে সাহিত্যে (১৯৭০), প্রত্যয় ও প্রত্যাশা (১৯৭১), যুগ যন্ত্রণা (১৯৭৪), কালের দর্পণে স্বদেশ (১৯৮৫), বাঙলা, বাঙালী ও বাঙালীত্ব (১৯৯২), প্রগতির বাধা ও পন্থা (১৯৯৪), এ শতকে আমাদের জীবনধারার রূপরেখা (১৯৯৪), স্বদেশ চিন্তা (১৯৯৭), জিজ্ঞাসা ও অন্বেষা (১৯৯৭), বিশ্বাসবাদ, বিজ্ঞানবাদ, যুক্তিবাদ, মৌলবাদ (২০০০) ইত্যাদি। গবেষণা, প্রবন্ধ ও চিন্তামূলক রচনার জন্য তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, দাউদ সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক এবং কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইস্তোনিয়ার জাতীয় দিবস
পরবর্তী নিবন্ধফ্লাইওভারে স্পিডব্রেকার প্রদান করা জরুরি