আসুক নতুন আলো

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:২৫ পূর্বাহ্ণ

নতুন বছর মানেই নতুন স্বপ্ন, নতুন পথ চলা, নতুন প্রত্যাশা। নতুন ভোর নিয়ে আসুক ২০২২। নতুন করে হোক মনুষ্যত্ববোধের সূচনা। সর্বোপরি পৃথিবী হয়ে উঠুক মানুষের স্বর্গরাজ্য। একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় মহামারি করোনাভাইরাসের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করা পুরোপুরি সম্ভব হয়নি বিদায়ী বছরেও। ২০২১, ঘটনাবহুল এই বছরও ছিল ২০ সালের মতোই বিষে ভরা। চীন থেকে আসা করোনাভাইরাসের দাপটে বেড়েছে মৃত্যুর মিছিল। বিনোদন ভুলে মানুষ হলো ঘরকুনো। হাতে উঠলো স্যানিটাইজারের বোতল আর মুখে মাস্ক। বছরের শেষদিকে তার দাপট কমতে না কমতেই নতুন আতংক হিসেবে এসেছে অমিক্রন। আসার পথে ডেলমিক্রন। তবুও থেমে নেই বেঁচে থাকার প্রয়োজনে ছুটে চলা। এরই মাঝে কালের গহ্বরে হারিয়ে গেছে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির আরো একটি বছর ২০২১। তবে অপ্রিয়, জঘন্য, অস্বস্তিকর কিছু বিষয়ের বিষক্রিয়ায় নীল হয়েছে পুরনো বছরটি। নতুন বছরে দীপ্ত আলোয় সব অন্ধকার যেন ঝলসে গিয়ে ঝলমল করে উঠে চারিদিক; তা-ই সকলের প্রত্যাশা। নতুনকে নতুন করে গ্রহণ করার সংকল্প নিয়েই শুরু হোক নতুন বছর। ২০২১ এর করোনার করাল গ্রাস যেন খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যায় এটাই বড় চাওয়া। তার সাথে ২০২২ সাল হোক দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ। অন্যায় অত্যাচার মুক্ত একটি সোনার বাংলাদেশ। শুভ হোক, সুন্দর হোক নতুন বছর। স্বাগত ২০২২ সাল।
২০২১ এর আগমনী বার্তা মোটেও শুভ ছিলো না। চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দর দিয়ে একের পর এক স্বর্ণের চালান ধরা পড়া, নৌপথ, স্থলপথে আসা ইয়াবার চালান ব্যতিব্যস্ত রেখেছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। পারিবারিক বিরোধের জের ধরে খুন এবং আত্মহত্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছিল। সাথে বেড়ে গিয়েছিল ধর্ষণ, নারী নির্যাতন। বিমানবন্দরে বিদেশগামীদের জন্য পিসিআর ল্যাব বসানো নিয়েও সরব ছিল চট্টগ্রাম। এছাড়া সারা বছরই টিকা নিয়ে সরগরম ছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো চট্টগ্রামেও পূজা মন্ডপে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছিল সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠে অসাম্প্রদায়িক চেতনাধারী চট্টগ্রামের অধিকাংশ মানুষ। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ঘটনা ছিল নগরীর প্রাণকেন্দ্র সিআরবিতে বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধিতা করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের স্বতস্ফূর্ত আন্দোলন। তাছাড়া বিদায়ী বছরেও আলোর মুখ দেখেনি কালুরঘাট সেতুর নতুন প্রকল্পটি। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিতব্য দেশের একমাত্র বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন ঘিরে আলোচনায় ছিল চট্টগ্রাম। ২০২১ সালে চট্টগ্রাম হারিয়েছে বেশ কয়েকজন গুণী ব্যক্তিত্বকে।
ইংরেজি নববর্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর বাণীতে বলেছেন, বাংলা নববর্ষ আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও ব্যবহারিক জীবনে খ্রিস্টীয় বর্ষপঞ্জিকা বহুল ব্যবহৃত। খ্রিস্টাব্দ তাই জাতীয় জীবনে প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে। প্রতিবছর নববর্ষকে বরণ করতে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী বর্ণাঢ্য নানা আয়োজন করা হলেও করোনা মহামারির কারণে বিগত বছরের মতো এবারের উৎসবের আমেজও অনেকটাই ম্লান। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে তবে বিশ্বব্যাপী করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে সতর্কতা প্রতিপালনের বিকল্প নেই। একজনের আনন্দ যেন অন্যদের বিষাদের কারণ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে দেশবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নববর্ষ উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্ষবরণ প্রসঙ্গে তাঁর বাণীতে বলেন, ২০২০ এবং ২০২১ খ্রিস্টাব্দ বাঙালি জাতির জীবনে ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠান-২০২১ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের সঙ্গে একযোগে পালনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এরই মধ্যে ২০২১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করি, যেখানে সার্কভুক্ত ৫টি দেশের রাষ্ট্র প্রধান বা সরকার প্রধানগণ সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানমালায় যোগ দিয়েছিলেন। তাছাড়া বিশ্বের ৭৭টি দেশের রাষ্ট্র প্রধান বা সরকার প্রধানগণ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানগণ ভিডিও বার্তা ও অভিনন্দন পত্র প্রেরণ করেছেন, যেখানে সকলেই আমাদের সরকারের গৃহীত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আমাদের সরকারের উদ্যোগে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের রাজধানী এবং গুরুত্বপূর্ণ শহরে জাতির পিতার নামে স্মারক ভাস্কর্য স্থাপন, সড়ক ও পার্কের নামকরণ করা হয়েছে। ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে সৃজনশীল অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক পুরষ্কার প্রবর্তন করেছে।
সময় যেটা যায় সেটা তো চলেই যায়। সময় ও স্‌্েরাত কখনও কারও জন্য থেমে থাকে না। এভাবেই সময় চলে যাবে। ২০২২ সাল হোক সুস্থ, সুন্দরে ভরা পরিপূর্ণ পৃথিবী। সবুজ, নির্মল পরিবেশের এক অনন্য নিদর্শন! ২০২১ সালের সব অপ্রাপ্তি, দুঃখ, কষ্ট, শোকের ছায়া যেন ২২ সালকে স্পর্শ না করে! আর যেন শুনতে না হয় মারামারি, হানাহানি, নির্যাতন, ধর্ষণ, অমানবিকতা, অমানুষিকতার কোনো খবর। নৈতিকতা ও মানবিক বোধে দীক্ষিত হয়ে ভারসাম্যপূর্ণ একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে হবে। পুরনো বছরের সকল অবসাদ আর অলসতা গ্রাস করে নিক নতুন সূর্যের তেজোদীপ্ত আলো। নতুন বছরের প্রথম প্রহরে আমাদের অঙ্গীকার হোক আরো সুদৃঢ়। আলোর পথে, প্রগতির পথে আমাদের এগিয়ে চলা আরো বেগবান হোক। সাফল্যের পথে ২০২২ সাল হোক একটি মাইলফলক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্দরের নতুন কন্টেনার ইয়ার্ড চালু হচ্ছে কাল
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপিকে দ্বিচারিতা প্রত্যাহারের আহ্বান তথ্যমন্ত্রীর