চট্টগ্রামে এক বলৎকার মামলার রায় দিতে গিয়ে আদালত বলেছেন, ‘আসামি একজন সিরিয়াল রেপিস্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। আসামি একজন কোরআন হাফেজ, পৃথিবীর শুদ্ধতম ধর্মীয়গ্রন্থ আল কোরআন শিক্ষাদানে জন্য মাদ্রাসায় নিয়োজিত থাকলেও কোরআনের সুমহান শিক্ষা নিজ জীবনে প্রয়োগ করতে পারেননি। এই মামলায় ভিকটিমদেরকে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাদানের পরিবর্তে আসামি নিজেই বলৎকারের মত ঘৃণিত ও জঘন্য অপরাধে জড়িয়েছেন। মানুষ হিসাবে ভুল করাই স্বাভাবিক। কিন্তু দিনের পর দিন এই মামলার ভিকটিমদেরকে ভয়ভীতির মধ্যে রেখে বলৎকার করেছেন, যা তার স্বাভাবিক অভ্যাস হিসেবে পরিলক্ষিত হয়েছে।’
‘যা আসামির ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার জবানবন্দি এবং ভিকটিমদের ২২ ধারার জবানবন্দি পর্যালোচনায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। উক্ত পর্যালোচনায় আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত।’
রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) মাদ্রাসার চার শিশুর সাথে বলৎকারের ঘটনা সাক্ষ্য প্রমাণে প্রমাণিত হওয়াই মাদরাসা শিক্ষক নাছিরকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক জয়নাল আবেদিন (সিনিয়র জেলা জজ)। পরে রায়ের পর্যাবেক্ষণে এসব মন্তব্য করেন বিচারক।
রায় ঘোষণার সময় আসামি নাছির আদালতে হাজির ছিলেন। পরে সাজা পরোয়ানামূলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
সাজাপ্রাপ্ত নাছির উদ্দিনের বাড়ি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার ছোট বেউলা গ্রামে। তিনি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের একটি কওমি মাদরাসার শিক্ষক ও আবাসিক প্রধান ছিলেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি বড়ুয়া বলেন, এই রায়ে আমরা রাস্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট। আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। মোট ১৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১ সাক্ষী প্রমাণে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। বাড়ি দূরে হওয়ার সুবাধে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধারাবাহিকভাবে ঐ চার শিশুর সাথে খারাপ কাজ করেছে ঐ শিক্ষক। এটি সামাজের জন্য খারাপ বার্তা। আজকে রায়ে অপরাধীরা সজাগ থাকবেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, এই মাদ্রাসার ১০ বছরের একটি শিশুর বাবা মামলাটি দায়ের করেন। ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর তার ছেলে মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে আসেন বাড়িতে। পালিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে শিশুটি জানায়, শিক্ষক নাছির উদ্দিন তাকেসহ চারজনকে নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে দুই মাস ধরে বলৎকার করে আসছে।
আসামি কোরানে হাফেজ। পরে মাদ্রাসার শিক্ষককে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০২১ সালের জুলাই মাসে শিক্ষকের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে নারীন ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় ধর্ষণের অভিযোগে চার্জ গঠন করে আদালত।
মোট ১১ জন সাক্ষী হয়, জেরা হয়। আজ এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শান্তি মৃত্যুণ্ডের রায় ঘোষণা করেন আদালত।