আসাদ চৌধুরী একজন খাঁটি কবি, শিল্পী ও চিন্তক

মোসতাক খন্দকার | শুক্রবার , ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৭:২১ পূর্বাহ্ণ

একজন ভাল পাঠক, সমালোচক, গবেষক একজন কবিকে গুরুত্বের সাথে বা গুরুত্বহীনতার সাথে দেখে থাকতে পারেন, অথবা মিশ্র একটা অনুভূতি নিয়ে দেখে থাকতে পারেন। তবে একজন আবৃত্তিশিল্পী তার পঠিত কবিকে বা তার চর্চিত অধিকাংশ কবিতার কবিকে কীভাবে দেখেন তা বলা মুশকিল। একজন আবৃত্তিকারকে কবিতার আবৃত্তি নির্মাণের সময় কবির বোধের সাথে আবৃত্তিকারের নিজস্ব বোধের সংযুক্তি ঘটাবার একটা প্রচেষ্টা প্রতিনিয়ত চালাতে হয়। শিল্পের এই ধাপটিতে একজন আবৃত্তিশিল্পীকে সফল হতে হয়। কখনও কখনও ব্যর্থ হন। বেছে নেয়া কবিতার কবির বোধকে পুনর্জন্ম দেয়া হয়তোবা সবসময় সম্ভব হয় না। কিন্তু সার্থকভাবে কবির বোধের অনুবাদ করতে হয় আবৃত্তিকারকে। এভাবে চর্চার দীর্ঘ পরিক্রমায় কবিরা আবৃত্তিশিল্পীদের খুব আপনজন হয়ে ওঠেন। আত্মার আত্মীয় হয়ে ওঠেন। এই আত্মীয়তা সাধারণ পাঠকের আপন হয়ে ওঠার চেয়ে ভিন্ন। কারণ আবৃত্তিকারকে প্রতিনিয়ত কবির অনুভূতির মনোভূমিতে বিচরণ করতে হয়।

এবার একজন আবৃত্তিশিল্পী ও কবির মেলবন্ধন, প্রায় ৩৫ বছরের সান্নিধ্যধন্য ও যোগাযোগবিহীন সম্পর্কের উপন্যাসকে ছোট গল্পের মত বর্ণনা করতে চাই। কবির নাম দেশবরেণ্য খ্যাতিমান কবি ও বাচিকশিল্পী আসাদ চৌধুরী। আর আবৃত্তি শিল্পীর নাম এই মফম্বল শহর (ঢাকার নাগরিকদের ভাষায়) চট্টগ্রামের মোসতাক খন্দকার। অর্থাৎ নাথাকা কবির শোকগ্রস্ত লেখক এই আমি। আগেই বলেছি কবি ও আবৃত্তিকারের বোধগত সম্পর্কটা অবিচ্ছেদ্য। তদুপরি কবি যদি কবিখ্যাতির পাশাপাশি বাচিক শিল্পী হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন তাহলে তিনি আবৃত্তি শিল্পীদের কাছেও দারুণভাবে সমাদৃত হন। আর নিজের কথা যদি বলি তাহলে বলবো একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক কবি ও আবৃত্তি শিল্পী হিসেবে আসাদ চৌধুরী আমার কাছে ভীষণ ভাল লাগা একজন। ততদিনে আসাদ চৌধুরীর কাব্যগ্রন্থ তবক দেওয়া পান, বিত্ত নাই বেসাত নাই, প্রশ্ন নেই উত্তরে পাহাড়, জলের মধ্যে লেখাজোখা, যে পারে পারুক, মধ্যমাঠ থেকে, মেঘের জুলুম, পাখির জুলুম , দুঃখিরা গল্প করে, নদীও বিবস্ত্র হয় প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ আমার পড়া হয়ে গেছে। এমনকি তখন আসাদ চৌধুরীর ‘আমার বাবা’, ‘সত্য ফেরারী’, ‘ফেলে রাখতে নেই’, ‘প্রশ্ন নেই, উত্তরে পাহাড়’, ‘স্বপ্নটা তো ভালোই ছিল’, ‘বারবারা বিডলারকে’, ‘মানুষেরা নষ্ট হয়ে গেলে’, ‘আপনি সর্বাধিনায়ক’, ‘তখন সত্যি মানুষ ছিলাম’, ‘বলার জন্যই বলা’, ‘আমি কথা বললেই তো’ এমন নানা শিরোনামের এবং বিষয়বৈচিত্র্যে সুপাঠ্য কবিতাগুলো চট্টগ্রামের নানা মঞ্চে আমি আবৃত্তি করে চলেছি। এমনকি কবি আসাদ চৌধুরীর গদ্যও আমাকে টানতো। বিশেষ করে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় তাঁর লেখা আবৃত্তি বিষয়ক প্রবন্ধ এবং বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন ও সাহিত্য পাতায় প্রকাশিত উপেক্ষিত লেখকদের নিয়ে তাঁর লেখা পড়ে উপকৃত হয়েছি। তাঁর গদ্যে মুগ্ধ হয়ে নব্বই দশকের শুরুতে আমার গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় মঞ্চায়িত ‘একদিন ভোর হবে’ শিরোনামের বৃন্দ আবৃত্তির স্ক্রিপ্ট শুরু করেছিলাম তাঁর গদ্য দিয়ে “বাংলাদেশ, কারো কাছে রূপসী বাংলাদেশ, কারো কাছে সোনার বাংলা, কারো কাছে সকল দেশের রাণী, শিয়রে গিরিরাজ আর চরণ ধুয়ে যায় বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশি। বড়ই সহজ সরল এদেশের মানুষগুলো, নদীর উজানভাটিতে তাদের গলায় কত না গান, নিধুয়া পাথারে তাদের কন্ঠে কতনা সুরের ইন্দ্রজাল। এত সুন্দর দেশ বলেই হানাদাররা এসেছে, হার্মাদরা এসেছে, বর্গীরা এসেছে বার বার। বিদেশীরা এসেছে ঝাঁকে ঝাঁকে সোনার ধান খুঁটে খুঁটে খাওয়ার লোভে। যেমন এখনো পাখি আসে তেমনি।”এই অংশটি কবি আসাদ চৌধুরীর ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ নামে গ্রন্থ থেকে নিয়েছিলাম। একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে তাঁর লেখা বীরের এই রক্তস্রোত, মাতার এই অশ্রুধারানামে বইটিও ইতিহাসের একটি আকরগ্রন্থ হিসাবে মূল্যায়িত হবে।

এবার আমার এই প্রিয় কবি ও বাচিক শিল্পীর সান্নিধ্যধন্য হবার কথা বলা যাক। ১৯৮২ সালের ১১ নভেম্বর আবৃত্তি সংসদ, চট্টগ্রাম এর আয়োজনে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে এসেছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী। সেই প্রথম তাঁকে কাছ থেকে দেখা। সত্য ফেরারী, বারবারা বিডলারকে, প্রশ্ন নেই, উত্তরে পাহাড়, এবং আরো কিছু কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন। অনেক সুন্দর সুন্দর কথাও বলেছিলেন। তখনকার তুমুল যৌবনের একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে বাসায় ফিরে এসেছিলাম। এরপর আবৃত্তি সংসদ, চট্টগ্রামের নাট্যদল অরিন্দম নানা আয়োজনে কবি আসাদ চৌধুরীকে অতিথি হিসেবে আনতেন। আমিও খবর পেয়ে খাঁটি দর্শকশ্রোতা হিসেবে ছুটে যেতাম ওইসব অনুষ্ঠানে। নব্বই দশকের প্রথম দিকে কাদের যেন একটা অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম এসেছিলেন। খুব সম্ভবত বাংলাউর্দু সোসাইটির একটা অনুষ্ঠানে। বাংলাদেশে বসবাসরত নওশাদ নূরীর মত স্বনামধন্য উর্দু কবিদের নিয়ে এই সোসাইটি গড়ে তোলা হয়েছিল। উর্দু কবিতার প্রতি কবি আসাদ চৌধুরীর দারুণ অনুরাগ ছিল। মাহমুদ দারবিশ সহ অনেক ফিলিস্তিনী কবির এবং অনেক নামকরা কবির কবিতার সার্থক অনুবাদ করেছেন তিনি।

যাহোক, কবি আসাদ চৌধুরীর চট্টগ্রামে ওই আগমন প্রসঙ্গে আসি। হঠাৎ করেই যেন অলৌকিকভাবে তাঁর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ এসে গেল। আমার অনেক শ্রদ্ধার মানুষ লেখক ও সাংবাদিক চৌধুরী গোলাম রব্বানী ভাই আমার সামনে কোত্থেকে যেন উদয় হলেন। বললেন, “চলেন আপনাকে আসাদ ভাইয়ের কাছে নিয়ে যাই।” আমি এক ঘোরলাগা বিস্ময়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে ছিলাম কী বলবো বুঝতে পারছিলাম না। একটুও না ভেবেই রাজি হয়ে গেলাম। রব্বানী ভাই আমাকে নিয়ে গেলেন হোটেল আল ফয়সলে । ওখানে রুমে ঢুকতেই দেখলাম আসাদ চৌধুরী পানের একটা কৌটো সামনে নিয়ে পান খাচ্ছেন। রব্বানী ভাই একটু উচ্চস্বরে সালাম দিতেই তিনি আরো উচ্চস্বরে– ‘আরে আরে রব্বানী, আসুন আসুন’ বলে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন। রব্বানী ভাই বসার আগেই আমার নামের পাশে আন্তরিকভাবে কিছু বিশেষণ যোগ করলেন। কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হতেই একটা বিষয় খুব ভাল করে উপলব্ধি করলাম। তাহলো চৌধুরী গোলাম রব্বানী ভাইয়ের প্রতি কবি আসাদ চৌধুরীর নিখাদ ভালবাসা। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে আমি এন্ট্রি নিয়েছি আর আসাদ চৌধুরীর অনেক কবিতার শিরোনাম উল্লেখ করে কথা বলেছি। কিছু কিছু কবিতার পঙক্তি আওড়েও গেছি। হঠাৎ একটা কবিতা একটু পড়তেই থমকে গিয়ে আমাকে বললেন– “এই কবিতা কোথায় পেলেন,এই কবিতা তো কেউ পছন্দের তালিকায় রাখেনা” আবার রব্বানী ভাই আলোচনায় এন্ট্রি নিলেন। বললেন “মোসতাক সাহেব ও তার সংগঠন আপনাকে একটা অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে পেয়ে ধন্য হতে চায়।” তথাকথিত কবিশিল্পীদের মত ভাব দেখালেন না, বললেন – “আমাকে ডায়েরিটা দেখতে হবে। কখন ফ্রি আছি ” বলেই তিনি হাতের কাছে ডায়েরি টেনে নিলেন এবং একটা সম্ভাব্য তারিখ নোট করে নিলেন। তাঁর এই ডায়েরি দেখার ব্যাপারটা এবং ডায়েরি দেখে শিডিউল দেয়াটা ভনিতা নয়। ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত তাঁর এই ডায়েরি মেইনটেন করাটা আমি নিজ চোখে দেখেছি। কারণ সাহিত্য ও শিল্পকে প্রমোট করার জন্য, নবীনদের পৃষ্ঠপোষকতা ও উৎসাহ দেয়ার জন্য বাংলাদেশের আনাচেকানাচে, দূরদূরান্তে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে তিনি ছুটে গেছেন। তাছাড়া বিটিভি ও অন্যান্য টিভি চ্যানেলের জন্য তিনি ছিলেন একজন অনিবার্য সঞ্চালক। মিডিয়াতে তাঁর কবিতাপাঠ ও আবৃত্তি পরিবেশনাও ছিল নিয়মিত। তাই তাঁর ডায়েরির অধিকাংশ পৃষ্ঠা জুড়ে রেকর্ডিংএর তারিখও লেখা থাকতো। তিনি অনেক জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক ছিলেন। আসাদ চৌধুরীর গ্রন্থনা, নির্দেশনা ও উপস্থাপনায় ‘প্রচ্ছদ’ নামে একটা অনুষ্ঠান হতো। আমি কখনও মিস করতাম না এই অনুষ্ঠান। আমার মনে আছে রাত জেগে প্রচ্ছদ শেষ পর্বটা দেখেছিলাম। কবি আসাদ চৌধুরী খুব মর্মস্পর্শী কিছু কথা বলে অনুষ্ঠান শেষ করেছিলেন। কথাগুলো বলে একটা গান দিয়ে ‘প্রচ্ছদ’ অনুষ্ঠান শেষ করেছিলেন। গানটা ছিল– ‘রাতের কবিতা শেষ করে দাও, এবার ঘুমাও কবি’। আমি খুব কেঁদেছিলাম, ওই কান্না ছিল আসাদ চৌধুরীর জন্য।

আবার ফিরে আসি কবি ও বাচিক শিল্পী আসাদ চৌধুরীর সাথে ঘনিষ্ট হবার প্রসঙ্গে। শ্রদ্ধেয় চৌধুরী গোলাম রব্বানী ভাই সেই যে আন্তরিকভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সেই থেকে কবি আসাদ চৌধুরী আমাকে আর কখনো নিরাশ করেন নি। “এরপর ক্বণন শুদ্ধতম আবৃত্তি অঙ্গনের অনেক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তিনি। সত্তোর্ধ এই মানুষটি অসুস্থতা নিয়ে এসেছিলেন আমার অনুষ্ঠানে। ২০১২ সালে ঢাকা থেকে ব্রাক্ষণবাড়িয়া যান, সেখানে থেকে কোলকাতায় যান। কোলকাতা থেকে তাঁর বাসায় না ফিরে সরাসরি আমার অনুষ্ঠানে এসে হাজির হন। সেই আনন্দের কথা, সেই ঋণের কথা, সেই কথা রাখার অতুলনীয় কবির কথা আমি কোনদিন ভুলবনা।

তাঁর সাথে ৩৫ বছরের পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতার বহুবর্ণিল অগণিত ছবি চোখের সামনে বারবার দৃশ্যায়িত হচ্ছে। ১৬ মাস আগে তাকে শেষবারের মত খুব আপন করে খুব কাছে পেয়েছিলাম। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ১ এপ্রিল ক্বণন’র ৩ যুগ পূর্তির অনুষ্ঠানই ছিল চট্টগ্রামে আতিথ্য ও অংশগ্রহণে আসাদ চৌধুরীর শেষ অনুষ্ঠান। চট্টগ্রামে ৩ দিন ছিলেন। দুটো অনুষ্ঠান করা, বেড়ানো, চট্টগ্রাম টিভিতে কবিতা পাঠ রেকর্ডিং করা ইত্যাদি মিলিয়ে একটা দারুণ তৃপ্তি নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, তারপর কানাডায় চলে গিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম থেকে বিদায় দিতে গিয়ে তাঁকে সজোরে জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম– “আসাদ ভাই আর কি দেখা হবে?’” আমার এ কথায় তিনিও একটু আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলেন। এ বছরের প্রথম দিকে তিনি কানাডা থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। ঢাকায় এসে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। একদিন আমাকে কল করলেন। শরীরটা একেবারেই ভাল নয় বলে জানালেন। অতীতের সব আতিথেয়তা, ভালবাসা, সম্মান পাওয়ার জন্য এক ধরণের ফরমাল কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। যেন আমার সাথে শেষ কথা বলে বিদায় নিলেন। আবার কানাডা চলে গেলেন। কানাডায় যাবার পর স্বাস্থ্যের অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অনেকদিন তাঁকে ভুগতে হয়। কিছুটা সুস্থ হলে বাসায় আনা হয়। আমি, আমরা খুব উদ্বিগ্ন ছিলাম।

আত্মপ্রচারণার মত শোনালেও এ প্রসঙ্গে একটা শোনা কথা বলতে চাই। বাতিঘরের স্বত্বাধিকারী দীপঙ্কর কানাডা গিয়েছিল। তাঁর মাধ্যমে অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে আসাদ ভাইয়ের কুশল জানতে চেয়েছিলাম। দীপঙ্কর আমাকে জানালো কবি আসাদ চৌধুরীকে আমার কথা জানাতেই আসাদ ভাই নাকি বেশ কিছুক্ষণ আমার নাম ধরে প্রশংসা করেছিলেন। আরো বললো, আসাদ ভাই আপনাকে খুব পছন্দ করেন।

২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর, সুবোধ দা মানে বাংলা ভাষার জনপ্রিয় কবি সুবোধ সরকার কোলকাতা থেকে চট্টগ্রাম এসেছিলেন। তাঁর সাথে কবি আসাদ চৌধুরীকে নিয়ে কথা হচ্ছিল। ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ শুক্রবার কবি আসাদ চৌধুরী ও সুবোধ সরকার আমার আবৃত্তি সংগঠন ক্বণন’র ৩৩ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। সুবোধ দা আমাকে জানালেন, “কবি আসাদ চৌধুরী কোলকাতা থেকে আপনার অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। হলদিয়ার একটা সাহিত্য উৎসব থেকে ঢাকায় আসেন, তারপর আপনার অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য চট্টগ্রাম আসেন। ৭৬ বছরের একটা মানুষ আপনাকে কতটা ভালবাসলে এত দীর্ঘ ভ্রমণের ধকল সহ্য করেন।” সুবোধ দা’র কথাগুলো শুনতে শুনতে কখন যে চোখ ভিজে গেছে বুঝতে পারি নি।

হ্যাঁ, আসাদ ভাই সত্যিই খুব স্নেহ করতেন। তাই তিনি প্রগতির লেবাসধারী প্রতিক্রিয়াশীল এবং ভন্ড সাহিত্য ও সংস্কৃতিজীবীদের কানকথা ও কুমন্ত্রণা গ্রাহ্য না করে বারবার আমার অনুষ্ঠানে এসেছেন। আসাদ চৌধুরী একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক কবি ছিলেন। কোদালকে কোদাল বলার মত একজন সাহসী মানবতাবাদী লেখক ও সুবক্তা ছিলেন।

আসাদ ভাই আপনার মৃত্যুর এক বছর পূর্তিতে বড্ড একা ও অসহায় লাগছে। প্রার্থনা করছি মহান আল্লাহ যেন আপনার সব ভালত্বের উত্তম প্রতিদান দেন।

লেখক: আবৃত্তি শিল্পের শিক্ষক ও সংগঠক

পূর্ববর্তী নিবন্ধজীবনবোধসম্পন্ন লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী
পরবর্তী নিবন্ধপার্কি সমুদ্র সৈকতে বিচ ক্লিন আপ ক্যাম্পেইন