আশালতা সেন বিশিষ্ট সমাজসেবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামী। তৎকালীন পূর্ববাংলার নারীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে তিনি অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। আশালতা সেনের জন্ম ১৮৯৪-এর ৫ই ফেব্রুয়ারি নোয়াখালিতে। অনুকূল পারিবারিক পরিবেশ ও সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাঁকে কাব্যপ্রেমী করে তোলে, করে তোলে স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ। আশালতার বয়স যখন মাত্র দশ তখন তাঁর লেখা জাতীয়তামূলক একটি কবিতা ছাপা হয় মাসিক ‘অন্তপুর’ পত্রিকায়। নানারকম বইপত্র পড়ে আর গান্ধীজীর স্বদেশী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে আশালতা নিজেও তাতে অংশ নেন। তাঁর বিভিন্ন রচনাকর্মের মধ্যে রয়েছে বাল্মীকির মূল রামায়ণ থেকে ‘যুদ্ধকাণ্ড’ অংশটি বাংলা কবিতার মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত আকারে অনুবাদ, ‘জনৈকা গৃহবধূর ডায়েরী’, ‘বিদ্যুৎ’, ‘আত্মজীবনী’ এবং ‘ছড়া’। এছাড়া আজীবন তিনি যুক্ত ছিলেন সমাজসেবামূলক কাজে। শিল্পাশ্রম, গেণ্ডারিয়া মহিলা সমিতি, কল্যাণ কুটির আশ্রম, জুড়ান শিক্ষা মন্দির, সত্যাগ্রহী সেবাদল, নশঙ্কর মহিলা সমিতি, কংগ্রেস মহিলা সংঘ, নারীকর্মী শিক্ষাকেন্দ্র প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে আশালতা সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে নারীর অবস্থান সুদৃঢ় করতে সচেষ্ট ছিলেন। বিভিন্নধর্মী এইসব সংগঠনের কর্মীরা নানা পন্থায় নিজেদের নিবেদন করেছিলেন সমাজসেবামূলক কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে। এঁরা কখনো গ্রামে গ্রামে নিজ হাতে খদ্দরের কাপড় বিক্রি করেছেন, কখনো গ্রামের পর গ্রাম শত শত সমবেত জনতার মধ্যে বক্তৃতা দিয়েছেন। এর ফলে তাঁদেরকে ব্রিটিশ সরকারের রোষাণলে পড়তে হয়েছে। ‘ভারত-ছাড়ো’ আন্দোলনে যোগ দিয়ে আশালতা সেন কয়েক মাস কারাভোগও করেন। সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি রক্ষায় হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের জন্যেও কাজ করেছেন তিনি। ১৯৭২ সালে আশালতা সেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসেছিলেন। ১৯৮৬ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি বিপ্লবী এই নারী প্রয়াত হন।